পুলওয়ামায় সেনার গুলিতে নিহতের তালিকায় ১৪, ১৭ বছরের নাবালক থেকে এমবিএ পড়ুয়া, ক্ষোভে ফুঁসছে কাশ্মীর

শনিবার কাশ্মীর উপত্যকার পুলওমার সিরনু গ্রামে সেনা জঙ্গি সংঘর্ষে তিন হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি ও এক নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু হয়। অভিযোগ, ওই ঘটনার রেশ ধরে স্থানীয়রা সেনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখালে সেনা তাদের উপরও গুলি চালায়। যার জেরে কম করে ৭ জন সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঘটনায় কম পক্ষে ৪০ জন গ্রামবাসী আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে ১২ জনের অবস্থা গুরুতর ও ৩ জনের দেহে গুলি রয়েছে বলে জানা গেছে।
মৃতদের মধ্যে ৪ জনের সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। মৃতের তালিকায় ১৪, ১৭ বছরের দুই স্কুল পড়ুয়ার নাম আছে। জানা গেছে, সেনার গুলিতে মৃত বছর ১৪ এর পড়ুয়ার নাম আকিব আহমেদ ভাট। সে নবম শ্রেণীর পড়ুয়া। সিরনু গ্রামে সংঘর্ষের পরে সেও স্থানীয়দের সঙ্গে ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিল। ২০০ ফুট দূর থেকে ছোড়া গুলি লাগে তার মাথায়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় ক্রিকেটপ্রেমী আকিব। আকিবার বাবা আসিফ আহমেদ ভাট জানিয়েছেন, ছেলেকে খুঁজতে স্থানীয় হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, পড়ে আছে তার মৃতদেহ। পরিবারকে সাহায্য করতে ১৪ বছরের এই কিশোর মজদুরের কাজও করত। এক ভাই ও বোন আছে তার।
ঘটনায় মৃত আরও এক পড়ুয়ার নাম লিয়াকাত আহমেদ দার। স্থানীয় পারিগাম গ্রামের বাসিন্দা সে। পরিবারের দাবি, লিয়াকাতের হাতের আঙুল জোড়া ছিল। অপারেশনের এক বছর পর, সম্প্রতি সে একাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা দিয়েছিল। লিয়াকাতের বাবা মাজিদ দার গ্রাম থেকে দুধ সংগ্রহ করে শ্রীনগরে গিয়ে বিক্রি করে সংসার চালান। লিয়াকতের বাবা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল থেকে তার সঙ্গেই ছিল ছেলে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে দুধ সংগ্রহ করে সে বাড়ি ফিরে যায়, মাজিদ চলে যান শ্রীনগরে দুধ বেচতে। সেখানে গিয়ে তিনি খবর পান, ছেলে মারা গেছে। কমার্সের পড়ুয়া লিয়াকত বন্ধুদের সাথে পুলওয়ামার সংঘর্ষ স্থলের দিকে গিয়েছিল, কী হয়েছিল দেখতে।  কিন্তু সেনার ছোড়া এলোপাথাড়ি গুলি কেড়ে নিল তার প্রাণ।
ঘটনায় মৃত আরও এক ব্যক্তির নাম তাসিফ আহমেদ মির। বয়স ২৯। গত চার বছর ধরে বাবার সঙ্গে কথা ছিল না এই যুবকের। ছেলের নিজের পছন্দে বিয়ে মেনে নিতে পারেননি তাসিফের বাবা। স্ত্রী, ছেলে, মেয়েকে নিয়ে একটি ঘরে আলাদা থাকতেন তিনি। পেশায় জম্মু কাশ্মীর পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কর্মী ছিলেন তাসিফ। শনিবার সকাল ৯ টা নাগাদ তাঁকে শেষবারের জন্য দেখা যায় গ্রামে। আর ফেরা হল না তাঁর। পাঁচ অবিবাহিত বোন রয়েছে তাঁর।
সেনার গুলিতে মৃত আর এক ব্যক্তির নাম আবিদ হুসেন। বয়স ২৮। ইন্দোনেশিয়ায় এমবিএ পড়তে যাওয়ার সময় সেখানকার এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক হয় আবিদের। সেখানে বিয়ে করে দুজনে ফিরে আসেন পুলওয়ামায়। তিন মাসের শিশুকন্যা রয়েছে তাঁর। সিরনু গ্রামেই পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। শনিবার সেনার গুলি এক লহমায় কেড়ে নিয়েছে তাঁরও প্রাণ।

Comments are closed.