লোকসভার পর উত্তরবঙ্গে প্রথম প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশ-প্রশাসনের ওপর খড়্গহস্ত মুখ্যমন্ত্রী! মন্ত্রী-আমলাদের গ্রামে যাওয়ার নির্দেশ

উত্তরবঙ্গে লোকসভায় ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। লোকসভা ভোটের পর প্রথম উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়ি জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশ-প্রশাসন এবং দলীয় নেতৃত্বকে একহাত নিলেন মমতা ব্যানার্জি। বিভিন্ন স্তরে কাজের গাফিলতির অভিযোগ তুলে খড়্গহস্ত হলেন পুলিশ এবং প্রশাসনিক কর্তাদের ওপর। স্থানীয় মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনতে মন্ত্রী-জনপ্রতিনিধি-আমলাদের গ্রামে গ্রামে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির উত্তরকন্যায় অনুষ্ঠিত উত্তরবঙ্গের তিন জেলাকে নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠকের একেবারে শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীকে জিজ্ঞেস করেন, ভোটার লিস্টে নাম তুলতে গেলে কী কী নথি দরকার? কিন্তু সৌরভ চক্রবর্তীর উত্তরে সন্তুষ্ট না হওয়ায়, তাঁকে বসতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, কী কী কাগজ লাগে সেটা বলতে বলছি, ভাষণ দেওয়ার দরকার নেই। তুমি মিসলিড করছ। এরপরই তিনি চলে আসেন আইন-শৃঙ্খলা ইস্যুতে।
কেবলমাত্র সরকারি হিসেবই নয়, তাঁর কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে জমা পড়া অভিযোগের তালিকা সঙ্গে নিয়েই এদিন বৈঠকে বসেছিলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর কাছে শুধুমাত্র জলপাইগুড়ি জেলা থেকে ১৫৮ টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কী সংক্রান্ত অভিযোগ তা খোলসা না করলেও, বৈঠকেই মমতা ব্যানার্জি বলেন, এই অভিযোগের কথা প্রকাশ্যে বললে অনেকেই লজ্জা পাবেন। তবে আকারে ইঙ্গিতে তিনি বুঝিয়েছেন, কী সংক্রান্ত অভিযোগের পাহাড় জমেছে তাঁর কাছে। আলিপুরদুয়ার থেকে তাঁর কাছে ১৪৮ টি অভিযোগ জমা পড়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। একইভাবে কোচবিহার থেকেও তাঁর কাছে ২৪৭ টি অভিযোগ জমা পড়েছে। মমতার প্রশ্ন, কোচবিহারে কি পুলিশ কাজ করে না? যে অভিযোগগুলোর কথা তিনি উত্তরকন্যার বৈঠকে জানালেন, দ্রুত সেগুলো নিষ্পত্তির রিপোর্টও তলব করেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার এসপি, আইসিদের কাছে তাঁর নির্দেশ, বসে থেকে কাজ ফেলে রাখা যাবে না। এর জন্য দৌড়তে হবে।
পাশাপাশি, স্থানগতভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর কোচবিহারে যে একদল দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করছে, এদিন সেই অভিযোগও করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, একটি ধর্মীয় সংগঠন জেলায় জেলায় স্কুল খুলে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ করছে। সেখানে বাচ্চাদের ব্রেনওয়াশের কাজ চলছে বলেও এদিন সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। ডিজি বীরেন্দ্রকে তাঁর নির্দেশ, এই বৈঠক শেষ হওয়ার পরই পুলিশ কর্তাদের নিয়ে বৈঠকে বসুন।
এদিন তিন জেলার ব্যবসায়ী মহলের সঙ্গেও কথা বলেন মমতা ব্যানার্জি। নেপালের চা কীভাবে দার্জিলিং টি নামে বিক্রি হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ব্যবসায়ী সমিতিগুলোকে এমন কাজ দেখলেই প্রশাসনকে জানানোর আবেদনও রাখেন। এদিন ছাত্র সমাজের সঙ্গেও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সরকারি ইন্টার্নশিপ করার ব্যাপারেও মুখ্য সচিবকে পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন তিনি।
এদিন ফের একবার রাজ্যে এনআরসি হবে না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। অসমের পরিস্থিতি আলাদা করে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, মনে রাখবেন, নীতি প্রণয়নের ভার রাজ্যের হাতে। এখানে এনআরসি করার কোনও পরিকল্পনা নেই। ডিটেনশন ক্যাম্পের তো প্রশ্নই আসে না।
ভোটার লিস্ট থেকে মানুষের নাম বাদ যাওয়া নিয়েও নিজের ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে একজন মানুষের নামও ভোটার লিস্ট থেকে অন্যায়ভাবে বাদ না দেওয়া হয়। পাশাপাশি জনসংযোগ বাড়াতে দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের গ্রামে গ্রামে যাওয়ার নির্দেশও দেন মমতা ব্যানার্জি।

Comments are closed.