‘তৃণমূল-বিজেপি সমান বিপজ্জনক’, আলিমুদ্দিনের এই লাইন খারিজ করে ট্যুইট সেলিমের, রাজ্য কমিটিতে ঝড়ের পূর্বাভাস

‘রাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি দু’দলই সমান বিপজ্জনক, মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। দু’দলকেই হারাতে হবে’, টানা পাঁচ বছর ধরে এই স্লোগান দিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট আজ বাংলায় নজিরবিহীন বিপর্যয়ের মুখে। সর্বকালীন পতন হয়েছে সিপিএম সহ বামেদের ভোটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যে স্লোগান মানুষ প্রত্যাখান করেছে তার জন্য নেতৃত্ব কি দায় নেবেন? বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনের ফলের পর ৪ জুন, মঙ্গলবার সিপিএমের প্রথম রাজ্য কমিটির বৈঠকের আগে এই প্রশ্নে উত্তাল দল। সিপিএমের বহু নেতাই ঘনিষ্ঠ মহলে বলতে শুরু করেছেন, রাজনৈতিক লাইনটাই ভুল ছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের। দলের অন্দরে এই আলোচনার মধ্যেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এবং প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম।
৩১ শে মে ট্যুইট করে মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, সময় এসেছে বিজেপিকে রাজ্যে ‘প্রধান শত্রু’ বলে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার। এই ট্যুইটে সেলিম ব্যবহার করেছেন দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রর ব্রিগেডে ভাষণ দেওয়ার ছবি সম্বলিত একটি খবরকে। মূলত, সূর্যকান্ত মিশ্রর নেতৃত্বে দলের রাজ্য কমিটিই তৃণমূল এবং বিজেপিকে ‘সমান বিপজ্জনক’ হিসেবে তুলে ধরার রাজনৈতিক লাইন নিয়েছিল। লোকসভা ভোটে নজিরবিহীন বিপর্যয়ের পর দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম রাজ্য কমিটির মিটিংয়ের আগেই কেন এমন ট্যুইট করলেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে দলে। সিপিএমের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটকে বার্তা দেওয়ার জন্যই এই ট্যুইট করেছেন তিনি, যেখানে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলের রাজনৈতিক লাইন ভুল ছিল।

আবার সিপিএমের একাংশের বক্তব্য, সচেতনভাবেই এই ট্যুইট করেছেন মহম্মদ সেলিম। আসলে বাংলায় রাজনৈতিক লাইন বদল করতে চাইছে সিপিএম। এবং এটা পুরোটাই হচ্ছে পূর্ব পরিকল্পনামাফিক। তৃণমূলের সঙ্গে এঁটে ওঠা যাচ্ছে না বুঝেই নিজেদের ভোট বিজেপিতে শিফট করিয়ে রাজ্যে প্রধান শক্তি হিসেবে গেরুয়া শিবিরকে তুলে ধরা আলিমুদ্দিনের অনেকদিনের পরিকল্পনা। তারপর মুসলিম ভোটের ভরসায় বিজেপির মোকাবিলা করা এবং রাজ্যে বিরোধী পরিসরটা দখল করাই সিপিএমের আসল টার্গেট। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই লোকসভা ভোটের ফলের পর রাতারাতি বিজেপিকে ‘প্রধান শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরে ঘর গোছাতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। আর সেই কারণেই ভোটের ফলের পর প্রথম রাজ্য কমিটির বৈঠকের চারদিন আগেই দলের পলিটব্যুরো সদস্য এই ট্যুইট করে বকলমে জেলা নেতৃত্বকে এই বার্তা দিলেন, যাতে এই ‘পরিবর্তিত রাজনৈতিক লাইনে’র সূত্র ধরেই রাজ্য কমিটিতে আলোচনা হয়।
তবে মহম্মদ সেলিমের এই ট্যুইটের পরও সিপিএমের অন্দরের বিতর্ক যে পুরোপুরি প্রশমিত হয়েছে, তা কিন্তু নয়। ৪ জুন রাজ্য কমিটির মিটিংয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের শীর্ষ নেতৃত্বকে তুলোধনা করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন অনেক নেতাই। যদিও দলের অন্দরে বিরোধী স্বর অনেকদিন ধরেই আস্তে-আস্তে কমছে, তবুও তারই মধ্যে কেউ কেউ সরাসরি নেতৃত্ব বদলের দাবি তুলছেন। এমনকী সিপিএমের নেতৃত্ব বদলের দাবি মঙ্গলবারের রাজ্য কমিটির মিটিংয়েও উঠতে পারে বলে সূত্রের খবর। এই ক্ষব্ধ নেতাদের বক্তব্য, নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং ভুল রাজনৈতিক লাইনের জন্যই ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তোলা যাচ্ছে না, যার জন্য দাঁড় করানো যাচ্ছে না প্রায় বসে যাওয়া সংগঠনকেও।

Comments are closed.