পাঁচ প্রজন্মের শাসক রাহুলের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই, মন্তব্য ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহের

যুব সমাজের কাছে ‘পাঁচ প্রজন্মের শাসক’ রাহুল গান্ধীর গ্রহণযোগ্যতা নেই। সেখানেই জিতে গিয়েছেন ‘সেলফ-মেড’ নরেন্দ্র মোদী। এভাবেই মোদী ও গান্ধীর তুলনা টানলেন ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ। তিনি বলেন,’পাঁচ প্রজন্মের শাসক’ রাহুল গান্ধীকে সাংসদ করে সর্বনাশা কাজ করেছেন কেরলবাসী। কঠোর পরিশ্রমী ও স্ব-প্রতিষ্ঠ নেতা নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কোনওভাবেই পেরে উঠবেন না কংগ্রেস নেতা।
শুক্রবার কেরল সাহিত্য উৎসবের দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গান্ধীর পার্থক্য তুলে ধরেন রামচন্দ্র গুহ, যাঁকে একাধিকবার কংগ্রেস ঘেঁষা ইতিহাসবিদ বলে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ শাসনের সমালোচনা করেছেন প্রবীণ ইতিহাসবিদ। কিছুদিন আগেই মোদী সরকারের নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমে পুলিশের হাতে আটক হতে হয় তাঁকে।
তবে রামচন্দ্র গুহ জানিয়েছেন, মোদী বা রাহুল গান্ধী কারও সঙ্গেই তাঁর ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই। শুক্রবার কেরলের অনুষ্ঠানে রামচন্দ্র গুহ বলেন, রাহুল গান্ধী একজন ভদ্র ও সভ্য মানুষ। কিন্তু নতুন ভারত আর ‘পাঁচ প্রজন্মের’ কংগ্রেস শাসককে চাইছে না। যদি ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও মালওয়ালিরা একই ভুল করে রাহুলকে ফের সাংসদ করেন, তাতে আদতে নরেন্দ্র মোদীই বড় সুযোগ পেয়ে যাবেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশের আমেঠির পাশাপাশি কেরলের ওয়েনাড কেন্দ্র থেকেও নির্বাচনে লড়েছেন রাহুল। গান্ধী পরিবারের গড় হিসেবে পরিচিত আমেঠি থেকে হেরে গেলেও ওয়েনাডে বিপুল ভোটে জেতেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি।
নরেন্দ্র মোদী ও রাহুল গান্ধীর তফাৎ কোথায়? ইতিহাসবিদ বলেন, মোদীর বড় সুবিধা হল তিনি রাহুল গান্ধী নন। তিনি ‘সেলফ-মেড’ বা স্ব-প্রতিষ্ঠ। ১৫ বছর একটা রাজ্য চালানোর প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা রয়েছে মোদীর। অবিশ্বাস্য রকম কঠোর পরিশ্রমী এবং একটা দিনও ইউরোপে গিয়ে ছুটি কাটাননি। তবে এসব যে তিনি কটাক্ষের সুরে বলছেন না, তাও পরিষ্কার করেন রামচন্দ্র গুহ।
প্রবীণ ইতিহাসবিদ ও লেখক বলেন, রাহুল বেশি বুদ্ধিমান, তিনি যদি আরও বেশি পরিশ্রমী হতেন, ইউরোপে ছুটি না-ও কাটাতেন, তাহলেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা মোদীর তুলনায় ম্লান হত। কারণ এ দেশের যুব সম্প্রদায় আর পাঁচ প্রজন্মের নৃপতি চায় না। পাশাপাশি কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর দিকেও আঙুল তুলে রামচন্দ্র জানান, সনিয়া তাঁকে মোঘল শাসনের কথা মনে করিয়ে দেন। তাঁর কথায়, ভারত ক্রমশ আরও প্রজাতান্ত্রিক হচ্ছে, সামন্ততন্ত্রের জায়গা নেই নয়া ভারতবর্ষে। কিন্তু গান্ধী পরিবার এই সত্য বুঝতে পারছে না। সনিয়া আপনি দিল্লিতে, আপনার সাম্রাজ্য ক্রমশ ডুবছে, কিন্তু আপনার চামচারা বোঝাচ্ছেন, সবই ঠিকঠাক আছে। আপনি এখনও সম্রাজ্ঞী।
‘ইন্ডিয়া আফটার গান্ধী’-র লেখকের কথায়, কেন প্রত্যেক বিতর্কে মোদীরা নেহরুকে টেনে আনেন? কারণ, বিরোধী চেয়ারে আছেন রাহুল গান্ধীরা। তাই রাহুল গান্ধীর অনুপস্থিতে মোদীকে তাঁর সরকার শাসনের প্রণালী এবং কেন তাঁরা ব্যর্থ, তার  জবাবদিহি করতে হবে। পাশাপাশি, ‘দেশপ্রেম বনাম উগ্র দেশাত্মবোধ’-এর পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে রাম গুহ বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় একটা ‘মহান দল’-এর একটি ‘করুণ পারিবারিক ফার্ম’-এ রূপান্তরের ফলেই এ দেশে হিন্দুত্ববাদ ও উগ্র দেশাত্মবোধের জন্ম। পাশাপাশি এদিন বামেদের একহাত নিয়ে রামচন্দ্র গুহ বলেন, ভারতে হিন্দুত্ব ও উগ্রতা বৃদ্ধির একটি বড়ো কারণ হল দেশের বামপন্থীদের ‘ভণ্ডামি’। তারা নিজেদের দেশের চেয়ে বিদেশকে বেশি ভালোবাসে, জনমানসে এমন একটা ধারণা তৈরি হওয়া, বিশ্বব্যাপী জাতীয়তাবাদীদের আগ্রাসন, প্রতিবেশী দেশের মুসলিম মৌলবাদের প্রভাবে এ দেশের উগ্র হিন্দুত্ব প্রকট হয়েছে।

Comments are closed.