জিডিপি আরও তলানিতে, ফের একদফা সুদ কমাবে আরবিআই, নাকি অন্য পদক্ষেপ, প্রশ্ন সেটাই

মার্চে অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার পর এপ্রিল থেকে শুরু নতুন আর্থিক বছর। প্রথম মোদী জমানার শেষ অর্থবর্ষের শেষ ত্রৈমাসিকে দেশের জিডিপি গোত্তা খেয়ে হয়েছিল ৫.৮। কিন্তু তাকে সাময়িক ঝটকা হিসেবে দাবি করেছিল মোদী সরকার। দ্বিতীয় মোদী সরকারের শুরুর অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছিল ৫। আর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে পতনের ধারা অব্যাহত রেখে তা থামল ৪.৫ শতাংশে। যা ৬ বছরে সর্বনিম্ন। বিগত ২৬ ত্রৈমাসিকে এই বৃদ্ধি সবচেয়ে ধীর গতির।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সংসদে দাঁড়িয়ে মন্দার দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন বটে। কিন্তু জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের (এনএসও) সাম্প্রতিক তথ্য অর্থমন্ত্রীর সেই দাবিকেই পুরো নস্যাৎ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে অর্থবর্ষের অর্ধেকের সামান্য বেশি সময়েই ছাপিয়ে গেল রাজকোষ ঘাটতির বাজেট-হিসেব। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে বৃদ্ধির হার ৪.৮ শতাংশ। গত বছর যা ছিল ৭.৫ শতাংশ।
কিন্তু কেন এমন ধারাবাহিক পতন? সমস্যাটা হচ্ছে কোথায়? অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মানুষের পকেটে যে টাকা নেই, সেই সমস্যাটাই বুঝছে না মোদী সরকার। আর তাই অর্থনীতি সামাল দেওয়ার পদক্ষেপ হিসেবে কর্পোরেট করে ছাড় কিংবা নতুন উদ্যোগে করের হার কমানোর মতো অবান্তর পদক্ষেপ করে চলেছে। তাঁদের দাবি, বাজারে চাহিদা নেই। ফলে কারখানার উৎপাদন কমছে। উৎপাদন কমায় নতুন বিনিয়োগ বা লগ্নির পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না। সর্বোপরি গোটা বিশ্বের অর্থনীতিই কম বেশি ঝিমুনিতে আক্রান্ত। ফলে প্রয়োজন মতো সামগ্রী রফতানি কমছে। অন্যদিকে বাড়ছে আমদানির পরিমাণ। তাই মানুষের পকেটে টাকার জোগান দিতে না পারলে সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না, এই তথ্য দিনের আলোর মতো পরিষ্কার বলেই দাবি করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এই প্রেক্ষিতেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, প্রথম মোদী জমানায় প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পদে থাকা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম প্রশ্ন তুলেছিলেন জিডিপি মাপার পদ্ধতি নিয়ে। বলেছিলেন, মাপকাঠির এদিক ওদিক করে ২ থেকে ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে বৃদ্ধির অঙ্ক। সেই হিসেবে এ বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের জিডিপি দাঁড়াচ্ছে ২ কিংবা তার সামান্য বেশি। এই হিসেব তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু জিডিপির এই পতন সরাসরি আঘাত হেনেছে দেশের উৎপাদন ক্ষেত্রে। সেপ্টেম্বরের পর অক্টোবরে আরও সঙ্কুচিত হয়েছে কৃষিক্ষেত্র থেকে শুরু করে কল কারখানার উৎপাদন। ফলে কোর সেক্টরের উৎপাদন সেপ্টেম্বরের চেয়েও খারাপ অবস্থায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী করবেন নির্মলা সীতারমন? তাঁর দফতর কি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপর চাপ বাড়াবে আরও একদফা সুদ কমানোর জন্য? সেটা করে কতটা ক্ষতি সামাল দেওয়া যাবে? নাকি রাজকোষ ঘাটতির পরোয়া না করে প্রকৃত অর্থেই মানুষের পকেটে টাকা ঢোকার পথকে সুগম করার দিকে হাঁটা লাগাবে সবকা সাথ, সবকা বিকাশের দাবি করা মোদী সরকার, এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

Comments are closed.