লকডাউনের বাজারে মহার্ঘ্য হচ্ছে মোবাইল ফোন, দাম বাড়বে আরও?

কয়েকদিন আগেই মোবাইল ফোনের উপর GST ১২ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জিএসটি কাউন্সিল। তারপর অতিমারি করোনাভারাসের জেরে বহির্বিশ্বের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য একপ্রকার বন্ধ ভারতের। চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দু’দেশ থেকেই রফতানি কমে এসেছে। এর ফলে সাধারণ মোবাইল থেকে স্মার্ট ফোন, সবেরই দাম ঊর্ধ্বমুখী।

 

করোনার জের মোবাইল বাজারে (Covid-19 on Mobile Phone Market)

করোনা ভাইরাসের জেরে চিন থেকে মোবাইল ফোন তৈরির কাঁচামাল আমদানি একপ্রকার বন্ধ। তার উপর ১২ শতাংশ জিএসটি বেড়ে এখন হয়েছে ১৮ শতাংশ। মোবাইল ফোন নির্মাতা সংস্থাগুলি যখন কাঁচামালের উপর থেকে কর কমানোর দাবি জানিয়েছিলেন, সেই দাবি অগ্রাহ্য করেছে জিএসটি কাউন্সিল। এর ফলে জুন মাসে শেষ হতে চলা ত্রৈমাসিকে মোবাইল ফোন বিক্রি ৮ থেকে ১৫ শতাংশ কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

স্মার্টফোনের মূল্যবৃদ্ধি (Price hike of Smartphones)

করোনাভাইরাস মহামারির জেরে বিশ্বজুড়ে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেদের পরিকল্পনায় বড়সড় বদল আনতে চলেছে স্মার্টফোন সংস্থাগুলি। এতদিন ছিল, কে কত সস্তায় স্মার্টফোন তুলে দিতে পারে মানুষের হাতে। সেই দৌড়ে সামিল ছিল ছোট, বড় প্রায় সব মোবাইল নির্মাতাই। কিন্তু ব্যবসায়িক মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস। COVID-19 এর সংক্রমণ রুখতে দেশে দেশে চলছে লকডাউন, বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য থেকে ইলেকট্রনিক দ্রব্যের উৎপাদন একপ্রকার বন্ধ। এই পরিস্থিতিতে স্মার্টফোনের দাম বাড়ছে।

 

Xiaomi ফোনের দাম বাড়ছে

জল্পনার শুরু ভারতে Xiaomi এর মার্কেটিং হেড অনুজ শর্মার একটি ট্যুইট থেকে। সম্প্রতি ট্যুইটারে তিনি লেখেন ‘সত্যি বলতে, এক্সচেঞ্জ রেট, বাড়তে থাকা GST এবং সহযোগী সংস্থার দামের কারণে সস্তার ফ্ল্যাগশিপ ফোনের দিন এখন অতীত। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে পরিকল্পনায় পরিবর্তন জরুরি।’

উল্লেখ্য ভারতে চিনা মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির ফ্ল্যাগশিপ প্রোডাক্টের দাম গড়ে সর্বোচ্চ 30 হাজার টাকা হয়। যা Samsung বা Apple-এর মতো ব্র্যান্ডের ফোনগুলির তুলনায় অনেকটাই কম। উদাহরণ হিসেবে, Xiaomi-র K20 Pro-র কথা বলা যায়। মাত্র 26,999 টাকায় আধুনিক সব প্রযুক্তির সুবিধা পাওয়া যায় এই স্মার্টফোনে। তবে ভবিষ্যতে এই সুযোগ হয়ত পাবেন না গ্রাহকরা। এমনই ইঙ্গিত Xiaomi কর্তার।

ইতিমধ্যে নিজেদের হ্যান্ডসেট প্রতি দাম এক হাজার টাকা করে দাম বাড়িয়েছে Xiaomi। একইভাবে দাম বাড়িয়েছে Apple ও Samsung এর মতো সংস্থাও।

 

দাম বাড়ছে Oppo ফোনের

Mobile Phone Online Market

 

স্মার্টফোনের বাজারে আরও একটি বহুল প্রচলিত ব্র‍্যান্ড অপো। এই চিনা স্মার্টফোন কোম্পানি A1K থেকে রেনো ৩প্রো, মোট ১৬ টি স্মার্টফোন ভ্যারিয়েন্টের দাম বাড়িয়েছে। অপো ফোনের বিভিন্ন মডেলের দাম সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। দাম বাড়ার পিছনে যেমন জিএসটি একটি কারণ, পাশাপাশি রয়েছে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি।

মুম্বইয়ের মহেশ টেলিকম থেকে কিছুদিন আগে ট্যুইট করে জানানো হয় ১ এপ্রিল থেকে এই ফোনগুলির নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। ভিভো সংস্থাও তাদের ফোনের দাম বাড়িয়েছে বলে খবর।

 

অ্যাপেল, স্যামসাং ফোনের দাম বেড়েছে

আইফোন ১১ প্রো ম্যাক্সের (৬৪ জিবি) দাম ছিল ১ লক্ষ ১১ হাজার ২০০ টাকা। নতুন দাম হল ১ লক্ষ ১৭ হাজার ১০০ টাকা। আইফোন ১১ প্রো (৬৪ জিবি)-র দাম ১ লক্ষ ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বেড়ে হল ১ লক্ষ ৬ হাজার ৬০০ টাকা। আইফোন ১১ (৬৪ জিবি) দাম ছিল ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা। তার দাম বেড়ে হয়েছে ৬৮ হাজার ৩০০ টাকা। আইফোন এক্স আর (৬৪ জিবি) মডেলের দাম ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে হল ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। আইফোন সেভেনের দাম ছিল ২৯ হাজার ৯৯০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৩১ হাজার ৫০০ টাকা।

এদিকে কয়েক হাজার টাকা মূল্য বেড়ে স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ২০-র নতুন দাম হয়েছে ৭০ হাজার ৫০০ টাকা। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ২০ প্লাস মডেল টির দাম বেড়ে হল ৭৭ হাজার ৯০০ টাকা। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ২০ আলট্রার দাম এখন ৯৭ হাজার ৯০০ টাকা।

যে কোনও মোবাইল কোম্পানির ওয়েবসাইটে গেলে এখন দেখতে পাওয়া যাচ্ছে কোন মডেলের দাম কতটা বেড়েছে। শাওমি, ভিভো, ওপো, স্যামসাং ইত্যাদি সংস্থা ইতিমধ্যেই তা ঘোষণা করে দিয়েছে। এমন সময়ে এই দাম বাড়ল যখন খুচরো বাজারে ফোন বিক্রিই হচ্ছে না। লকডাউনে বন্ধ দোকানপাট, শুধু অনলাইনেই পাওয়া যাচ্ছে মোবাইল ফোন। তাও কয়েকটি সংস্থা পরিষেবা চালু রখেছে বলে বিক্রিবাটা হচ্ছে।

 

অনলাইনেও ফোনের জন্য বাড়তি কড়ি (Mobile Phone Online Market)

ফ্লিপকার্টে বেশ কিছু মোবাইল ফোন দাম বাড়ার বিষয়টি চোখে পড়েছে। ৬ জিবি র‍্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজ যুক্ত poco x2 ফোনের দাম যেখানে আগে ১৬,৯৯৯ ছিল সেখানে দাম বেড়ে হয়েছে ১৭,৯৯৯ টাকা। এছাড়া redmi k20, k20 pro ফোনের দাম ২ হাজার টাকা বেড়েছে।

সব মিলিয়ে করোনার দাপটে রাতারাতি বড় পরিবর্তন এসেছে মোবাইল ফোনের বাজারে। তাতে ক্রেতাদের পকেটে যে আরও একটু টান পড়ল তা বলাই যায়।

Comments are closed.