গৌরী লঙ্কেশকে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে নয়, আদর্শগত কারণে খুন করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন, চার্জশিট পেশ পুলিশের

সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ হত্যার ফাইনাল চার্জশিট পেশ করল কর্ণাটক পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি)। ৯ হাজার ২৩৫ পৃষ্ঠার ওই চার্জশিটে জানানো হয়েছে, লঙ্কেশের খুনের নেপথ্যে হাত রয়েছে অতি ডানপন্থী সংগঠন সনাতন সংস্থার। ৫ বছর ধরে গৌরী লঙ্কেশকে খুনের চক্রান্ত করেছে ওই সংগঠন। সংগঠনের মোট ১৮ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে কর্ণাটক পুলিশ। যার মধ্যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তদন্তকারী দল জানিয়েছে, গৌরী লঙ্কেশের খুন কোনও ব্যক্তি আক্রোশ বা শত্রুতার ফলে হয়নি। তাঁর হত্যা একটি ‘অর্গানাইজড ক্রাইম’। সাংবাদিক হত্যার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে উঠে এসেছে তিনজনের নাম, অমল কালে, সুজিত কুমার ও অমিত দেগওয়াকার। আর খুন করেছিল ২৬ বছর বয়সী, পরশুরাম বাগমারে।
সিসিটিভি ফুটেজে পরশুরামকে লঙ্কেশের হত্যার দিন তাঁর বাড়ির সামনে দেখা গিয়েছে।
২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বেঙ্গালুরুতে গৌরী লঙ্কেশকে তাঁর বাসভবনের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়।
‘লঙ্কেশ’ পত্রিকার সম্পাদিক গৌরীকে হত্যার পেছনে কার হাত থাকতে পারে? তাঁর সাংবাদিকতার জীবনে প্রথম থেকে গৌরী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও দলগুলির সমালোচনা করে এসেছেন। এক নির্দিষ্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী গৌরী অকুন্ঠভাবে তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন। যা কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ভালো চোখে দেখেনি। চার্জশিট রিপোর্টেও এর উল্লেখ রয়েছে। জানানো হয়েছে, গৌরী খুনের পেছনে হাত রয়েছে একটি বিশেষ সংগঠনের।
রিপোর্ট সামনে আসতেই কর্ণাটকের উপ মুখ্যমন্ত্রী জি পরমেশ্বর জানান, গৌরী খুনে জড়িত ওই সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবে সরকার।
উল্লেখ্য, এর আগে পুলিশি জেরার মুখে হিন্দু যুব সেনীর প্রতিষ্ঠাতা নবীন কুমার স্বীকার করে, গৌরীকে খুন করার জন্য বন্দুকের গুলি সেই জোগান দেয়।
তদন্তকারী দল আদালতে জানায়, ওই সংগঠনের ‘হিট লিস্টে’ নাম ছিল প্রখ্যাত নাট্যকর্মী ও অভিনেতা গিরিশ কারনাডেরও। তালিকায় নাম ছিল কন্নড় লেখক অধ্যাপক কে এস ভগবান, প্রাক্তন মন্ত্রী বি টি কবিতা নায়েক, যুক্তিবাদী সি এস দ্বারকানাথ প্রমুখের।
২০১৩ সালে পুণেতে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে খুন হন যুক্তিবাদী লেখক নরেন্দ্র দাভোলকার। ২০১৫ সালে হিন্দুত্ববাদ বিরোধী লেখক কে এম কালবুর্গীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই বছরই বাম নেতা গোবিন্দ পানসারেকে একইভাবে মারা হয়। তদন্তের নেমে গৌরী লঙ্কেশ খুন ও নরেন্দ্র দাভোলকার খুনে বিশেষ ‘যোগসূত্র’ পায় সিবিআই।

Comments are closed.