প্রজাতন্ত্র দিবসে অনন্য প্রতিবাদের সাক্ষী হল শহর, সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে ১১ কিমির মানব বন্ধন গোলপার্ক থেকে শ্যামবাজারে

সময়টা এখন আর ঘরে বসে প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের, ঘরে বসে দেশভক্তির গান শোনার বা টিভির পর্দায় দিল্লি কুচকাওয়াজ দেখার নয়। এখন সময় দেশের সংবিধানকে বাঁচানোর। সময় দেশের মূল আত্মা ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষা করার। দেশের গণতান্ত্রিক, প্রজাতান্ত্রিক, সমনাধিকারের অধিকারের পরিবেশ রক্ষার সময় এটা। তাই পথে নেবেই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে এবারের ২৬ জানুয়ারি পালন করছি আমরা, মোটামুটি এই একই কথা শোনা যাচ্ছিল বছর ২৪ এর প্রেসিডেন্সির পড়ুয়া সায়ন, যাদবপুরের অরিত্র, বছর ৬০ এর রত্না দাশগুপ্ত, বছর ৪০ এর ফতিমা বেগম বা ৮০ এর কোঠায় পা দেওয়া অরুপ সেনের গলায়।
হ্যাঁ, এবারের ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে এই শহর সাক্ষী থাকল এক অভিনব প্রতিবাদ ও মানব বন্ধনের। দেশের সংবিধানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে, সিএএ, এনআরসিএর বিরুদ্ধে বার্তা দিয়ে রবিবার কলকাতায় এক মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল ইউনাইটেড ইন্টারফেইথ ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়া নামের একটি সংগঠন। তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল শহরের একাধিক গণ ও নাগরিক সংগঠন, বহু সাধারণ মানুষ ও ছাত্রছাত্রীরা।

যার ফলে রবিবার শহর সাক্ষী থাকল অভিনব ২৬ জানুয়ারি পালনের। গোলপার্ক থেকে শ্যামবাজার নেতাজি মূর্তি পর্যন্ত দীর্ঘ এই প্রায় ১১ কিমি পথে হাতে হাতে ধরে মানববন্ধন গড়লেন শহরবাসী।
গোলাপার্ক, গড়িয়াহাট মোড়, কোয়েস্ট মল, পার্কসার্কাস, মল্লিকবাজার, পার্ক স্ট্রিট ক্রসিং, এজেসি বোস রোড ক্রসিং, মাদার হাউস, মৌলালি, শিয়ালদহ ক্রসিং, বউবাজার, মল্লিকবাজার হয়ে শ্যামবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এদিনের এই মানব বন্ধন। যোগ দেন কয়েক হাজার মানুষ। দুপুর ১২ টা নাগাদ প্রায় ৩০ মিনিটের জন্য এই মানববন্ধন পালিত হয়। অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা, মুখে ছিল জাতীয় সংগীত। বাস, অটো থেকে নেমে বহু মানুষ, দোকান থেকে বেরিয়ে দোকানদার বা ক্রেতারাও এদিনের মানব বন্ধনে যোগ দেন।

দেশজুড়ে এনআরসি, সিএএ বিরোধী যত প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসকে সামনে রেখে তা আরও বড় আকার নেবে তার ইঙ্গিত আগেই ছিল। বাস্তবে হলও তাই। এই মানব বন্ধব কর্মসূচি ছাড়াও এদিন দুপুরের পর পড়ুয়াদের ডাকে একটি প্রতিবাদ মিছিল নাখোদা মসজিদ থেকে যায় জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি পর্যন্ত।
এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসে বিশেষ অতিথি হয়ে এসেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। মাস কয়েক আগে তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছিল আমাজনের বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে ইন্ধন দেওয়ার। ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের ভারত আগমনের প্রতিবাদে এদিন বিক্ষোভ দেখানো হয় শেক্সপিয়র সরণীতে ব্রাজিল দূতাবাসের সামনে।
অন্যদিকে, এই মূহূর্তে শহরের তিন জায়গায় সিএএ, এনআরসি, এনপিআর-এর বিরুদ্ধে টানা গণ অবস্থান চলছে। পার্ক সার্কাস ময়দান, নিউ মার্কেট চ্যাপলিন স্ক্যোয়ার ও খিদিরপুরে। রবিবার এই তিন স্থানেও প্রতিবাদী স্লোগান, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হয়।

 

Comments are closed.