‘মি টু’ মুভমেন্ট অব্যাহত, যৌন হেনস্থার অভিযোগ এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম জে আকবর ও অলোক নাথের বিরুদ্ধে

ঠিক যেন প্যান্ডোরা বক্স। সেই বাক্স খোলা হচ্ছে, আর তা থেকে একে একে উঠে আসছে চমকে যাওয়া সব অভিযোগ ও একাধিক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের নাম। সপ্তাহ দুয়েক আগে অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলে জানিয়েছিলেন, ২০০৮ সালে একটি ছবির সেটে তাঁকে যৌন হেনস্থা করেন নানা। সেই শুরু। তনুশ্রীর দেখানো পথে মুখ খোলার সাহস সঞ্চয় করে তারপর থেকেই প্রকাশ্যে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়া নিজেদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া যৌন হেনস্থা, অপমান নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভারতের মহিলারা। মার্কিন মুলুকের ‘মি টু’ মুভমেন্টের ধাঁচে ট্যুইটারের মাধ্যমে সম্প্রতি ভারতেও একই আন্দোলন শুরু হয়েছে। অভিযোগকারিণীদের বেশিরভাগই সাংবাদিক। এবার সেই অভিযোগের তালিকায় নতুন সংযোজন দেশের বিদেশ রাষ্ট্রমন্ত্রী এম জে আকবর ও বর্ষীয়ান অভিনেতা অলোক নাথ।
‘মি টু’ বিতর্কের আঁচ এবার পড়ল মোদী মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের গায়ে। প্রাক্তন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও বর্তমানে দেশের বিদেশ রাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে থাকা এম জে আকবরের বিরুদ্ধে অসভ্য আচরণের অভিযোগ এনেছেন প্রিয়া রামানি নামে এক সাংবাদিক। তাঁর অভিযোগ, ১৯৯৪ সালে মুম্বইয়ের একটি হোটেলে ইন্টারভিউয়ের নামে ডেকে তাঁর সাথে অভব্য আচরণ করেন এম জে আকবর। মহিলার অভিযোগ, সে সময় তাঁর বয়স ছিল ২৩ আর আকবরের ৪৩। লবির বদলে ওই মহিলা সাংবাদিককে হোটেলের রুমে যেতে বলেন আকবর। সেখানে মহিলাকে মদ্যপানের প্রস্তাব দেন আকবর। প্রিয়ার অভিযোগ, তিনি মদ খেতে অস্বীকার করলে আকবর গুণগুণিয়ে পুরনো দিনের গান গাইতে শুরু করেন ও তাঁকে পাশে গিয়ে বসতে বলেন। তবে প্রিয়া যে এই প্রথম মুখ খুললেন তা নয়। গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘মি টু’ মুভমেন্ট চলাকালীন বিখ্যাত ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘ভোগ’এ একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন প্রিয়া। সেখানেও এই ঘটনার বিবরণ দিয়ে, অভিযুক্তকে ‘নিজের বস’ বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। কিন্তু কারোওর নাম তখন তিনি নেননি। নাম নিয়ে বোমা ফাটালেন এবার। প্রিয়ার পাশাপাশি আর এক সাংবাদিকও অসভ্যতার অভিযোগ এনেছেন এম জে আকবরের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার এম জে আকবরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কীনা বা একজন মহিলা হিসাবে তিনি বিষয়টি কেমনভাবে দেখছেন, এই প্রশ্ন করা হলে কিছু বলতে চাননি বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তবে এরই মাঝে বিতর্ক আরও বাড়িয়েছেন বিজেপি সাংসদ উদিত রাজ। ভারতে এই ‘মি টু’ মুভমেন্টকে ‘ভুল পদক্ষেপ’ বলে আখ্যা দিয়ে তাঁর দাবি, মেয়েরা সাধারণত দু’-চার লাখ টাকার জন্য পুরুষদের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ এনেই থাকে।
এম জে আকবরের পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে হিন্দি সিরিয়াল ও সিনেমা জগতের বর্ষীয়ান অভিনেতা অলোক নাথের বিরুদ্ধেও। মঙ্গলবার এক মহিলা সিনে জগতে ‘সংস্কারি বাবা’ বলে পরিচিত অলোকনাথের বিরুদ্ধে সরাসরি ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। খুব শীঘ্রই তিনি বিষয়টি পুলিশে জানাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। ফেসবুকে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন এই মহিলা। যা রীতিমতো ভয়ানক। ১৯ বছর আগে তাঁর সাথে হওয়া ঘটনার বিবরণ দিয়ে মহিলার অভিযোগ, শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি মাঝের এই প্রায় ২০ বছর তাঁকে মানসিক যন্ত্রণা ও ডিপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। তাই আজ আর তাঁর কোনও কিছুতেই ভয় নেই, তাই সামনে আনলেন এই অভিযোগ। মহিলার এই অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অলোক নাথ জানিয়েছেন, তিনি এই অভিযোগ অস্বীকারও করছেন, না আবার স্বীকারও করছেন না। মহিলা জানিয়েছেন, ভয় পেয়ে এই ধরনের মন্তব্য করছেন আলোক। অলোকের বিরুদ্ধে এরপর একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেক মহিলাই।

Comments are closed.