কেন জানানো হচ্ছে না মৃত সেনাদের নাম, পরিচয়, ক্ষোভ চিনে! সময়মতো প্রকাশ করা হবে তালিকা, চাপে পড়ে লিখল কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র
লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত-চিন সংঘর্ষের পর উত্তেজনা কমার নাম নেই। এই অবস্থায় ঘরের মধ্যেই বিক্ষোভের মুখে পড়ল চিন। পরিস্থিতি এমনই যে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদককে কলম ধরতে হল সরকারের নীতি ব্যাখ্যায়।
কদিন আগেই লাদাখের গালওয়ান ভ্যালিতে রক্তক্ষয়ী হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে ভারতীয় সেনা এবং চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। জানা যায়, মৃত্যু হয়েছে ২০ ভারতীয় সেনাকর্মীর। কিন্তু চিনের তরফে হতাহতের সংখ্যা কী? তা নিয়ে চিনের কমিউনিস্ট সরকারের নিস্তব্ধতা ধোঁয়াশা আরও বাড়িয়েছে। বিভিন্ন সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, চিনের তরফে হতাহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন সেনাকর্মী। কিন্তু শি জিনপিংয়ের দেশ এখনও প্রকাশ্যে এ বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। সেদেশের কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, হতাহতের সংখ্যা বললে ক্রমেই বেড়ে চলা দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার পারদ আরও চড়তে পারে। তাই গুডউইল জেস্চার বা শান্তি প্রতিষ্ঠার সদিচ্ছা হিসেবে পিএলএতে মৃত আহতের সংখ্যা প্রকাশ্যে আনেনি চিন।
কিন্তু একথা বললেও ঘরের বিক্ষোভ সামাল দিতে ব্যর্থ চিন। সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যায় গালওয়ানে মৃত পিএলএ সেনাকর্মীদের পরিবার ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন সরকারের প্রতি। ভারতে যেভাবে সম্মানের সঙ্গে মৃত সেনাকর্মীদের শেষকৃত্য হয়েছে, সেই ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে চিনে। ফলে যে সংঘর্ষে ভারতের মৃত সেনারা রাজকীয় সম্মান পেলেন, সেখানে একই সংঘর্ষে মৃত পিএলএ জওয়ানদের নামই এখনও জানতে পারলেন না পরিবারের লোকেরা। এই অভিযোগে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন পিএলএ সেনাদের পরিবারের লোকেরা। নিজের ঘরেই বেজায় বেকায়দায় পড়ে চিন।
অবস্থা এমনই যে বুধবার চিনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু জিনকে কলম ধরতে হল। চিনজুড়ে পিএলএ কর্মীদের পরিবারের ক্ষোভ প্রশমনে তিনি লিখলেন, মৃতদের সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। সঠিক সময়ে সেই তথ্য সমাজে জানানো হবে। যাতে বীর নায়কেরা যথোচিত সম্মান ও ভালবাসা পান।
পিএলএ অফিসার ও জওয়ানদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার্ঘ দেওয়া হচ্ছে, এ কথা জানিয়ে হু আরও লিখেছেন, চিনের নিরাপত্তা এবং সীমান্ত সুরক্ষার সমস্ত ভার নিয়োজিত আমাদের জওয়ানদের উপর।
ভারতের মিডিয়া দাবি করেছে অন্তত ৪০ জন চিনা সেনা হতাহত হয়েছেন এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ১৬ টি মৃতদেহ চিনকে ফিরিয়েও দিয়েছে। একে স্রেফ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন হু।
নিজের দীর্ঘ প্রবন্ধের বেশিরভাগ অংশেই পিএলএ বন্দনা করেছেন চাউনিজ কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্রের সম্পাদক। সেই সঙ্গে প্রচ্ছন্নভাবে রয়েছে ভারতের প্রতি হুমকি। তাঁর দাবি, দখলদারির মনোভাব সম্পন্ন ভারতীয় বাহিনীকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে পিএলএ। ভবিষ্যতেও তার ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু যে কারণে তাঁর কলম ধরা, সেই পিএলএ কর্মীদের পরিবারের ক্ষোভ প্রশমন, তাতে কতটা জল পড়ল, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।