পদ্মশ্রী প্রত্যাখান নবীন পট্টনায়েকের দিদি সাহিত্যিক গীতা মেহতার। বললেন, নির্বাচনের আগে ভুল বার্তা যাবে

ভারত সরকারের দেওয়া পদ্মশ্রী খেতাব ফিরিয়ে দিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের দিদি এবং সাহিত্যিক গীতা মেহতা। শুক্রবার পদ্মশ্রী খেতাবে গীতা দেবীকে সম্মানিত করার কথা ঘোষণা করে ভারত সরকার। ওই দিনই গীতা মেহেতা জানিয়ে দেন, তিনি এই সম্মান গ্রহণ করতে পারছেন না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী গীতা মেহতা নিউইয়র্ক থেকে এক বিবৃতিতে জানান, সরকার যে তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারের যোগ্য মনে করেছে, এর জন্য তিনি সম্মানিত। তবে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই পুরস্কার প্রদানের বিষয়টি ‘ভুল অর্থ বহন করতে পারে’, যা তাঁকে বিব্রত করছে। তাই তিনি এই সম্মান প্রত্যাখ্যান করলেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের দোরগোড়ায় ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর দিদিকে পদ্মশ্রী খেতাব দেওয়া আসলে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল।
প্রসঙ্গত, বেশ কয়েক মাস আগেই গীতা মেহতা ও তাঁর স্বামী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বই প্রকাশক সোনি মেহতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রায় দেড় ঘন্টার বেশি সময় ধরে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। বারাক ওবামা, টনি ব্লেয়ার ছাড়াও ছ’জন নোবেল পুরস্কার বিজেতার লেখা প্রকাশিত হয়েছে গীতা মেহতা ও তাঁর স্বামীর প্রকাশনা সংস্থা ‘আলফ্রেড এ নফ’ থেকে।
ভারতীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাস এবং তার ওপর পাশ্চাত্যের ধারণা, রাজনৈতিক প্রসঙ্গে একাধিক ফিকশন ও নন ফিকশন লিখেছেন গীতা মেহতা। তাঁর ‘কর্ম কোলা’, ‘রাজ’, ‘আ রিভার সূত্র’, ‘স্নেকস অ্যান্ড ল্যাডার্স’, ‘ইটারনাল গনেশা’ ইত্যাদি বই পাঠক মহলে বিশেষ সমাদৃত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর লেখা বই প্রায় একুশটি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। এছাড়াও, ১৪ টি ডকুমেন্টরি সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবেও নাম রয়েছে গীতা মেহতার।
রিপোর্ট অনুযায়ী, এবছর ৪ জনকে পদ্মভূষণ, ১৪ জনকে পদ্মবিভূষণ এবং ৯৪ জনকে পদ্মশ্রী খেতাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। শিল্প ও সাহিত্য ক্ষেত্রে গীতা মেহতার অবদানের জন্য তাঁকে ‘ফরেনার’ বিভাগে পদ্মশ্রী খেতাব দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়।
এর আগে কত্থক শিল্পী সিতারা দেবী ১৯৭৩ সালে পদ্মশ্রী খেতাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, যাঁরা আদৌ এই খেতাবের যোগ্য নন তাঁদেরও এই সম্মান দেওয়া হয়। প্রায় একইরকম অভিযোগ করে সেতার শিল্পী উস্তাদ বিলায়েৎ খান পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ ও পদ্মবিভূষণ প্রত্যাখান করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক কৃষ্ণস্বামী সুব্রমভণম ‘পদ্মভূষণ’ নিতে অস্বীকার করেন। তাঁর মত ছিল, সাংবাদিক ও আমলাদের এই ধরণের খেতাব গ্রহণ করা উচিত নয়। ১৯৭৪ সালে প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক খুশবন্ত সিংহ ‘পদ্মভূষণে’ ভূষিত হন। কিন্তু ১৯৮৪ সালে অমৃতসর স্বর্ণ মন্দিরে ভারতীয় সেনার ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ অভিযানের বিরোধিতায় সেই সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার ১৯৯২ ও ২০০৫ সালে দু’বার পদ্মভূষণ গ্রহণ করেননি। তাঁর কথায়, একমাত্র তাঁর বিষয়ে যে সম্মান দেওয়া হয় তাই গ্রহণ করবেন তিনি।

Comments are closed.