কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনের ৩ ঘণ্টা আগেই রাজ্যে প্রতিনিধি দল! মোদীকে চিঠি ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রীর, ‘কেন রাজ্য অন্ধকারে’, প্রশ্ন মমতার

করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রাজ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের আসা নিয়ে আরও তীব্র হল কেন্দ্র ও রাজ্য সংঘাত। ট্যুইটারে প্রধানমন্ত্রী মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ট্যাগ করে এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তারপর সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করলেন, ২০ এপ্রিল দুপুর ১ টা নাগাদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন করে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল আসার কথা জানান। এদিকে ফোনের অনেক আগেই, সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে সেই প্রতিনিধি দল কলকাতায় পৌঁছে যায়।
অথচ কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে এলে তাঁদের থাকা-খাওয়া, যাতায়াতের ব্যবস্থা রাজ্যই করে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাজ্যকে কার্যত অন্ধকারে রেখে তাঁরা বিএসএফ এবং এসএসবি-র সাহায্য নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করে লিখেছেন, এলাকা পরিদর্শনের আগে কেন্দ্রীয় দল রাজ্য সরকারের বক্তব্য শুনবে, এটাই প্রত্যাশিত ছিল। তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রের পর্যবেক্ষকেরা যাচ্ছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে মুখ্য সচিবকে ফোন করে এ কথা জানানোর ১৫ মিনিটের মধ্যে রাজ্যে পা দেয় দু’টি কেন্দ্রীয় দল। আর মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ফোন আসে আরও প্রায় তিন ঘণ্টা পরে!
প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো ওই চিঠিতে মমতা বলেছেন, আগে থেকে আলোচনা না করে এমন পদক্ষেপ সরকার পরিচালনার প্রতিষ্ঠিত রীতিনীতির বিরোধী।
তিনি আরও লেখেন, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় লকডাউন মানা হচ্ছে না বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তার কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। তিনি জানান,  কেন্দ্রের একটি দল দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কালিম্পংয়ে গিয়েছেন। কিন্তু কালিম্পংয়ে গত ২ এপ্রিল একটি সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। একইরকম জলপাইগুড়িতে শেষ করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে ৪ এপ্রিল এবং দার্জিলিংয়ে ১৬ এপ্রিল। তাই যে জেলাগুলিকে বেছে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র কল্পনার ভিত্তিতে, জানান মমতা। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তিনি এও জানান, কেন্দ্রের গাইডলাইন মেনে রাজ্যে লকডাউন চলছে। কেন্দ্রের বিভিন্ন মন্ত্রকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে রাজ্য প্রশাসন সক্রিয় ভাবেই লকডাউন কার্যকর করছে । তিনি জানান, ১৪ এপ্রিলের পর দেশজুড়ে দ্বিতীয় লকডাউন ঘোষণার আগেই রাজ্য থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছে তখন কেন্দ্রের এই একতরফা কাজ যে কাম্য নয় তা প্রধানমন্ত্রীও মানবেন বলে আশা করা যায়, চিঠিতে লেখেন মমতা।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, রাজনৈতিক কারণেই পরিকল্পিত ভাবে নিশানা করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে। দলের যুক্তি, গোটা দেশের ৩৭০টি জেলাকে ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ পর্যবেক্ষণের জন্য রাজ্যের যে-সাতটি জেলাকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে জলপাইগুড়ি ও কালিম্পঙে গত ১৪ দিন কোনও সংক্রমণ হয়নি বলে গত কালই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। লকডাউন না-মানা এবং পরিস্থিতির গভীরতা সম্পর্কে কেন্দ্রের ধারণা তথ্যনির্ভর নয় বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী এই চিঠিতে অভিযোগ করেছেন।

Comments are closed.