‘সহজলভ্য’ তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, অথচ বিরোধীরা করলে ‘ব্যালেন্স’, ডেবরায় মমতার তোপে পুলিশ

তৃণমূল কর্মীরা অপরাধ করলেই দ্রুত এফআইআর নিচ্ছে পুলিশ। অথচ বিরোধী দলের কেউ একই অপরাধ করলে পদক্ষেপ হচ্ছে না। শাসক দলকে ধরা এখন সহজ সরল হয়ে গিয়েছে। ডেবরার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কোপে পুলিশ।

বুধবার ডেবরায় পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই থানার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মোট ৩০৬ টি অভিযোগ পেয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, তাঁর দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ উঠলে দ্রুত পদক্ষেপ করছে পুলিশ। কিন্তু বিরোধী দলের কেউ অপরাধ করলে তা ‘ব্যালান্স’ করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, পুলিশের কাজ ব্যালান্স করা নয়। ঘরের ছেলেকে মাথায় রাখতে হয়। অটো থেকে টোটো, যারা পতাকা লাগিয়ে গুন্ডামি করে বেরাচ্ছে, তাদের ধরা হয় না। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, বাংলা যেন বিকিয়ে না যায়, তা খেয়াল রাখতে হবে। তাঁর পরামর্শ পুলিশ সুপারদের কথা শুনে চলতে হবে অধস্তন পুলিশ কর্মীদের।

এদিন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েন ঝাড়গ্রাম থানার আইসিও। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ১ বছর আগে তাঁকে ঝাড়গ্রামে কাজ করতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ঝাড়গ্রামের আইন-শৃঙ্খলা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। কাজের চেয়ে অকাজ বেশি করছেন বলে আইসিকে ভর্ৎসনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাঁকরাইল, ঝাড়গ্রামের অবৈধ খনন কারবারে পুলিশ বা বিডিও রেড করার আগেই কীভাবে অপরাধীরা খবর পেয়ে যাচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মমতা। তাঁর নির্দেশ, এরপর পুলিশ বা বিডিওর রেড যেন চূড়ান্ত গোপনীয়তার সঙ্গে হয়।
রিপোর্ট হাতে নিয়ে এদিন মমতা বলেন, আজ রুটিন মিটিং নয়। এরপর তাঁর কাছে আসা নালিশের তালিকা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্নের মুখে পড়েন খড়গপুরের এক বিএলআরও অফিসার। মেদিনীপুর, খড়গপুরের খাস জমির সমীক্ষা করতে তিনি অন্য দলের কর্মীদের নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর কথায়, যাঁদের সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক করছেন না। পাশাপাশি, পশ্চিম মেদিনীপুরের রাস্তা নিয়ে মানুষের প্রচুর ক্ষোভ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এরপরেই পিডব্লিউডি-র চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে তিরস্কার করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, পিডব্লিউডির ঢিলেমির কারণেই ১ বছরের কাজ, ৩ বছরে শেষ হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি অভিযোগ, বালিখাদানগুলিতে কিছু সরকারি আধিকারিক দুর্নীতিতে যুক্ত। তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। পাশাপাশি এদিন ফের এনআরসি নিয়ে রাজ্যের মানুষকে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, বাংলায় এনআরসি হবে না। নিজের কোনও দরকারি নথি হারিয়ে গেলে দুশ্চিন্তা না করে এফআইআর করারও পরামর্শ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, রাজ্যে রেশন কার্ড সংশোধনের সময়সীমা বাড়ানোর কথা। ৫ ই নভেম্বর থেকে ৩০ শে নভেম্বর অবধি দ্বিতীয় দফায় রেশন কার্ড সংশোধনের কাজ হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এজন্য প্রয়োজন হলে সংশোধনের ক্যাম্পের সংখ্যাও বাড়ানোর নির্দেশ দেন মমতা।

Comments are closed.