নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ মমতা বললেন, একাই আন্দোলন চালিয়ে যাব

নয়া নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি-র বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি কাউকে পাশে চান না। একাই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ফের জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের ছাত্র-যুবদের এক কর্মশালায় তিনি এ কথা জানিয়ে বলেন, বিজেপি বুঝুক, আমরা কারও ক্রীতদাস নই, সবাই দেশের নাগরিক। এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার জন্য ছাত্রসমাজকে অভিনন্দন জানান। মমতা বলেন, আগামী দিনে নতুন নেতা উঠে আসবে এঁদের থেকেই।
এদিন মমতার ভাষণে বড় অংশ জুড়ে ছিল তাঁর সময়কার ছাত্র রাজনীতির কথা, বিরোধী ঐক্যের অভাবের কথা। তিনি বলেন, নোটবন্দির ঘোষণার আধ ঘণ্টার মধ্যেই এর প্রতিবাদ করেছিলাম। সব রাজনৈতিক দলকে নোটবন্দির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি কাছে যাওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু মাত্র আটটি বিরোধী দল তাতে সাড়া দিয়েছিল। এখন মোদী সরকারের নোটবন্দির সমালোচনা হয় সর্বস্তরে। কিন্তু সে সময় ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ করলে ফলাফল অন্যরকম হতে পারত বলে দাবি করেন তৃণমূল নেত্রী। একইরকম ভাবে অসমে এনআরসি কিংবা নয়া নাগরিকত্ব আইন, এনপিআরের বিরুদ্ধেও সম্মিলিত প্রতিবাদের প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন। মমতা বলেন, সব বিরোধী রাজনৈতিক দল এনপিআরের প্রতিবাদ করেও দিল্লির সরকারি বৈঠকে যোগ দেন। কেন দিল্লির বৈঠকে যোগ দেননি, তার কারণ ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গিয়ে কী হবে? বিরোধী মতকে গ্রহণ করা হয় না। তাই বৈঠকে যোগ দিয়ে কোনও রফাসূত্র বের হবে না বলে আমি জানতাম।
তিনি বলেন, যখন কোনও আইন ও নীতির প্রভাব গৃহস্থের রান্নাঘরে পড়ে, মহিলারা প্রতিবাদে সামিল হন, তখনই বোঝা যায়, নীতি ও আইনে কোনও ভুল রয়েছে। নোটবন্দির সময় আমার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে।
দেশজোড়া নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে যেভাবে পড়ুয়ারা আন্দোলন করছেন তাকে স্বাগত জানিয়ে মমতা বলেন, নেতা গাছ থেকে পড়ে না, আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নেতা তৈরি হয়। তাঁর অভিযোগ, ছাত্র রাজনীতি করার সময় একাধিকবার তাঁর উপর হামলা করেছে সিপিএম। বন্দুক, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাড়া করা হয়েছে, স্থানীয়দের সাহায্যে প্রাণ বাঁচিয়েছেন। সেই সিপিএমের ‘হার্মাদ’রা এখন বিজেপিতে গিয়ে ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে মত পোষণ করছে বলে কটাক্ষ মমতার। পাশাপাশি, পড়ুয়াদের প্রতি তাঁর বার্তা, ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী পড়ুয়াদের ‘রক্ত গরম’ থাকায় অনেক সময় আন্দোলন হিংসার রূপ নেওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু যুব সমাজকে দেশের সংস্কৃতি বাঁচাতে গঠনমূলক পথে আন্দোলন করার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন নাম না করে বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে আক্রমণ করে মমতা বলেন, কে চিঁড়ে খাবে, কে পোহা খাবে বিজেপি ঠিক করে দিতে পারে না। পোশাক, খাবার দেখে মানুষকে ভাগ করার পরিকল্পনা চলছে বলে নাম না করে প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেন মমতা। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে কারা হিংসা ছড়াচ্ছে তা পোশাক দেখে বোঝা যায়। বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় আবার চিঁড়ে খায় যারা তাদেরই বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দিয়েছেন।
এনপিআর, নাগরিক আইন নিয়ে কেন বিজেপিকে চায়ের দোকানে গিয়ে বোঝাতে হচ্ছে, তা নিয়েও কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পাল্টা ঘোষণা, পড়ুয়ারাও, দোকান ও বাড়ি-বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝান, এই নয়া আইনের অপকারিতা কী। বিজেপির ‘অভিনন্দন যাত্রা’ কে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, নিজেরাই আইন করে নিজেদের অভিনন্দন জানাতে বেরিয়ে পড়ছে। এটা বিজেপির বিসর্জন যাত্রা। তিনি জানান, সরস্বতী পুজোর পর থেকে নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি, এনপিআরের বিরুদ্ধে আরও জোরদার আন্দোলন হবে। এর জন্য একগুচ্ছ কর্মসূচির কথা জানান মমতা। পাশাপাশি, এয়ার ইন্ডিয়ার ১০০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি সহ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধর্মতলার ধরনামঞ্চ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন নেত্রী।

Comments are closed.