সুপ্রিম কোর্টের ওপর ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে কংগ্রেস রাম মন্দির শুনানি পিছোতে চাইছে, অযোধ্যা ইস্যুতে মুখ খুললেন মোদী

অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির চাপ ও রবিবার রাম মন্দির নির্মাণের দাবিতে অযোধ্যায় ভিএইচপির ধর্মসভা ও শিবসেনার পৃথক র‍্যালির মাঝেই গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবং কেন্দ্রের ওপর ক্রমাগত বাড়তে থাকা চাপ কাটাতে গোটা বিষয়টিতে তিনি কাঠগড়ায় তুললেন কংগ্রেসকে। পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের কোর্টেও বল ঠেলে বিচার ব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করলেন।
রবিবার রাজস্থানে এক নির্বাচনী জনসভায় মোদী বলেন, কংগ্রেস চায় না ২০১৯ এর সাধারণ নির্বাচনের আগে অযোধ্যা জমি মামলার ও রাম মন্দির ইস্যুর কোনও সমাধান হোক। মোদীর অভিযোগ, এই জন্য বিরোধী কংগ্রেস দেশের বিচারব্যবস্থার মধ্যেই একরকম ভয়ের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। মোদীর ইঙ্গিত, বকলমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের চাপ দিয়ে এই মামলার শুনানি পিছোতে চায় কংগ্রেস, প্রয়োজনে তারা প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবও আনতে পারে। দেশের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আনা ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবের কথাও এপ্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন মোদী।
রবিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করতেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। তবে কি অযোধ্যায় রাম মন্দির গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসা বিজেপি, ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের আগে মন্দির নিয়ে বিচারাধীন মামলা শেষ হওয়ার কোনও সম্ভবনা নেই বুঝতে পেরেই, নিজেদের উপর থেকে দায় এড়াতে চাইছে। মনে করা হচ্ছে, গোটা বিষয়ে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে টেনে এনে মোদী বকলমে সুপ্রিম কোর্টের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছেন মামলার দ্রুত শুনানির জন্য। আর কংগ্রেসকে রাম মন্দির বিরোধী প্রমাণ করে ভোটের আগে হিন্দু ভাবাবেগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক অটুট রাখার নকশা তৈরি করতে চাইছেন মোদী। কারণ, গত অক্টোবর মাসেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানিয়ে দিয়েছেন, রাম মন্দির ইস্যু ও অযোধ্যার বিতর্কিত রাম জন্মভূমি নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে চায় না কোর্ট। তাই আগামী জানুয়ারি মাসেই ঠিক করা হবে কোন বেঞ্চ, কবে থেকে এই মামলার শুনানি ফের শুরু করবে।
কোর্টের এই সিদ্ধান্ত সামনে আসার পরই কেন্দ্রের মোদী সরকারের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করেছে আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ একাধিক হিন্দু সংগঠন। তাদের দাবি, প্রয়োজনে কোর্টকে এড়িয়ে নয়া আইন এনে অযোধ্যার বিতর্কিত জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে দ্রুত রাম মন্দির গড়ার পথ প্রশস্থ করুক সরকার। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের আগেই এই কাজ হোক, চায় হিন্দু সংগঠনগুলি। এই মর্মে সরকারের উপর চাপ বাড়াতেই রবিবার অযোধ্যায় এক ধর্ম মহাসভার আয়োজন করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তাদের মূল স্লোগান, যত দ্রুত সম্ভব অযোধ্যার রাম জন্মভুমিতে রাম মন্দির গড়ে তুলতে হবে। ভিএইচপির দাবি, তাদের এদিনের সভায় ৩ লক্ষেরও বেশি মানুষের সমাবেশ হয়েছে। ভিএইচপির পাশাপাশি এদিন একই দাবিতে অযোধ্যায় পৃথক র‍্যালি করেছেন শিব সেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে। কেন্দ্রের মোদী সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করে শিবসেনা প্রধান এদিন বলেছেন, ভোটে জেতার আগে বিজেপি রাম রাম করেছে, আর ক্ষমতায় এসে এখন তারা আরাম করছে। বিজেপিকে তাঁর স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, রাম মন্দির নির্মাণের কাজ দ্রুত শুরু না হলে পরের নির্বাচনে বিজেপি আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। তাঁর কথায়, সরকার পরে, আগে রাম মন্দির। রাম মন্দির ইস্যুতে বিজেপির পালের হাওয়া কাড়তেই একদা পদ্ম শিবিরের অন্যতম সহযোগী শিবসেনা রাম মন্দির ইস্যুতে এভাবে তেড়েফুঁড়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও শিবসেনাকে এর পালটা জবাব দিয়েছে বিজেপি। উত্তর প্রদেশের বালিয়ার বিজেপি বিধায়ক সুরেন্দ্র সিংহ এদিন বলেছেন, শিব সেনা মানবিকতা ভুলে মহারাষ্ট্র থেকে উত্তর ভারতীয়দের তাড়ানোর কথা বলে, যারা মানুষের সেবা করতে চায় না তারা আবার রামের সেবা কী করবে?
তবে অযোধ্যায় ভিএইচপি ও শিবসেনার এদিনের কর্মসূচি ঘিরে চরম চাপে রয়েছে যোগী প্রশাসন। কোনও অশান্তি যাতে না ছড়ায় সে কারণে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে অযোধ্যায়। নামানো হয়েছে প্রায় ১০ হাজার পুলিশ ও আধা সেনা, র‍্যাফ। বিরোধী সপা, বসপা সেনা নামানোর দাবি জানিয়েছে। মুসলিম পার্সোনেল ল্য বোর্ডের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে, মুসলিমদের ভয় দেখানো হচ্ছে। অধিকাংশ সংখ্যালঘু ভিএইচ পি ও শিবসেনার এই কর্মসূচির আগে অযোধ্যা ছেড়ে চলে গেছেন বলে খবর।

Comments are closed.