মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে দলে ফেরা থেকে পূর্ণ মন্ত্রী! কেমন ছিল বিপ্লব মিত্রের যাত্রাপথ?

২১ জুলাই তৃণমূল নেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে ফিরেছিলেন। সেই বিপ্লব মিত্র আজ রাজ্যের মন্ত্রী। বস্তুত এই প্রথম মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেন হরিরামপুরের বিধায়ক বিপ্লব মিত্র। মমতা ব্যানার্জির তৃতীয় মন্ত্রীসভায় বিপ্লব পেয়েছেন কৃষি বিপণন দফতরের পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রীর দায়িত্ব।

সোমবার গঙ্গারামপুরের মিত্র বাড়ির মেজো ছেলের শপথগ্রহণ ঘিরে পরিবারে ছিল উচ্ছ্বাস। একান্নবর্তী পরিবারের ছেলে বিপ্লব বাবু। এই মুহূর্তে নয়া মন্ত্রী মশাইয়ের সঙ্গেই দুই ভাই রয়েছেন কলকাতায়। বাকি ভাই বোনেরা সকলেই গঙ্গারামপুরে। বাবা মায়ের অবর্তমানে অভিভাবক বড়দি বনানী মিত্র। তাঁর হাতের পোলাও মিত্র বাড়ির হট ফেভারিট।

সোমবার শপথ গ্রহণের দিন বনানী মিত্র জানান ভাই বিপ্লব ভালোবাসেন তাঁর হাতের পোলাও। তাই তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন, কবে ভাই আসবেন, আর তিনি ভাইয়ের মুখে তুলে দেবেন নিজের হাতে রান্না করা পোলাও, মাংস।

মাছ, মাংস খেতে ভালোবাসলেও বর্তমানে বিপ্লব মিত্র সেসব খেতে পারেন না। কিন্তু প্রথম মন্ত্রী বলে কথা! দিদির হাতে তৈরি পোলাও-মাংস নিয়ে অপেক্ষা করছে গঙ্গারামপুর।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, খাওয়া ছাড়া রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রীর আরেক শখ বই পড়া। বিপ্লব মিত্রকে অনেকেই ভালবেসে বইপোকা বলে ডাকেন। নতুন মন্ত্রীর অবসর সময় কাটে সন্ধ্যা মুখার্জি, জর্জ বিশ্বাসের গান শুনে। ছোট থেকে পড়াশোনা আর নিজের মধ্যেই থাকতে ভালোবাসতেন।

ছোট থেকেই কঠোর শাসনের মধ্যে বড় হয়েছেন। বাবা স্বর্ণকমল মিত্র ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। দেশভাগের পর গঙ্গারামপুরে এসে কংগ্রেস সমর্থক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন বাবা স্বর্ণকমল মিত্র। তিনি ছিলেন ভালো মুষ্টিযোদ্ধা। ছোট থেকে বাবাকে দেখে বড় হওয়া বিপ্লব মিত্র পরবর্তীকালে নিজের মধ্যে তৈরী করে নেন সেই অভ্যাস।

রায়গঞ্জ কলেজে পড়ার সময় থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করতে গিয়ে পরিচিতি পান। অবিভক্ত পশ্চিম দিনাজপুরে ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সভাপতি ছিলেন। পরে জেলা কংগ্রেসের সভাপতি।

১৯৯৮ সাল থেকে মমতার সঙ্গে। তৃণমূলের প্রথম সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মিত্র। ১৯৯৯ সালে রায়গঞ্জ লোকসভা আসনে তৃণমূলের টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। ২০০১ সালে তৃণমুলের টিকিটে জয়। তবে সেবার মন্ত্রী করা হয়নি তাঁকে। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগেই তৃণমূল জেলা সভাপতির পদ হারান। পর যদিও সেই পদ ফিরে পান তিনি। কিন্তু ১৯ এর ভোটের আগে জেলা সভাপতির পদ থেকে বিপ্লব মিত্রকে সরিয়ে দেওয়া হয়। অভিমানে বিজেপিতে যোগ দেন।

গত ২১ জুলাই শহিদ দিবসে মমতা ব্যানার্জি দলের উপর ক্ষুব্ধ, অসন্তুষ্টদের ফিরে আসার আহবান জানিয়েছিলেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে প্রথম বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরেন বিপ্লব মিত্র।

রাজনৈতিক মহল বলছে, সেই থেকে শুরু বিপ্লবের যুদ্ধ। লড়াই ছিল লোকসভায় বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকা বিজেপির বিরুদ্ধে। ২ মে ফল বেরোলে দেখা গেল, সেই লড়াইয়ে সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছেন বিপ্লব মিত্র। বিপ্লব মিত্রকে কৃষি বিপণন মন্ত্রী করে সেই লড়াইয়ের পুরস্কার দিলেন নেত্রী, মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

Comments are closed.