লকডাউনে অবসর যাপন – How to Spend Free Time?

মারণ করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রুখতে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং জরুরি, আর তার জন্য দেশে দেশে চলছে লকডাউন। ২৪ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল, এই ২১ দিনের ঘরবন্দি জীবন কীভাবে কাটবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন? যতই ওয়ার্ক ফ্রম হোমের চাপ থাকুক, সকালে বাজার করা থেকে অফিস যাত্রা, সেখান থেকে ফিরে পাড়ায় আড্ডা, টানা ২১ দিনের লকডাউন নিমেষে যেন চেনা রুটিন বদলে দিয়েছে। কীভাবে ঘরবন্দি থেকেও ব্যস্ত রাখবেন নিজেকে, বন্দি দশাকেও কীভাবে কাজে লাগাবেন রইল তারই কিছু টিপস।

 

Make Free Time Productive

গোছগাছ:

প্রতিদিনের নানান ব্যস্ততা নিজের ঘর, আসবাবপত্র গোছানো হয় না আমাদের। এ ক’দিন কাজের লোকেরও ছুটি। তাই লকডাউনের দৌলতে ঘরটিকে জীবাণুমুক্ত করতে পরিষ্কার করুন। ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখুন। এতে সময় কাটবে, মন ভালো থাকবে। আর জিনিস পত্র গোছাতে গিয়ে হয়ত এমন কিছু পুরনো জিনিস পেয়ে গেলেন যা আপনাকে নস্টালজিক করবে।

 

এই দিনের কাজের তালিকা তৈরি করুন

make free time productive

 

ছুটির দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন তা নির্ভর করবে আপনার ইচ্ছে, শখের উপর। ওয়ার্ক ফ্রম হোম থাকলে তো সময় মত কাজ করতেই হবে। তাছাড়া যে সময়টা আগে বাইরে কাটত, এখন সেই সময়টায় কী করবেন তার একটা তালিকা তৈরি করে ফেলুন। দেখবেন বাড়িতে থেকেও কেমন নিজের মতো করে ব্যবহার করতে পারছেন সময়টাকে (how to use free time).

 

) বই পড়া

লকডাউনে অবসর যাপনের বড় সঙ্গী হতে পারে বই। কাজের চাপে ম্যাগাজিন, খবর কাগজের পাতা ওল্টানো ছাড়া যাঁরা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পছন্দের বই পড়তে পারেননি, এটাই বইয়ের তাক থেকে মোটা ভলিউমের গল্প, উপন্যাস, নন ফিকশান পড়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। যে বইগুলো পড়তে হবে হবে করেও এতদিন পড়া হয়নি, ঝটপট তার একটা লিস্ট তৈরি করে নিন। বইয়ের তাকে সব না পেলে পিডিএফ ফাইল খুঁজে দেখতে পারেন। তাছাড়া অনলাইনের অপশন তো রইলই। আর আপনার যদি রোজকার পড়ার অভ্যাস থাকে তাহলে তো কথাই নেই। এই সুযোগ আর কেউ ছাড়ে!

 

) নতুন ভাষা শিখুন

বিদেশি ভাষার চর্চা করে নিতে পারেন এই সময়। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দির বাইরে অন্য কোনও আঞ্চলিক ভাষা হোক বা বিদেশি, একাধিক ভাষা জেনে রাখাটা যেমন মজার তেমনই প্রফেশনাল কেরিয়ারের জন্যেও ভালো। দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে যে কোনও অজানা ভাষা রপ্ত করতে না পারলেও অনেকটা এগিয়ে যেতে পারবেন ইন্টারনেট ও বইপত্রের দৌলতে। তাই এই অবসর সময়ে নিজের পছন্দসই কিছু ভাষা শিখতে পারেন।

 

) ব্লগ লিখুন, ছবি আঁকুন

লকডাউনের এই অবসর কিন্তু আপনাকে সুযোগ দিচ্ছে নিজের শখগুলো ঝালিয়ে নেওয়ার। যেসব কাজ ভালো লাগা সত্ত্বেও প্রতিদিনের ব্যস্ততায় করা হয়ে ওঠেনি। সেটাই করে নিতে পারেন এই ক’দিনে। দুপুর, সন্ধেবেলার সময়টা পার করতে ব্লগ লেখা শুরু করে দিন। কোনও বিষয় নিয়ে নিজের অভিমত প্রকাশ করুন। নিজের পছন্দের কবিতা, গল্প ইত্যাদি লিখে ব্লগে পোস্ট করুন। সমালোচনা করুন। শেষ যে বইটা পড়লেন সেটা নিয়ে মতামত লিখুন। এতে নিজের ভাবনা চিন্তা প্রকাশের শক্তি ক্ষুরধার যেমন হবে, পাঠকদের ভালো লাগলে সাথে পরিচিতিও পেয়ে যেতে পারেন। সেই আনন্দ কোনও অংশে কম নয়।

রং-তুলি নিয়ে স্টাডিতে বসে পড়ুন। লেখালেখি, ছবি আঁকার মতো সৃজনশীল কাজের জন্য এটাই কিন্তু সঠিক সময়। গানের রেওয়াজ করুন।

 

) পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান

কাজকর্মের চাপে অনেকেই নিজের পরিবারের দিকে মন দিতে পারেন না। ফলে এক ছাদের নীচেও একটা দুরত্ব তৈরি হয় অনেক সময়ে। এই সময়টা কাজে লাগিয়ে পরিবারের সঙ্গে আড্ডা দিন। মন খুলে গল্প করুন। নিজেদের পুরনো দিনের গল্প করতে পারেন। হয়ত দেখবেন চেনা মানুষটার অনেক অজানা দিক জানতে পারলেন, যা এতদিন খেয়াল করারই সময় পাননি। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে সম্পর্ক সহজ ও সুন্দর রাখার এটা কিন্তু একটা সুযোগ। তাছাড়া পুরনো বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ফোনে বা ভিডিও কলে আড্ডা দিন। দেখবেন হু হু করে ভালো সময় কাটছে।

 

) বিনোদন

ছুটির মেজাজে বিনোদন একটা বড় জায়গা। তার মধ্যে ঘরবন্দি থাকলে যে বিনোদনগুলো খুঁজে নিতে পারেন, তার মধ্যে প্রথমেই আসে সিনেমা দেখা। টিভি, ল্যাপটপে জমিয়ে পছন্দের সিনেমা দেখে নিন। ‘নেটফ্লিক্স’, ‘অ্যামাজন প্রাইম’ এর মতো ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্ম অ্যাকসেস করে পুরনো থেকে নতুন, ক্লাসিক সিনেমা থেকে হালের ওয়েব সিরিজ দেখে নিতে পারেন। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি স্ক্রল, পোস্ট তো আছেই, তার সঙ্গে  পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে সিনেমা দেখুন। এখন দূরদর্শনে রামায়ণ, মহাভারতের মতো আট ও নয়ের দশকের হিট অনুষ্ঠানগুলির সম্প্রচার হচ্ছে। চোখ রাখতে পারেন দূরদর্শনের পর্দায়। এছাড়া সবাইকে নিয়ে করতে পারেন গানের আসরও।

 

) শরীরচর্চা

সময় কাটানো যেমন হবে তেমনি শরীর ও মন ভালো থাকতে এক্সারসাইজের জুড়ি নেই। প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম, যোগাভ্যাস করুন। শরীর-মন হালকা ও ভালো রাখার সেরা উপায় হল এক্সারসাইজ। প্রতিদিন সকাল, বিকেল টানা কিছুক্ষণ শরীর চর্চা করুন।

 

) গার্ডেনিং

বাগান করতে পারেন এই সময়ে। আর আগে থেকে থেকে থাকলে সেগুলির পরিচর্চা করে অনেকটা ভালো সময় কাটাতে পারেন। ঘরের ব্যালকনিতে টবে লাগানো গাছ অথবা বাড়ির বাগানে থাকা গাছের পরিচর্যা নিন নিজের হাতে। বইপত্র, নেট ঘেঁটে বাগান চর্চা, কোন গাছের জন্য কী সার লাগে, সেসব জেনে নিন।

 

) রান্না করুন

লকডাউনের কারণে বাড়ির বাইরে ভাজাভুজি, ফার্স্ট-ফুড খাওয়া বন্ধ। আর বাইরের কেনা খাবার খেয়ে দিন কাটানো এই ক’দিন হচ্ছে না। তাই অবসরে নিজে রান্নার হাতটা ঝালিয়ে নিন। পত্রপত্রিকা, ইউটিউব দেখে নতুন নতুন পদ রাঁধুন। বাড়ির লোকেদের চমকে দিন নতুন কিছু খাইয়ে। আর আপনার অফিসের তাড়াহুড়োর মধ্যে যাঁরা সময় মতো টেবিলে,  টিফিন বাক্সে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁদের বিশ্রাম দিয়ে ক’দিন না নিজেই রান্না করে তাঁদের খাওয়ান।

 

) টুকিটাকি কাজ

বাড়ির বাড়তি জিনিস, বোতল থেকে শুরু করে কার্ডবোর্ড, এসব কাজে লাগিয়ে ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করে ফেলতে পারেন। যাঁরা সেলাই ইত্যাদি হাতের কাজ জানেন, এই সময় চর্চা করুন। সময়ও কাটবে, বাড়িও সাজানো হবে।

 

১০) ভাবনাচিন্তা, ঘুম

Social Distancing মেনে চলা ক্লান্তিকর হলেও এর সবটাই যে খারাপ তা বলা যায় না। এই লকডাউনের মধ্যে প্রতিদিন বারান্দা বা ছাদে একা লম্বা কিছুটা সময় কাটান। নিজের মতো করে চিন্তা ভাবনা করুন, গান শুনুন। স্রেফ আরাম কেদারায় বসে অনেকটা সময় কাটিয়ে দিতে পারেন। প্রতিদিনের গতে বাঁধা রুটিন ছেড়ে একটু বাড়তি সময় ঘুমিয়ে নিতেই পারেন।

 

তবে এ সবের মধ্যে অবশ্যই যেটা মনে রাখা দরকার, কেন এই লকডাউন আর কী কারণে আমরা ঘরবন্দি। কোনও উৎসবের ছুটি নয়, দুনিয়াজুড়ে মহামারির জেরে বাধ্য হয়ে নিজেদের ভালোর জন্য আমরা ঘরবন্দি হয়েছি। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভাবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে চলুন এই ক’দিন। পরিবারে ছোটদের বিশেষ খেয়াল নিন। অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে পা রাখবেন না। বাজার গেলে যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলুন আর বানিয়ে নিন আপনার free time productive.

Comments are closed.