‘করোনা-লকডাউন-পরিযায়ী শ্রমিক, এর মধ্যেই আমপানে বিপর্যয়, ক্ষতিগ্রস্ত ৬ কোটি মানুষ’, ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ মুখ্যমন্ত্রীর

করোনা, লকডাউনের মধ্যেই পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে পৌঁছনোর কাজ চলছিল। তার মধ্যেই এসে পড়ল নজিরবিহীন প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমপান। গোটা রাজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৬ কোটি মানুষ। শুধুমাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেই ৭৩ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ১০ লক্ষ বাড়ি পুরো ভেঙে পড়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। আমার বিশ্বাস প্রশাসন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চ্যালেঞ্জ জয় করবে। আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর কাকদ্বীপে রিভিউ বৈঠকে এমনই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তাঁর কথায়, এই বিপর্যয় জাতীয় গন্ডি ছাপিয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি জানিয়ে দিলেন, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড়া হবে না।

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবে রাজ্যের একাধিক জেলা বিপর্যস্ত। কোথাও মাইলের পর মাইল ভেঙেছে নদী বাঁধ। আবার কোথাও ঝড়ের দাপটে শুয়ে পড়েছে লক্ষ লক্ষ কাঁচা বাড়ি। খাওয়ার জল নেই। বিদ্যুৎ পরিষেবাও ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, রাজ্য সরকারের তরফে সমস্ত সহায়তা করা হবে। এখন সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে মানুষের যাতে অসুবিধা কমানো যায় সেদিকে। সেজন্য প্রশাসনকে একগুচ্ছ নির্দেশ দেন মমতা। বার বার বলেন, মানুষকে ত্রাণ পেতে যেন অসুবিধার মুখে পড়তে না হয়। রেশন বিলি নিয়ে যেন কোনও অভিযোগ না ওঠে। ১০০ দিনের কাজে আরও বেশি মানুষকে নিয়োগ করতে হবে। দুর্গত এলাকায় মানুষের মধ্যে পরিশ্রুত পানীয় জল, পেট খারাপের ওষুধ, সাপে কামড়ানোর ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিলি করার নির্দেশ দেন। বাড়াতে বলেন কমিউনিটি কিচেনের সংখ্যা। পাশাপাশি বলেন, যে সমস্ত পড়ুয়াদের বই, ইউনিফর্ম, স্কুলের জুতো প্রভৃতি ঝড়ে নষ্ট হয়েছে, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এজন্য সরকারের তরফে প্যাকেজ দেওয়া হবে।

এদিন বিভিন্ন আধিকারিক এবং স্থানীয় বিধায়কদের কাছেও দাবি দাওয়ার কথা শোনেন মমতা। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বড় কোনও প্রকল্প হাতে নেওয়া যাবে না। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শেষ করতে হবে বাঁধ তৈরি, রাস্তা সংস্কার, বাড়ি মেরামতির কাজ। পাশাপাশি সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ ও সামগ্রিক সবুজায়নের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। উপস্থিত জনপ্রতিনিধি ও আমলাদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী সতর্কবাণী, এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নারী পাচার যেন মাথাচাড়া না দেয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখনও পর্যন্ত যা হিসেব পেয়েছি তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি পেরিয়ে যাবে। কিন্তু গত ৩ মাস ধরে রাজ্যের কোনও আয় নেই। মমতার কথায়, নো আর্নিং, অনলি বার্নিং। এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি পাই পয়সা হিসেব করে খরচ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কাকদ্বীপে রিভিউ বৈঠক শেষে আমপানে মৃতদের পরিবারের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন মমতা। পাশাপাশি জানান, আমপানে আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার পাশাপাশি ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যও করা হবে।

 

Comments are closed.