রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড়ে হারের জন্যই আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা উচ্চবর্ণের জন্য সংরক্ষণ বিল এনেছে কেন্দ্রঃ কারাট

সম্প্রতি জেনারেল ক্যাটেগরিতে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষের জন্য চাকরি ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। এই লক্ষ্যে আনা সংবিধান সংশোধনী বিলটি ইতিমধ্যেই লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাশ হয়ে রাষ্ট্রপতির সম্মতিও পেয়ে গেছে। এখন কার্যক্ষেত্রে দ্রুত এই সংরক্ষণ লাগু করতে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরে।
এই অবস্থায় কেন্দ্রের এই নয়া উদ্যোগে আদতে কারা লাভবান হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল সিপিএম। সিপিএম-এর মুখপত্র ‘পিপলস ডেমোক্রেসি’র শেষ সংখ্যায় এবিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট।
নিবন্ধে কারাট লিখছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এই নয়া ১০ শতাংশ সংরক্ষণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে লোকসভায় ও রাজ্যসভায় সেই সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করানো, অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তিন দিনের মধ্যে গোটা বিষয়টি সেরে ফেলে কেন্দ্রীয় সরকার। কারাটের মতে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই যে  ভোটের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে কেন্দ্রের এই দ্রুততা, এবিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।
কারাট লিখেছেন, সম্প্রতি রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয় ও এই তিন রাজ্যে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিজেপি যে হতাশায় ভেঙে পড়েছিল, সেখান থেকে হারানো জমি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যেই এই পদক্ষেপ করেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। কারাটের মতে, দেশে বর্তমানে বেকারত্বের বৃদ্ধি কারণে অনেক জাতিগোষ্ঠীর তরফ থেকেই সংরক্ষণের দাবি উঠছিল, তাদের মুখ বন্ধ করতেই কেন্দ্রের এই অতিরিক্ত ১০ শতাংশের সংরক্ষণের নয়া সিদ্ধান্ত।
প্রকাশ কারেটের মতে, শিক্ষা ও চাকরির জন্য জেনারেল ক্যাটেগরির মধ্যে সংরক্ষণের দাবি নতুন কিছু নয়। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ১৯৯০ সালে মণ্ডল কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণের যে সিদ্ধান্ত ভি পি সিংহ নিয়েছিলেন, তখন থেকেই এই ইস্যুতে সংরক্ষণ নিয়ে নানা দাবি উঠে এসেছে।
কারাট লিখছেন, সিপিএম এই সংরক্ষণের সিদ্ধান্তকে সে সময় সমর্থন করেছিল, কারণ তারা মনে করে  সামাজিক বৈষম্যের শিকার ওবিসিরা, তারা সামাজিক ও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাই তফশিলি জাতি, জনজাতির মতো ওবিসিদেরও সংরক্ষণের আওতায় আনা উচিত বলে মনে করে সিপিএম। তবে ওবিসিদের মধ্যেও শুধুমাত্র আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়াদের জন্যই সংরক্ষণ দেওয়া উচিত বলে সে সময় সিপিএম সওয়াল করেছিল বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন কারাট। তবে যেহেতু যুগ যুগ ধরে জাতিভেদ প্রথার কারণে সামাজিকভাবে বঞ্চিত, নির্যাতিত  হয়ে এসেছে তফশিলি জাতি, উপজাতির লোকেরা তাই তাদের আর্থিক দিক বিচার না করে  তাদের সকলকেই সংরক্ষণের আওতায় আনা উচিত বলে লিখেছেন প্রকাশ কারাট।
নিজের এই নিবন্ধে কারাট এক জায়গায় লিখেছেন, জেনারেল ক্যাটেগরির মধ্যে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য ৫-১০ শতাংশ  সংরক্ষণ রাখা উচিত বলে মনে করে সিপিএম। তবে এই সংরক্ষণ  কিছুটা সুরাহা আনলেও তা যে বেকারত্ব বা সামাজিক বৈষম্যের স্থায়ী সমাধান নয় তাও নিজের লেখায় উল্লেখ করেছেন তিনি।

Comments are closed.