কীসের ভিত্তিতে ছাঁটাই তালিকা? কেন বন্ধ বেতন? এই সময় কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিস বরখাস্ত সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর নীলাঞ্জন বসুর, চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকেও

করোনা সংক্রমণ রুখতে জারি লকডাউনের মধ্যেই চাকরি হারিয়েছেন বহু মানুষ। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সংবাদমাধ্যমে। চলছে লাগাতার ছাঁটাই অথবা বেতনে পড়ছে কোপ। কোথাও খবরের কাগজই উঠে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সংবাদমাধ্যম হিসেবে দাবি করা বেনেট কোলম্যান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড বা টাইমস গ্রুপেও চলেছে নাগাড়ে ছাঁটাই। বাদ যায়নি টাইমস গোষ্ঠীর বাংলা দৈনিক এই সময়।

মে মাসেই এই সময় সংবাদপত্রের একাধিক সিনিয়র সংবাদকর্মীকে ফোন করে ইস্তফা দিতে বলেছিল সংস্থা। পত্রপাঠ সবাই ইস্তফা দিলেও একজন ইস্তফা দিতে অস্বীকার করেন। এবার টাইমস গ্রুপকে আইনি নোটিস পাঠালেন ইস্তফা দিতে অস্বীকার করা সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর নীলাঞ্জন বসু।

পড়ুন: ছাঁটাই শুরু বাংলা সংবাদপত্রেও, এই সময় পত্রিকায় কর্মীদের ফোন করে ইস্তফা দিতে নির্দেশ

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৪ মে। সেইদিন টাইমস গোষ্ঠীর সদর দফতর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কল করা হয় কলকাতায় এই সময়ের কয়েকজন সিনিয়র কর্মীকে। তাঁদের ইস্তফা দিতে বলা হয়। অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের তরফে বলা হয়েছিল, ছাঁটাই তালিকা পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে তৈরি হয়নি। তাহলে কীসের ভিত্তিতে তাঁকে ছাঁটাই করা হচ্ছে, এই প্রশ্ন তুলে ইস্তফা দিতে অস্বীকার করেন নীলাঞ্জন বসু। যদিও বাকিরা পত্রপাঠ ইস্তফা দিয়ে দেন বলে জানা গিয়েছে।

বরখাস্ত হওয়া সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরের অভিযোগ, ২৬ মে তাঁকে ফের একবার ফোন করে একই আবেদন করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, ইস্তফা না দিলে তাঁকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হবে। কিন্তু তারপরও তিনি নিজের দাবিতেই অনড় থাকেন। তাঁকে এইচআর আধিকারিক জানান, তাঁদের প্রথম কথোপকথনের দিনকে (১৪ মে, ২০২০) তাঁর শেষ কর্মদিবস হিসেবে ধরে বেতন দেওয়া হবে।

সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর নীলাঞ্জন বসু জানান, এর পরেই দেখি অফিসের সিস্টেমে আমার নাম বাদ। যদি বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয় তাহলে সিস্টেমে নাম থাকবে না কেন? এপ্রিল মাস থেকেই আমাদের বেতনের অংশ কাটা হচ্ছিল, এবার রাতারাতি পুরো বেতন বন্ধ হয়ে গেল, বলেন নীলাঞ্জন। তাঁর দাবি, কীসের ভিত্তিতে ছাঁটাইয়ের তালিকা তৈরি হল তা জানাতে হবে। এক্ষেত্রে দৈনিক সংবাদপত্রের সম্পাদকের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন তিনি।

পড়ুন: আনন্দবাজার, এই সময়, আজকালে স্যালারি কাট

কোভিড ১৯ এর কারণ দেখিয়ে টাইমস গ্রুপের কর্মীদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ও তার ব্যতিক্রম নয়। বরখাস্ত হওয়া সিনিয়র সংবাদকর্মীর প্রশ্ন, আরও একদফা বেতন ছেঁটে কি ছাঁটাই রোখা যেত না? পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি না হলে তাঁকে কোন গ্রাউন্ডে ছাঁটাই করা হল তা জানানো হচ্ছে না কেন? চাকরিতে ঢোকার সময় শর্ত ছিল, বিচ্ছেদের আগে উভয় পক্ষকে এক মাসের নোটিস দিতে হবে। তাহলে স্রেফ ফোন করে দায় সারার রাস্তায় কেন হাঁটছে টাইমস কর্তৃপক্ষ? এই প্রশ্নের উত্তর পেতেই এই সময় কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন নীলাঞ্জন বসু। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও।

একই বিল্ডিংয়ে সংস্থার ইংরেজি দৈনিকেও ছাঁটাইয়ের চাপ ছিল। কিন্তু ছাঁটাইয়ের পথে না গিয়ে প্রত্যেক কর্মীর সঙ্গে কথা বলে আরও এক দফা বেতন কমানোর রাস্তায় হেঁটেছিল তারা। বাংলা দৈনিকের ক্ষেত্রে কি তেমন কোনও মানবিক পদক্ষেপ করা যেত না? প্রশ্ন কাজ হারানো সিনিয়র সংবাদকর্মীর।

Comments are closed.