Lockdown: দিল্লিতে শ্রমিকদের দূরাবস্থার ছবি দেখে মনে হয়েছে ঠিক যেন দেশভাগের সময়, চোখে জল এসে যায়

এতদিনে সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এই কঠিন সময়টা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। এই মুহূর্তে এই করোনাভাইরাসকে ঠেকাতে সব চেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ হল বাড়িতে থাকা। আমাদের চারপাশের পৃথিবীটা হঠাৎ কেমন যেন বদলে গেল। তবে সব কিছুরই ভালো ও খারাপ দুটো দিকই রয়েছে। আর এর মধ্যেই নিজের জন্য ভালো দিকটা বেছে নিয়ে সময়টার উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে।
আমাদের জীবনে ইন্ট্রোস্পেকশন মাঝে মাঝে খুবই দরকার হয়ে পড়ে। এখন তারই সময়। প্রতিদিনের এই কর্মব্যস্ততার জীবনে আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া এমন অনেক ঘটনা থাকে, যেগুলোকে আমরা উপেক্ষা করে চলে যাই। এখন সময় সেই উপেক্ষা করা জিনিসগুলোকে একটু সময় দেওয়ার। এখনই সময় নিজেকে সময় দিয়ে আবার নতুন করে নিজেকে গড়ে তোলার।
আমি বই পড়তে খুব ভালবাসি। আমাদের পেশার তাগিদেও অনেক বই পড়তে হয়। এখন এই সময়টায় পড়াশোনার কাজটাই বেশি করছি। অন্যান্য সময়ে তো কাজের ব্যাস্ততার জন্য এতটা সময় পাওয়া যায় না। অনেক ফিল্মও বাকি থেকে গেছে দেখার। সেগুলিও এখন বাড়িতে বসে বসে দেখছি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটা সিনেমা দেখেছি। ফসি ভারডন ও সাক্সেশন দেখেছি হটস্টারে, এছাড়াও নেটফ্লিক্স-এ ফ্রয়েড ও অ্যামাজন প্রাইমে দিস ইজ নট আ ফিল্ম নামক একটি ডকুমেন্টারি দেখেছি। স্টেয়ারকেস আবার নতুন করে দেখলাম নেটফ্লিক্স-এ। এছাড়াও পুরনো কিছু ক্লাসিক সিনেমাও দেখছি।
আমি সার্দান অ্যাভেনিউয়ে থাকি। সারাদিন গাড়ির হর্নের আওয়াজে জেরবার হই। সেই তুলনায় এখন চারিদিকে নিস্তব্ধতা। আগে ভোর ৫টার পর আর পাখির ডাক শোনা যেত না। এখন দুপুরেও বারান্দায় এসে দাঁড়ালে তা শুনতে পাই।
নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে এখনও খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি আমাকে। আমার বাড়ি থেকে লেক মার্কেট কাছেই। আর আমি প্রায় রোজই বাজার করি। কিন্তু ভিড় এড়াবো বলেই ইদানিং সেদিকে পা বাড়াইনি। বাড়ির আশপাশে যে সমস্ত তরকারি বা ফলের দোকান রয়েছে, সেখান থকেই বাজার করে আপাতত চালাচ্ছি। অনেকে শুনছি অনেক জিনিসপত্র কিনে বাড়িতে বোঝাই করছেন। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হবে বলে তো মানে হচ্ছে না। মুদি দোকানের জিনিসগুলি কিছুদিন আগেই কিনেছিলাম। এখনও কয়েকদিনের মত জিনিস বাড়িতে রয়েছে। সেগুলি শেষ হয়ে গেলে আবার নতুন করে কিনতে হবে।
এখন সকাল ৬.৩০ নাগাদ ঘুম থেকে উঠছি। তবে সাধারণত আরও একটু আগেই উঠি। সকালে মর্নিং ওয়াক করার একটা পুরনো অভ্যাস রয়েছে। এখন তো সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই বাড়িতেই একটু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে নিচ্ছি। বাড়ির বাইরে বেরোচ্ছি না, আর কাজের চাপও খুব-একটা নেই। তাই খাওয়া দাওয়াও আগের তুলনায় এখন অনেক কম করছি।
আমার রোজ লেখার অভ্যাস রয়েছে। সেই কাজগুলি এখন পুরোদমে করছি। সকালে জলখাবারের পরই বই পড়তে বসছি, এবং তারপর কিছু লেখার কাজ করছি। মাঝে কিছুদিন খবরের কাগজ আসা বন্ধ ছিল। এখন অবশ্য আবার আসছে। এই মুহূর্তে অশোককুমার মুখোপাধ্যায়ের লেখা অবিরাম জ্বরের রূপকথা বইটা পড়েছি, এছাড়াও গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের পেয়ারার সুবাস সহ আরও অন্যান্য বই পড়া চলছে।
তবে একটাই এখন আতঙ্কের বিষয় রয়েছে। আমার এক মামা অসুস্থ তিনি সল্টলেকে থাকেন। এবং আমাদের সবারই বাড়িতে অল্প বিস্তর অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষজন রয়েছেন। তাঁরা যদি কোন কারণে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন কী হবে? কারণ, এখন চিকিৎসা ব্যবস্থার সব ফোকাস এই করোনার দিকেই চলে গেছে। তাই সেরকম যদি কিছু হয়, তখন কি আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যাবে? বাড়িতে কি কোনও ডাক্তারবাবু আসবেন? এই চিন্তাটাই আমার মনের মধ্যে বারবার আসছে।
তবে এই পরিস্থিতি সারা পৃথিবীর চোখ খুলে দেওয়ার কাজ করছে। রোগ কাউকেই রেয়াত করে না। তা তিনি যেই হোন না কেন। দিল্লিতে শ্রমিকদের দূরাবস্থার ছবি দেখেছি টিভিতে। আমার মনে হয়েছে ঠিক যেন দেশভাগের সময়কার ছবি। হাজার হাজার মানুষ যেভাবে তাঁদের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছেন, সেটা দেখে সত্যিই চোখে জল এসে যায়।
এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে এখনও কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তবে আশা করছি আমরা সবাই মিলে খুব তাড়াতাড়িই এই ভাইরাসকে হারিয়ে আবার নিজেদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারব।

(অনুলিখন: অভিজিৎ দাস)

Comments are closed.