মুক্তচিন্তাকে পিষে মারবেন না, প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি সৌমিত্র-অপর্ণা, অনুরাগ কাশ্যপ, সুমিত সেন সহ ৪৯ বিদ্বজ্জনের

জয় শ্রীরাম স্লোগান দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে মারা হচ্ছে। সম্প্রতি দেশজুড়ে ২৫৪ টি ধর্মীয় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, দলিতদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ৮৪০ টি। প্রধানমন্ত্রী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? এবার নরেন্দ্র মোদীকে এই প্রশ্ন করে খোলা চিঠি দিলেন দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিদ্বজ্জনেরা।

চিঠিতে লেখা হয়েছে, শাসক দলের বিরোধিতা করা মানেই দেশদ্রোহিতা নয়। তাই সরকার বা শাসক দলের সমালোচনা করলেই তাঁকে দেশবিরোধী বা মাওবাদী বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শেষ হওয়া উচিত। ভিন্নমত পোষণ করা, সরকারের সমালোচনা করা সুস্থ গণতান্ত্রিক দেশে জরুরি বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন বিদ্বজ্জনরা।
মঙ্গলবার সমাজকর্মী ডাক্তার বিনায়ক সেন, আশিস নন্দী, ইতিহাসবিদ সুমিত সরকার, রামচন্দ্র গুহ, চিত্র পরিচালক আদুর গোপালকৃষ্ণণ, মণিরত্নম, শ্যাম বেনেগাল, কেতন মেহতা, অপর্ণা সেন, অনুরাগ কাশ্যপ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শুভা মুদগল, কঙ্কনা সেনশর্মা, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেন, রুপম ইসলাম, অনুপম রায়ের মতো ৪৯ জন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্টজনেরা খোলা চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে।
উত্তর প্রদেশ থেকে বিহার, রাজ্যে রাজ্যে পিটিয়ে খুনের মতো মধ্যযুগীয় পাশবিক ঘটনা দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে খোলাচিঠিতে বিশিষ্টজনেরা লিখেছেন, সংখ্যালঘু ও দলিতদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ক্রমান্বয়ে সামনে আসছে। সরকার বিরোধী সমালোচনা বা মন্তব্য করলেই দেশবিরোধী বা মাওবাদী বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নিজের দেশেই এক শ্রেণির মানুষ তীব্র উৎকণ্ঠা নিয়ে বাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দুঃখপ্রকাশই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিদ্বজ্জনেরা। দেশের আইন-শৃঙ্খলার দ্রুত উন্নতি চেয়ে এবং পিটিয়ে খুনের মতো ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেন বিদ্বজ্জনেরা।
বিনায়ক সেন, অঞ্জন দত্ত, গৌতম ঘোষের সই সম্বলিত ওই চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তিকামী মানুষরা ভীত ও উদ্বিগ্ন। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, বাক্-স্বাধীনতা খর্ব করা হচ্ছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) একটি রিপোর্টের কথা ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন বিশিষ্টজনেরা। যে রিপোর্ট বলছে, কেবলমাত্র ২০১৬ সালেই দেশজুড়ে ৮৪০ টিরও বেশি দলিতদের ওপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ২৫৪ টি ধর্মীয় বিদ্বেষের ঘটনা ঘটেছে। গণপিটুনিতে ওই সময়ের মধ্যেই অন্তত ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহতের সংখ্যা ৫০০ র বেশি। দুর্ভাগ্যক্রমে এই ঘটনাগুলির মধ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের সংখ্যাই উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন ইতিহাসবিদ সুমিত সরকার, রামচন্দ্র গুহরা। চিঠিতে তাঁরা আরও লেখেন, যে রাম দেবতা হিসেবে পূজিত হন, তাঁর নাম নিয়ে পিটিয়ে মারার মতো লজ্জাজনক ঘটনা ঘটছে।
চিঠির শেষ দিকে বিদ্বজ্জনরা লেখেন, বিরোধী মন্তব্য বা সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিয়েই শক্তিশালী রাষ্ট্র তৈরি হয়। মুক্তচিন্তাকে যেন পিষে ফেলা না হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আবেদন দেশের বিশিষ্টদের।

Comments are closed.