বামপন্থীদের আন্দোলনে অচল ফ্রান্স, সংসদ ভেঙে দেওয়ার দাবি বিরোধীদের। জি-২০ মিটিং ছেড়ে তড়িঘড়ি দেশে ফিরলেন মাঁকর

আর্জেন্টিনায় জি ২০ সম্মেলনের মঞ্চে ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল মাঁকর ও সৌদি রাজা মহম্মদ বিন সলমনের মধ্যে একটি কথোপথন দু’দিন আগেই সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল। সেখানে ফরাসি রাষ্ট্রপতি নাকি সৌদির রাজাকে বলেছেন, আমি আপনাকে নিয়ে চিন্তিত। আপনি আমার কোনও কথা শোনেন না। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। মনে করা হচ্ছে তুর্কির এক সাংবাদিককে সম্প্রতি খুন করার যে অভিযোগ উঠেছে সৌদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে, তা নিয়েই দু’জনে কথা বলছিলেন।
তবে একদিন যেতে না যেতেই, চিন্তা বা উদ্বেগের বিষয়টি ঘুরে যে তাঁর নিজের ওপরই এসে পড়বে তা হয়তো ভাবতে পারেনি মাঁকর। বিগত কয়েক দশকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় নাগরিক বিক্ষোভের মুখে ফ্রান্স। দেশের একাধিক প্রান্তে ছড়িয়েছে হিংসা, তৈরি হচ্ছে দাঙ্গার পরিস্থিতি। অবস্থা এতটাই জটিল যে, জি ২০ সম্মেলন কাটছাঁট করে আর্জেন্টিনা থেকে তড়িঘড়ি দেশে ফিরতে হয়েছে ইমানুয়েল মাঁকরকে। রবিবারই দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধী ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন ফরাসি রাষ্ট্রপতি। অবস্থা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ফরাসি সরকার এখন চাইছে যেন-তেন প্রকারে বিরোধীদের আলোচনার টেবিলে বসিয়ে একটা সমাধান সূত্র বার করতে। সূত্রের খবর, সোমবার বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারেন প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড ফিলিপি। শনিবার সেন্ট্রাল প্যারিসের যে জায়গায় তাণ্ডব চালায় বিক্ষোভকারীরা, পুড়িয়ে দেওয়া হয় প্রায় ১১২ টি গাড়ি, ভাঙচুর করা হয় একাধিক বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট এবং বহুতল, সেখানে পরিদর্শনে যেতে পারেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
বিরোধীদের দাবি, সরকারের জেদের জন্যই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। লাগামছাড়া হয়েছে মূল্যবৃদ্ধি, পেট্রোপণ্যের উপর চড়া হারে বসানো হয়েছে কর। পরিস্থিতি এমন যে, জ্বালানি এবং বিদ্যুতের খরচ মেটাতেই আয়ের অধিকাংশ টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। তাঁদের প্রশ্ন, তা হলে তাঁরা খাবেন কী? থাকবেন, পরবেন বা বাঁচবেন কীভাবে, যদি সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ১৯৬৮ সালে এরকম নাগরিক বিক্ষোভ দেখেছিল ফ্রান্স। যার হাত ধরে সমাজে এসেছিল অনেক পরিবর্তন। তাই এবারও সেই রাস্তাতেই হাঁটার প্রয়োজন এসে পড়েছে। ‘ইয়েলো ভেস্ট’ নামে এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়েছে প্রায় গোটা দেশে। বিক্ষোভের তীব্রতা ও মাত্রা এতটাই বাড়ছে যে ভয় পাচ্ছে সরকার। এমনকী, দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে ফরাসি সরকার। কিন্তু তাতেও পিছু হঠছেন না বিরোধীরা।
প্রথমে মূলত দেশের বামপন্থী দলগুলির ডাকেই ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন শুরু হলেও, বর্তমানে তাতে যোগ দিয়েছে সরকার বিরোধী কয়েকটি ডানপন্থী দলও। যোগ দিচ্ছেন বহু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে পুণরায় নির্বাচনের। ইমানুয়েল মাঁকর বিত্তশালীদের রাষ্ট্রপতি বলেও কটাক্ষ করেছেন তাঁরা।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সরকারের ক্ষমতা প্রদর্শণ ও সাধারণ মানুষের দাবিকে অবজ্ঞারই মাসুল দিতে হতে পারে মাঁকর প্রশাসনকে। অনেকের কথায়, সপ্তাহ দুয়েক আগে বিক্ষোভ যখন দানা বাঁধছিল, তখন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি সরকার। উচিত ছিল তখনই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ঠিকমতো আলোচনায় বসার। কিন্তু তা না করে, সরকার নামে দমন-পীড়নের রাস্তায়। চলে কাঁদানে গ্যাস, মক ফায়ার। জানা গেছে, গত কয়েক দিনে পুলিশ প্রায় ৫০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে ৩৫০ জনেরও বেশি এখনও জেলে বন্দি। অভিযোগ, পুলিশের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২৫০ বিক্ষোভকারী, তার মধ্যে ১৩০ জনই প্যারিসের।

Comments are closed.