‘মি টু’ মুভমেন্ট নিয়ে এবার মুখ খুললেন রাহুল গান্ধী। অভিযুক্ত পরিচালকদের সিনেমায় না অক্ষয় কুমার, আমির খানের

ক্রমে জোরালো হচ্ছে ভারতে ‘মি টু’ মুভমেন্ট। সোশ্যাল মিডিয়ায় যৌন হেনস্থা, কর্মস্থলে হওয়া অভব্য আচরণ নিয়ে মুখ খুলছেন মহিলারা। একে একে নাম উঠে আসছে, বিখ্যাত সাংবাদিক, অভিনেতা, গায়ক, রাজনীতিবিদদের। এবার মি টু মুভমেন্ট নিয়ে মুখ খুললেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। রাহুল জানিয়েছেন, মহিলাদের সাথে কী ব্যবহার করা উচিত তা শেখা উচিত সকলের। শুক্রবার এনিয়ে একটি ট্যুইট করেন রাহুল। সেখানে তিনি লেখেন, ‘সময় হয়েছে মহিলাদের সাথে কীভাবে সম্মানের সাথে কথা বলা, ব্যবহার করা উচিত তা শেখার।’ ভারতে মি টু মুভমেন্টকে সমর্থন জানিয়ে রাহুল বলেছে, পরিবর্তন আনার জন্য সত্যি সর্বদা জোর গলায় বলা উচিত। কংগ্রেসের তরফে ইতিমধ্যেই যৌন হেনস্থার দায়ে অভিযুক্ত বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরকে ইস্তফা দাবি করা হয়েছে।
শুক্রবার নাইজেরিয়া থেকে দেশে ফিরছেন এম জে আকবর। এর পরই তাঁর কাছে ইস্তফাপত্র চাওয়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর। তাঁকে বলা হতে পারে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে মন্ত্রিসভায় ফিরে আসতে। এম জে আকবরকে ইতিমধ্যেই মুখ খোলার পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ও মানেকা গান্ধী।
এদিকে ‘মি টু’ মুভমেন্টের মাধ্যমে উঠে আসা হেনস্থার অভিযোগ প্রসঙ্গে বিশেষ তদন্ত কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী মানেকা গান্ধী জানিয়েছেন, যে অভিযোগগুলি উঠে আসছে, সেগুলি খতিয়ে দেখার জন্য ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য ৪ সদস্যের বিশেষ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিটিতে থাকবেন বরিষ্ঠ আইনজীবী ও প্রাক্তন বিচারপতিরা। বিশেষ এই কমিটি সব দিক খতিয়ে দেখে কী কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে কেন্দ্রকে পরামর্শ দেবে। এই বিষয়ে নির্দিষ্ট একটি ফ্রেমওয়ার্ক গঠনের বিষয়েও চিন্তা ভাবনা চলছে বলে মানেকা এদিন জানান। মানেকা জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে ঘটনাগুলি সামনে আসছে তার পিছনে যথেষ্ট ভয় ও যন্ত্রণার ইতিহাস আছে, এসব ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হবে। মানেকার মতে, ১০-১৫ বছর পরও এই ধরনের অভিযোগ করা যায়, তাতে ঘটনার সত্যতা বা অপরাধ লঘু হয়ে যায় না।
এদিকে, শুক্রবার একটি ট্যুইটের মাধ্যমে অভিনেতা অক্ষয় কুমার জানিয়েছেন, তাঁর পরবর্তী ছবি ‘হাউসফুল ৪’ এর শ্যুটিং তিনি আপতত বন্ধ রাখছেন, কারণ কোনও অভিযুক্তের সাথে তিনি কাজ করবেন না। উল্লেখ্য, ছবিটির পরিচালক সাজিদ খানের বিরুদ্ধে দুই অভিনেত্রী ও এক সাংবাদিক যৌন হেনস্থা ও অভব্য আচরণের অভিযোগ এনেছেন সম্প্রতি। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাজিদও জানিয়েছেন, নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তিনিও ছবির কাজ বন্ধ রাখতে চান। এই ছবির আর এক অভিনেতা নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে আগেই যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত। জানিয়েছেন ১০ বছর আগে একটি ছবির সেটে তাঁকে হেনস্থা করেন নানা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নানা পাটেকর। তনুশ্রী ও নানা দু’জনেই পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। বস্তুত তনুশ্রীর এই অভিযোগের পর থেকেই ভারতে ‘মি টু’ মুভমেন্ট শুরু হয়েছে। একে একে মুখ খুলছেন নানা পেশার মহিলা।
সম্প্রতি একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে বর্ষীয়ান পরিচালক সুভাষ ঘাইয়ের বিরুদ্ধেও। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে তিনি ওই মহিলার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবেন। ‘মি টু’কে একটি ফ্যাশন বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। গায়িকা সোনা মহাপাত্র অভিযোগ এনেছেন গায়ক কৈলাশ খের ও সুরকার অনু মলিকের বিরুদ্ধে। এর আগে অভিযোগ উঠেছে অভিনেতা অলোকনাথ, পরিচালক বিকাশ বাহেলের বিরুদ্ধেও। ঘটনার প্রেক্ষিতে আমির খান জানিয়েছেন, কোনও অভিযুক্তের সাথে তিনিও আর কাজ করবেন না। অমিতাভ বচ্চন পুরো বিষয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি ইন্টারভিউয়ে বলেছেন, কোনও মহিলার সাথে কোনও অবস্থাতেই অভব্য আচরণ হওয়া উচিত না। কর্মস্থলে এই আচরণ একেবারেই কাম্য নয়। উপযুক্ত আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এরকম অভিযোগের।

Comments are closed.