গবেষণা হতে হবে জাতীয় স্বার্থেই, মোদী সরকারের নয়া ফরমানের বিরোধিতা করে ইস্তফা কেরলের অধ্যাপকের

গবেষণার বিষয়বস্তু হতে হবে জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তবেই গবেষণার সুযোগ পাবেন কোনও পিএইচডি পড়ুয়া। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য এমনই নির্দেশিকা জারি করেছে মোদী সরকার। তীব্র সমালোচনায় শিক্ষামহল।

গত ১৩ মার্চ কেরলের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মর্মে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়। যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান ও ডিনদের উদ্দেশে বলা হয়, জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ের একটি খসড়া তৈরি করতে। সেই তালিকার বাইরে গবেষণা করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয় ওই নির্দেশিকায়।
কেন্দ্রের এমন নির্দেশিকার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও তুলনামূলক সাহিত্যের বোর্ড অব স্টাডিজ থেকে ইস্তফা দেন মিনা টি পিল্লাই। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, নয়া নির্দেশিকায় তিনি বিস্মিত! মিনা টি পিল্লাই বলেন, কে নির্ধারণ করবেন কোনটা জাতীয় স্বার্থের সম্পর্কযুক্ত আর কোনটা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী? আর কেনই বা এইরকম নির্দেশিকা মানতে বাধ্য হবেন গবেষণারত পড়ুয়ারা? মিনা দেবী আরও বলেন, হয়তো তাঁর পদত্যাগের কোনও প্রভাব পড়বে না। কিন্তু কেন্দ্রের এই নির্দেশিকার প্রতিবাদে এটাই তিনি করতে পারতেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই নির্দেশিকাকে কটাক্ষ করে রবিবার কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন। পোস্টে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে রাহুল লেখেন, ‘এখন সেলফ অ্যাটেস্টেড জ্ঞানী মন্ত্রী (প্রকাশ জাভড়েকর) ও বিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী, দেশের বুদ্ধিজীবীদেরও বলে দেবেন তাঁদের কেমন কাজ করা উচিত!’ ‘অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী’ বলে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে কটাক্ষও করেন রাহুল। কেরলের কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরও ট্যুইটারে কেন্দ্রের এই নির্দেশিকার বিরোধিতা করেন। সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে কেরলের অধ্যাপকের পাশে দাঁড়ান তিনি।
দেশে গবেষণার মানোন্নয়নে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সবকটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি ও কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের একটি বৈঠক হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, আগামী দিনে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে বিষয় নিয়েই গবেষণা হোক না কেন, তার সঙ্গে জাতীয় স্বার্থের সম্পর্ক থাকা বাধ্যতামূলক। মোদী সরকারের এই নির্দেশের ভিত্তিতে গত ১৩ ই মার্চ নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। কেন্দ্রের এই নির্দেশিকাকে শিক্ষাক্ষেত্রে অযাচিত হস্তক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন শিক্ষক ও পড়ুয়ারা।

Comments are closed.