মোদীর নেতৃত্বে গঙ্গা কাউন্সিলের একটি বৈঠকও হল না ৫ বছরে, thewire.in এর করা আরটিআই থেকে মিলল তথ্য

সম্প্রতি সর্বভারতীয় নিউজ পোর্টাল thewire.in এর করা আরটিআইয়ের প্রেক্ষিতে প্রকাশ্যে এল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। আজ পর্যন্ত গঙ্গা সাফাইয়ের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তৈরি ‘রাষ্ট্রীয় গঙ্গা পরিষদ’এর একটিও বৈঠক হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী, বছরে অন্তত একবার বৈঠকে বসতেই হয়।
২০১৬ সালের অক্টোবরে গঙ্গার রক্ষণাবেক্ষণ, সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয় গঙ্গা পরিষদ (ন্যাশনাল গঙ্গা কাউন্সিল বা এনজিসি) গঠন করা হয়। একই বছরের ৭ ই অক্টোবর কেন্দ্রীয় জল সংরক্ষণ, নদী বিকাশ এবং গঙ্গা সংরক্ষণ মন্ত্রকের তরফে নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়, এনজিসি প্রতি বছর অন্তত একবার কিংবা তার বেশি বৈঠক করবে। কিন্তু আরটিআই-এর মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বলছে, তৈরি হওয়ার পর আজ পর্যন্ত ন্যাশনাল গঙ্গা কাউন্সিল একবারও বৈঠকে বসেনি। অথচ গঙ্গাকে দেখভাল করতে এনজিসি-ই চূড়ান্ত কমিটি। যার সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী মোদী, নিজে গঙ্গা তীরবর্তী বারাণসীর সাংসদ।
গঙ্গায় ক্রমাগত বেড়ে চলা দূষণ নিয়ে, ক্ষমতায় আসার আগে মোদী এবং বিজেপির বক্তব্য ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইস্তাহারে নির্দিষ্ট করে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বিজেপির ম্যানিফেস্টোতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছিল, ‘দূষণ রোধ করে গঙ্গার পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করাই অগ্রাধিকার।’ মেনিফেস্টোতে গঙ্গা নিয়ে প্রতিশ্রুতির পর গঙ্গা-যমুনা দিয়ে বয়ে গিয়েছে গ্যালন গ্যালন বিষাক্ত জল, কিন্তু কাজের কাজ যে কিছুই হয়নি, তা আরটিআই রিপোর্ট থেকেই স্পষ্ট। শুধু গঙ্গাই নয়, সামগ্রিক পরিবেশ সচেতনতা নিয়েও লেখা হয়েছিল ১৪ সালে প্রকাশ করা বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে। কিন্তু ৫ বছর কেটে যাওয়ার পর তা বিশ্লেষণ করতে বসলে হাতে থাকছে কেবলই পেনসিল।
ন্যাশনাল মিশন অন হিমালয়াজ, হিমালয়ান সাসটেনেবিলিটি ফান্ড, হিমালয়ান টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনার জন্য একটি বিশেষ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং হিমালয়ের হিমবাহের গলন রুখতে বিশেষ জোর দেওয়ার কথা নির্দিষ্ট করে ম্যানিফেস্টোতে জানিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু ৫ বছরের কার্যকাল শেষ হওয়ার প্রাক্কালে দেখা যাচ্ছে, সেসব প্রতিশ্রুতি ইশতেহারেই রয়ে গিয়েছে, বাস্তবে কোনও প্রতিফলন নেই। বরং উল্টো চিত্র আছে।
হিমালয় ও সংলগ্ন অঞ্চলে মোদী সরকারের শুরু করা দুটি প্রকল্প নিয়ে ইদানিং পরিবেশবিদরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সেগুলি হল, চারধাম হাইওয়ে এবং পঞ্চেশ্বর বাঁধ। একটি হাইওয়ের মাধ্যমে কেদার-বদ্রী-গঙ্গোত্রী এবং যমুনোত্রীকে যুক্ত করতে মোদী সরকারের পাইলট প্রজেক্ট চারধাম হাইওয়ে নির্মাণে ইতিমধ্যেই ২৫ হাজারেও বেশি গাছ কাটা পড়েছে। পঞ্চেশ্বর বাঁধ নির্মাণেও প্রচুর গাছ কাটা পড়বে, জীববৈচিত্র ধ্বংস হবে এবং ভূমি ক্ষয় মারাত্মক আকার নেবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। পাশাপাশি সবচেয়ে আশঙ্কার, প্রচুর মানুষকে উচ্ছেদ হতে হবে। এর কুপ্রভাব সরাসরি পরিবেশের উপর পড়বে বলে দাবি পরিবেশবিদদের।

Comments are closed.