জানেন কি, এ বছর অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী আরেক অর্থনীতিবিদ মাইকেল ক্রেমারের ভারত যোগ?

এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় তো বটেই, এস্থার ডুফলোরও ভারত যোগ বেশ পুরনো। এখানেই পড়ে থেকে বছরের পর বছর ধরে দারিদ্র নিয়ে গবেষণা করেছেন তাঁরা। কিন্তু জানেন কি, হার্ভার্ডের অর্থনীতির স্বনামধন্য অধ্যাপক মাইকেল ক্রেমারের সঙ্গে ভারতের নিবিড় সম্পর্কের কথা?
ভারতীয় কফিকে বিশ্বমানের করে তুলতে পরিকাঠামোগত সংস্কারের প্রাণ পুরুষের নাম মাইকেল ক্রেমার। ভারতে কফির উৎপাদন এবং বিপণনের ভার কফি বোর্ডের হাতে। সেই কফি বোর্ডের সঙ্গেই গভীর সম্পর্ক সদ্য অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর।
প্রিসিশন এগ্রিকালচার ডেভলপমেন্ট বা প্যাড এমন একটি সংস্থা, যারা ভারতের কৃষি ব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা চালায়। এই সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ক্রেমার। প্যাড ভারতীয় কফি বোর্ডকে পরামর্শ দিয়েছিল, কফি চাষিদের সঙ্গে আরও বেশি যোগাযোগ স্থাপনে প্রয়োজন একটি বিশেষ ব্যবস্থার। কিন্তু কী সেই বিশেষ ব্যবস্থা?
কর্ণাটকের কফি চাষিদের সাহায্য করতে বিনামূল্যে মিসড কল পরিষেবা দেওয়া শুরু করে কফি বোর্ড। অর্থাৎ, কফি চাষ সংক্রান্ত যে কোনও তথ্য জানাতে কিংবা এই সংক্রান্ত কোনও সমস্যায় পড়লেই, সংশ্লিষ্ট কফি চাষি নিজের রেজিস্টার্ড ফোন নম্বর থেকে মিসড কল দেবেন। সঙ্গে সঙ্গে সেন্ট্রাল কফি রিসার্চ ইন্সস্টিটিউট থেকে ফিরতি কল যাবে ওই চাষির ফোনে। সমস্যার কথা জেনে হাতে গরম পরামর্শ দেবেন রিসার্চ ইন্সস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।
এহেন মাইকেল ক্রেমারের নোবেল প্রাপ্তির খবর শুনে উচ্ছ্বসিত কফি বোর্ডের সিইও শ্রীবৎস কৃষ্ণা বলছেন, মাইকেল ক্রেমারের যোগ্য নেতৃত্বে আজও কফি বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে কাজ করে চলেছে প্যাড। এতে ভারতে কফির উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি গবেষণা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সরাসরি চাষিদের যোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কৃষ্ণার কথায়, এই পরিবর্তন যুগান্তকারী। বছর খানেক আগে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে ইতিমধ্যেই কর্ণাটকের প্রায় ১৫ হাজার কফি চাষি নাম নথিভুক্ত করেছেন। ভবিষ্যতে সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
কফি কৃষি তরঙ্গ নামে এই পরিষেবা প্রদানকারী প্রকল্পের আওতায় থাকা কফি চাষিরা সপ্তাহিক নির্দেশিকা পান এছাড়াও স্থানীয় বাজারে কফির দাম সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যও তাঁদের কাছে চলে আসে বিনামূল্যে। পাশাপাশি, কোনও সমস্যায় পড়লে, তার সমাধান বাতলে দেওয়া তো আছেই। এর ফলে কফি চাষিদের উৎপাদন যেমন বেড়েছে, একইসঙ্গে পরিবেশগত বিভিন্ন দিকেও চাষিদের ওয়াকিবহাল করা হয়েছে। তার ফলও মিলছে হাতে হাতে। এমনটাই জানাচ্ছেন সিইও কৃষ্ণা। কফি বোর্ড সূত্রের খবর, আগামী দিনে হেল্পলাইনের আওতায় অন্তত ৫০ হাজার কফি চাষিকে আনার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তাঁরা।
২০১১ সালে ভারতের মাটিতে প্যাডের যাত্রা শুরু হয় গুজরাত থেকে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যের তুলো চাষিদের জন্য একই ধরণের মিসড কল পরিষেবা শুরু করতে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছিল কৃষি তরঙ্গ। মাইকেল ক্রেমারের প্যাড গুজরাতের মাটিতে সেই কাজ করেছে। তারপর একই পরিষেবা দেওয়া শুরু হয় কর্ণাটকের কফি চাষিদের। সেখানেও পুরোভাগে ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মাইকেল ক্রেমার।

Comments are closed.