ঘাটালের দত্তবাড়িতে প্রাচীন ও প্রকাণ্ড নিমগাছের তলায় অধিষ্ঠিত হন দুর্গা! শাক্ত মতে এই পুজো অসুরবিহীন

কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের জেরে রাজ্যজুড়েই মণ্ডপে প্রবেশ করতে পারবেন না দর্শনার্থীরা। যার ফলে একদিকে যেমন ক্ষুব্ধ পুজো কমিটিগুলো তেমনই হতাশ। হাইকোর্টের রায়ের কোনও প্রভাব অবশ্য নেই বাড়ির পুজোয়। বিশেষ করে করোনার সমস্ত সুরক্ষাবিধি মেনেই পুজো হচ্ছে বনেদি বাড়িগুলিতে।

এমনই এক বনেদি বাড়ির পুজো পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের দত্তবাড়ি। প্রায় দুশো বছর আগে বাড়ির পূর্বপুরুষ স্বরূপ দত্তের হাত ধরে এই পুজোর প্রচলন হয়েছিল। প্রচলিত আছে, দেবী মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন তৎকালীন প্রতিমা শিল্পী ও বাড়ির কর্তা দুজনেই। তখন অবশ্য এই পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভালো না থাকার কারণে পরবর্তী সময়ে এই পুজোর সব ভার গোষ্ঠ বিহারী দত্তের কাঁধে অর্পণ করা হয় বলে পরিবার সূএে জানা যায়। তারপর থেকেই বংশপরম্পরায় চলে আসছে এই পুজো।

জমিদার পরিবার না হয়েও, দত্তবাড়িতে বেশ কিছু রাজসিক চালচলন ছিল বলেই জানালেন এই পরিবারের অন্যতম সদস্যা আগমনী দত্ত। বাইজি বাড়ি ও খামার বাড়ির উল্লেখ পাওয়া যায় পরিবারের ইতিহাসে। তবে সে সব এখন অতীত, জমিদারি চালচলন আজ ইতিহাসের ধূসর পাতায়।

ঘাটাল পুরসভার হাটপাড়ায় ৫ নং ওয়ার্ডে প্রতিবছর নিয়মরীতি মেনে অনুষ্ঠিত হয় দত্তবাড়ির দুর্গা পুজা। এই পরিবারের ছোট তরফের সদস্য বিমান দত্ত জানান, এবছর পুজোর সব দায়িত্ব বড়ো তরফের। প্রতি দু’বছর অন্তর বড় তরফ স্বপন দত্তের পুজোর পালা পরে।

এখানে দেবী দুর্গা বাড়ির মেয়ে হিসেবে পুজিত হন। সেই থেকেই শাক্ত মতে  পুজো হয়ে আসছে, তবে মা বৈষ্ণবী। কারণ দুর্গা এখানে নিরামিষভোজী। এখানের মা অভয়া দুর্গা নামে পরিচিত। কিন্তু জানেন কেন?

পরিবারের পুএবধূ জানালেন, মা অসুরকে বিনাশ করে এসে ছেলে মেয়ে এবং স্বামীকে নিয়ে সিংহের উপর এসে বসেন, তাই মা’র মূর্তি শান্ত ও দ্বিভুজা। এমনকী অসুরবিহীন। পঞ্চমী ও ষষ্ঠীতে দেবীবরণের পর পুজো শুরু হয় সপ্তমীর দিন থেকে। সাথে  প্রকাণ্ড নিমগাছটিকেও পুজো করা হয়। পঞ্চমীর দিন মাকে কোনওরকম গহনা পরানো হয় না। এটাই এই পুজোর বৈশিস্ট। অষ্টমীতে ছাঁচিকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী হয় স‌ন্ধিপুজো। পঞ্চমী থেকে দশমী প্রতিদিন মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। এবং চাল উৎসর্গ করা হয়, যা সিধা নামে খ্যাত। অষ্টমীর দিন মাকে বরাবরই ‌গোটা ফল ও মিষ্টি সহযোগে প্রসাদ দেওয়া হয়। এবছরও তার অন্যথায় কিছু হবে না। এ বাড়ির পুজোয় অন্নভোগ হয় না।

রীতি মেনে অষ্টমীর পুজোর বৈশিষ্ট হল নুনবিহীন লুচি, সুজি, কলা, নারকেল ও মিস্টি, বিভিন্ন ভাজাভুজি, বেগুনভাজা, আলুভাজা, কাঁচকলা ভাজা, ইত্যাদি প্রদান করা । প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে পালা করে পুরোহিত ও ঢাকিদের খাওয়ানোর নিয়ম আজও অব্যাহত। জোগাড়ে থাকে দু’জন ব্যক্তি। প্রতিমার উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট এবং তা  ঠাকুরদালানেই তৈরি হয়। বাইরের দিকে মণ্ডপ বিশেষ খোলা রেখেই তৈরি হয়। তবে এবছর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে প্রসাদ বিতরণ। বাইরের প্যান্ডেল থেকে কেবল দত্তবাড়ির সদস্যরাই প্রবেশে ছাড় পাবেন, দিতে পারবেন অঞ্জলি।

এবছর করোনা আবহে এই ব‌নেদি বাড়ির পুজোর জাঁকজমকে কিছুটা ভাটা পড়েছে। এর মাঝেই যাবতীয় নিয়ম মেনে শারদোৎসবের জন্য প্রস্তুত ঘাটালের দত্তবাড়ির পুজো।

 

Comments are closed.