দৃষ্টান্ত: নাবালিকাদের বিয়ে ঠেকিয়ে ফুটবল প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ঝাড়খণ্ডের ১৭ বছরের তরুণী ফুটবলার মনিকা কুমারী

যে বয়সে আর পাঁচটা ছেলেমেয়ে কাউকে রোল মডেল ভাবে, তাঁকে আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করতে চায়, সেই ১৭ বছরের বয়সে নিজেকেই রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরেছেন ফুটবল কোচ মনিকা কুমারী। ঝাড়খণ্ডের হুটুপের এক অখ্যাত গ্রামের বাসিন্দা মনিকা কুমারী দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। পড়াশোনা, খেলাধুলো, ফুটবল প্রশিক্ষক সব কাজই সমান দক্ষতায় করেন মনিকা।
প্রতিশ্রুতিবান ফুটবলার তো বটেই, মাত্র ১৭ বছর বয়সেই নিজেকে সফল ফুটবল কোচ হিসেবেও তুলে ধরেছেন মনিকা। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যুব স্কুলের বাকি কোচদের মতো, এই খুদে কোচের ঘাড়ে ঝাড়খণ্ডের মেয়েদের ফুটবল শেখানোর দায়িত্ব। শুধু তাই নয়, অভিভাবকদের বুঝিয়ে সমবয়সীদের বল পায়ে মাঠে নামানোর গুরুদায়িত্ব সামলাতেও সিদ্ধহস্ত এই খুদে ফুটবল প্রশিক্ষক।
ঝাড়খণ্ডের এক প্রত্যন্ত গ্রামের নিরাপত্তারক্ষীর মেয়ে মনিকা সবসময় বড় স্বপ্ন দেখেন। ছোট থেকেই তাঁর ইচ্ছা ছিল ফ্যাশান ডিজাইনার বা ফটোগ্রাফার হবেন। কিন্তু দাদার সঙ্গে থাকতে থাকতে ফুটবলের প্রেমে পড়েন মনিকা। দাদা পরে ফুটবল ছেড়ে দিলেও, ছাড়েননি মনিকা। ২০১৭ সালে অন্য এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় স্পেনে কোচিং ট্রেনিং করে এসেছেন তিনি। তাছাড়াও ফুটবলার হিসেবে যুব স্বেছাসেবী সংস্থার হয়ে স্পেনে টুর্নামেন্টও খেলে এসেছেন। দিল্লিতে সুব্রত কাপও খেলেছেন মনিকা। যদিও নিজে খেলার চেয়ে প্রশিক্ষকের ভূমিকাতেই বেশি স্বচ্ছন্দ মনিকা কুমারী।
তবে মনিকা নিজের পরিবারের কাছ থেকে যেভাবে সমর্থন পেয়েছেন, তা তাঁর বয়সী আর পাঁচটা মেয়ে পায় না। হাফ প্যান্ট পরে মেয়েদের ফুটবল খেলতে দিতে অনেক পরিবারই নারাজ। নাবালিকাদের বিয়ে ঠেকিয়ে, তাঁদের নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সেইসব পরিবারকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করান মনিকা। কোথাও কোথাও অবশ্য কু-কথাও হজম করতে হয়। এমনও হয়েছে, তাঁর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মনিকাকে শুনতে হয়েছে, তাঁদের বাড়ির মেয়েকে বয়ে যেতে দেওয়া হবে না। আরও কুৎসিত আচরণের মুখোমুখি হতে হয়েছে বহুবার। মাঠে খেলার সময়ও প্রায়শই আলটপকা ও অসৌজন্যমূলক মন্তব্য করা হয়। সেসব খারাপ লাগাকে ঝেড়ে ফেলে, রোজই নতুন করে শুরু করেন কোচ মনিকা কুমারী। তাঁর চেষ্টায় যদি অন্য মেয়েরাও নিজেদের স্বপ্নপূরণ করতে পারে, সেই স্বপ্নই দেখেন ১৭ বছরের তরুণী।

Comments are closed.