এবারে দুর্গা পুজোয় আরও বড় আকারে ইন্টারন্যাশনাল জুরি অ্যাওয়ার্ড, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন বিচারকমণ্ডলী

আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই শুরু হয়ে যাবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজো। ইতিমধ্যেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেল তৈরির কাজ, কিংবা উদ্যোক্তাদের দৌড়োদৌড়ি শুরু। চরম ব্যস্ততা কুমোরটুলিতে। ঘাম মোছার ফুরসত নেই থিম শিল্পীদের। আলোর খেলায় শেষ মুহূর্তের কারিকুরিতে মগ্ন চন্দননগরের আলোকশিল্পীরা। আর ছোটরা ডুবে নতুন জামার গন্ধে। আকাশে-বাতাসে ভরপুর পুজো পুজো ভাব।
বাঙালির দুর্গা পুজো। একে শুধু পুজো বললে অর্ধেক বলা হয়। আসলে দুর্গা পুজো, পুজোর চেয়েও বেশি কিছু। তা যেমন পরকে আপন করে, ঠিক তেমনই পুজোর কটা দিন হাত খুলে বিক্রিবাট্টার স্বপ্ন দেখেন ব্যবসায়ীরাও। আর বারোয়ারি পুজোর ঝাঁ চকচকে মণ্ডপ তো এক একটা শৈল্পিক জাদুঘর। ২০১৯ সালের দুর্গাপুজোয় কেবলমাত্র কলকাতায় বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। এবার যে পরিমাণটা আরও বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব, বিশ্বের দরবারে ঠিক কোন জায়গায়?
বাঙালির দুর্গা পুজোকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য রাজ্য সরকার কার্নিভালের আয়োজন করছে। কিন্তু জানেন কি, এক বাঙালিরই হাত ধরে বাঙালির দুর্গা পুজো এখন বিশ্ব মানচিত্রের অন্যতম আকর্ষণ। তিনি জয়দীপ মুখোপাধ্যায়। কলকাতা শহরে যে গুটিকয় সংস্থা কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক ট্যুরিজমের ব্যবসা করেন, জয়দীপ তাদের পথিকৃৎ। দুর্গা পুজো নিয়ে অসম্ভব প্যাশনেট জয়দীপ, সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে বাঙালির দুর্গা পুজোকে পৌঁছে দিয়েছেন ইংল্যান্ড, স্পেন, ফ্রান্স, পর্তুগাল, কানাডার আনাচেকানাচে।
২০১৮ সাল থেকে শহরে শুরু হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল জুরি অ্যাওয়ার্ড। এবার দ্বিতীয় বছরে পা দিয়ে তা বহরে আরও বড়, আরও বেশি রঙিন। গতবার এসেছিলেন প্রথম বিশ্বের ৫ টি দেশের মোট ১৪ জন বিচারক। যাঁরা বাংলার দুর্গাপুজো সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল। বছরের পর বছর তাঁরা সংগ্রহ করেছেন বাঙালির দুর্গা পুজো নিয়ে প্রচুর তথ্য। জয়দীপের কথায়, দুর্গা পুজোর কথা যদি বলেন, বাঙালির চেয়ে কোনও অংশে কম যান না ওই বিদেশিরাও। এবারও ১৪ থেকে ১৬ জনের বিচারকমণ্ডলী তৈরি হবে। বিচারকেরা প্রত্যেকেই প্রথম বিশ্বের নাগরিক। কারও বাড়ি ফ্রান্স, কেউ থাকেন পর্তুগালে, কেউ বা সাত সমদ্র পেরিয়ে শরতের কলকাতা আসবেন কানাডা থেকে। উদ্দেশ্য, কলকাতা ও শহরতলির ৩০০ পুজো মণ্ডপ ঘুরে দেখা এবং শেষে ৭ বিভাগে সেরাদের নির্বাচিত করা। বিচারকদের মধ্যে কেউ সাংবাদিক, আবার কেউ বিখ্যাত ফটোগ্রাফার, কেউ ব্লগ লিখে জনপ্রিয়তার চূড়ায়, আবার কারও পেশা সংবাদপত্রে কলাম লেখা। কিন্তু সাদৃশ্য একটাই, এঁরা সকলেই বাঙালিদের মতোই দুর্গা পুজো বলতে পাগল।

মেঘদূতম ট্রাভেলসের কর্ণধার জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, এতদিন কেন্দ্রীয় সরকারের ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া বা অতুল্য ভারত দুর্গাপুজোকে গুরুত্ব দিত না। কিন্তু সাম্প্রতিককালে তারা দুর্গা পুজোকেও তাদের ক্যালেন্ডারে ঢোকাতে বাধ্য হয়েছে। বিভিন্ন দেশে দুর্গা পুজো নিয়ে রোড শো করতে গিয়ে দেখেছি, বিদেশিরা চোখ গোল গোল করে গিলছে বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসবের আপাদমস্তক। ধর্ম-বর্ণ-জাতি দূরে ঠেলে যেভাবে কলকাতা দুর্গা পুজোর আনন্দে মেতে ওঠে, যে বিদেশি একবার তা নিজের চোখে দেখেছেন, বারবার আসার সুযোগ তিনি ছাড়বেন না। কিন্তু বাঙালির দুর্গা পুজোয় বিদেশি বিচারক কেন? জয়দীপ বলছেন, বিদেশি বলিয়া করিও না হেলা। ওঁদের কলকাতার দুর্গাপুজোর সম্বন্ধে যা জ্ঞান, তা লজ্জায় ফেলে দেবে অনেক বাঙালিকেই। আসলে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবকে আন্তর্জাতিক করে তুলতেই এই প্রয়াস, মন্তব্য পুজো পাগল এই সফল ব্যবসায়ীর।
কিন্তু কীভাবে নাম দেবেন? জয়দীপ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, ২ রা সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজেঅ্যাওয়ার্ড ডট কম (https://ijaward.com/) এ গিয়ে সরাসরি নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন ইচ্ছুক উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি, রবার্ট স্ট্রিটে মেঘদূতম ট্রাভেলস প্রাইভেট লিমিটেডের অফিসে গিয়েও নাম নথিভুক্ত করা যাবে। মহালয়ার দিন শহরে পৌঁছে যাবেন বিচারকমণ্ডলী। সেদিন থেকেই শহর ও শহরতলির ৩০০ পুজো প্যান্ডেলে ঘুরতে শুরু করবেন তাঁরা। ৪ ঠা অক্টোবর ঘোষণা করা হবে ৭ বিভাগে সেরা পুজোর নাম।
পুরস্কার দেওয়া হবে মূলত তিনটি ক্যাটেগরিতে ভাগ করে। সেরা সৃষ্টি বা সিগনেচার ক্রিয়েশনের তিনটি ভাগ। প্রথম ভাগে যাদের পুজোর বাজেট ৪০ লক্ষ কিংবা তার ঊর্ধ্বে। দ্বিতীয় ভাগে, যাদের পুজোর বাজেট ২০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা। আর তৃতীয় ভাগে থাকবে সেই সব পুজো যাদের বাজেট ২০ লক্ষের কম। এছাড়াও সেরা দৃষ্টিনন্দন পুজো, সেরা আন্তর্জাতিক আবেদন সম্পন্ন পুজো, সোলফুল ক্রিয়েশন, সেরা প্রতিমার পুরষ্কার তুলে দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট পুজো উদ্যোক্তাদের হাতে।

Comments are closed.