অভিনয়ের প্রতি অদম্য আগ্রহই নিয়ে গিয়েছিল শৃঙ্গের চূড়ায়…, বাঙালির একমাত্র মহানায়ক উত্তম কুমার

“লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন” এর জীবনে কখনও বিরতি চাননি। যাঁর জীবনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, শেষ দিন পর্যন্ত নিজেকে অভিনয়ে নিমজ্জিত করে রাখা। সেই শুটিং-এর সেট, রুপোলি পর্দার হাতছানির প্রতিটা মায়া কাটিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন বাঙালির এক এবং একমাত্র মহানায়ক উত্তম কুমার। দিনটা ছিল ২৪ জুলাই, ১৯৮০।

সংসারে অভাব, নুন আনতে পান্তা ফুরায়… টাকা রোজগারের তাগিদে পড়াশোনা শেষ না করেই যোগ দিলেন কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টে ক্লার্কে। কাজের ফাঁকে নিজের থিয়েটার গ্রুপ “সুহৃদ সমাজ”-এর হয়ে নিয়মিত অভিনয় করা শুরু করলেন। থিয়েটার করতে করতেই একদিন ডাক পড়ল টলিপাড়ায়…। অডিশন দিলেন উত্তম কুমার, কিন্তু ভাগ্য সঙ্গ দিল না। ছবিতে কাজ করার সুযোগ হারালেন অভিনেতা। কাজ না পেলেও বন্ধুত্ব হল বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। এরপর তাঁর আনাগোনা শুরু হলো টলিপাড়ায়।

অভিনয়ের প্রতি অদম্য আগ্রহের দরুন যেকোনো চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হয়ে যেতেন উত্তম কুমার। ভিতরে ভিতরে অভিনয়ের এক চূড়ান্ত খিদে তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেত প্রতিনিয়ত। ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেলেও টানা ৫ বছর একের পর এক সিনেমা ফ্লপ করতে লাগলেন। এর পর টলিপাড়ায় তার নাম হল “ফ্লক মাস্টার জেনারেল”। একে একে পরিচালকরাও উত্তমকুমারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করলেন। পরিচালক থেকে শুরু করে প্রযোজক সকলের কটু-কথার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দমিয়ে ফেলেননি উত্তম কুমার। মহানায়ক হওয়ার স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও।

সালটা ১৯৫৩। “সাড়ে চুয়াত্তর”এর হাত ধরে টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে কামব্যাক করলেন উত্তম কুমার। এই ছবি থেকেই জন্ম নিল উত্তম-সুচিত্রার হিট জুটি। এরপর একে একে নিজের স্বপ্নে পথে হাঁটতে শুরু করলেন উত্তম কুমার। বাণিজ্যিক ছবির একমাত্র দিশারী হয়ে উঠলেন তিনি।

মহানায়ক উত্তম কুমারের কথা মাথায় রেখে “নায়ক” ছবিতে উত্তম কুমারকে দিয়ে মুখ্য অভিনয় করালেন সত্যজিৎ রায়। উত্তমের ১১০ তম ছবি “নায়ক”এর হাত ধরেই সাধারণের মহল থেকে বুদ্ধিজীবী মহল স্বীকৃতি পেলেন তিনি। হলিউড বিখ্যাত অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেলর উত্তম অভিনীত “নায়ক” দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে উত্তমের সঙ্গে দেখা করতেও চেয়েছিলেন।

নায়ক থেকে মহানায়ক হয়ে ওঠার জার্নিতে তিনি কেবল একজন অভিনেতা হয়ে কাজ করেননি। একজন প্রযোজক, পরিচালক, সংগীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবেও ইন্ডাস্ট্রিতে নাম কুড়িয়েছিলেন উত্তম কুমার। “এন্টনি ফিরিঙ্গি” ও “চিড়িয়াখানা”র মত ছবিতে অভিনয় করে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। টালিগঞ্জের স্টুডিওতে কত নায়ক এল গেল কিন্তু বাঙালির জীবনে “মহানায়ক” এর আসনে রয়ে গেলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা উত্তম কুমার।

Comments are closed.