১৩ জানুয়ারি রাজ্যপাল বৈঠক ডেকেছেন, উপাচার্যরা যাবেন তো, উঠছে প্রশ্ন

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন নিয়ে চরম নাটকের পর অত্যন্ত ‘ক্ষুব্ধ’ রাজ্যপাল তথা আচার্য জগদীপ ধনখড় এবার রাজ্যের সমস্ত উপচার্যকে নিয়ে বৈঠক করতে চান। আগামী ১৩ জানুয়ারি রাজভবনে তিনি ওই বৈঠক ডেকেছেন। এর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে পড়ুয়াদের হাত থেকে ঘেরাওমুক্ত করতে রাজ্যপাল সটান ছুটে গিয়েছিলেন রাজ্য সরকারের পরামর্শ উপেক্ষা করেই। তখন থেকে তিনি যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের উপর বিরক্ত। বাবুলকে ঘেরাওমুক্ত করতে রাজ্যপালের পরামর্শ মতো সুরঞ্জন ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকতে রাজি না হওয়ায় জগদীপ তাঁকে ভর্ৎসনা পর্যন্ত করেন এবং তাঁকে পদত্যাগ করতে বলেন। যাদবপুরের শিক্ষক, পড়ুয়া এবং শিক্ষাকর্মীরা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। ওই পর্বের পরেই রাজ্যপাল উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠক হয়নি। এবার আবার রাজের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়। জগদীপ শিক্ষা ক্ষেত্রের নানা বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কথা বলতে চান। রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের তিক্ততা যে জায়গায় চলে গিয়েছে, সেখানে মমতা তাঁর ডাকে সাড়া দেবেন, এমনটা ভাবাই দুষ্কর। কখনও নাম করে, আবার কখনও নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে নানাভাবে বিঁধছেন। আবার রাজ্যপালও মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করছেন। সব মিলিয়ে রাজ্যপাল আর রাজ্য সরকারের সংঘাত এখন পয়েন্ট অফ নো রিটার্নের জায়গায় চলে গিয়েছে।
এই অবস্থায় ১৩ জানুয়ারি রাজ্যপাল উপাচার্যদের বৈঠক ডেকে নতুন বিতর্কের অবতারণা করলেন। প্রশ্ন হল, উপাচার্যরা রাজ্যপালের ডাকা ওই বৈঠকে যোগ দেবেন কি না। সম্প্রতি রাজ্য সরকার বিধানসভায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে নতুন বিধি পাশ করেছে, তাতে রাজ্যপাল তথা আচার্যের ক্ষমতা অনেকটাই কমানো হয়েছে। উপাচার্যদের সরাসরি রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ করার পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তাঁদের যোগাযোগ করতে হবে উচ্চশিক্ষা দফতরের সঙ্গে। প্রয়োজন মনে করলে উচ্চশিক্ষা দফতর রাজভবনের সঙ্গে কথা বলবে। এরই মধ্যে যাদবপুরের সমাবর্তনের দিন তৃণমূল সমর্থক শিক্ষাবন্ধু সমিতির সদস্যরা রাজ্যপালকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ঘেরাও করে রেখেছিলেন। তাতে ‘অপমানিত’ রাজ্যপাল রেগেমেগে সুরঞ্জনকে দু’চার কথা শুনিয়ে দেন ফোনে। তিনি উপাচার্যকে জানান, তাঁর জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অরাজকতা। তাঁকে তিনি এও বলেন, আপনি নবান্নে গিয়ে তৃণমূলে যোগ দিন। সুরঞ্জন তার প্রতিবাদও করেন। এতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীরা বেদম চটেছেন। এখন রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া উপাচার্যরা ১৩ জানুয়ারি দল বেঁধে রাজভবনে যাবেন কি না, তা লাখ টাকার প্রশ্ন। রাজ্য সরকারও সেই অনুমতি দেবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি তো বলেই দিয়েছেন, রাজ্যপাল যদি মনে করেন, উপাচার্যরা ওনার অধস্তন কর্মী, তা হলে তিনি ভুল করছেন। প্রত্যেকের পদমর্যাদা এবং সম্মানবোধ রয়েছে। এর আগে রাজ্যপাল যে কয়টি জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন, তার একটিতেও জেলার পদস্থ অফিসাররা যোগ দেননি। তাতে রাজ্যপাল চরম উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন।
তৃণমূলের এক নেতা বলেন, দেখবেন, ১৩ জানুয়ারি রাজ্যপাল রাজভবনে আসর সাজিয়ে একাই বসে থাকবেন। আবার তিনি অপদস্থ হবেন। আসলে উনি সব সময় প্রচারে থাকতে ভালোবাসেন।

Comments are closed.