লকডাউনে আমরা সবাই বাড়িতে বন্দি। কিন্তু বাইরে বেরোতে না পারলে শরীরের যত্ন নেওয়া যাবে কী করে? লকডাউনের জেরে সকালে মর্নিং ওয়াক থেকে শুরু করে জিম, সবই বন্ধ। কিন্তু তা বলে শরীরের যত্ন নেওয়া উপেক্ষা করা যায় না। আজ এমন কিছু পদ্ধতির কথা আপনাদের জানাবো, যা বাড়িতে বসেই আপনার পেশি, লিগামেন্ট ও জয়েন্টের যত্ন নিতে সাহায্য করবে।
মূলত খাওয়া দাওয়া সঠিকভাবে করলেই বহু রোগ থেকে দূরে থাকতে পারেন। প্রথমেই চোখ রাখা যাক, খাওয়া দাওয়ার উপর। এমন কী কী muscle healing nutrients আছে, যা খেলে আপনার পেশিও হবে শক্তিশালী আবার ইমিউনিটিও বাড়বে?
প্রোটিন রিচ খাবার (Protein Rich Food)
শরীরের টিসু ও পেশির বৃদ্ধির জন্য প্রচুর প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া খুবই দরকার। বাড়িতে বসে থাকায় পেশির শক্তি হ্রাস পায়। আর তাই এই জাতীয় খাবার খাওয়াটা একান্ত প্রয়োজন। মাছ, মাংস, ডিম, বিনস, কড়াইশুটি ও বাদাম জাতীয় খাবার আপনার শরীরের পেশিকে চাঙ্গা (muscle healing) রাখতে সাহায্য করবে।
ফাইবার জাতীয় খাবার (Fibrous Food)
অনেক সময় বাড়িতে বসে থাকলে বা স্বাভাবিক চলাফেরা না করলে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে। যেমন শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে যাওয়া। যার ফলে বেশ কিছুদিন পর যখন বাইরে বেরোবেন, তখন পেশি বা মাসেলে টান ধরে যেতে পারে। আর তাই বাড়িতে থাকার সময় যেমন স্বাভাবিকের তুলনায় একটু কম খাওয়ারই পরামর্শ দেন নিউট্রিশনিস্টরা, তেমনই খাবারে যাতে ফাইবারের কোনও ঘাটতি না থাকে সেদিকেও নজর রাখতে বলেন।
বাড়িতে বসে যেহেতু আপনার ক্যালোরি খুব বেশি খরচ হচ্ছে না, তাহলে চেষ্টা করুন আপনার ডায়েটে কিছু পরিবর্তন আনার। ক্যালোরি রিচ খাবারের বদলে মেনুতে নিয়ে আসুন বেশ কিছু ফাইবার রিচ ফুড। এই যে আপনি কম ক্যালোরি নিলেন, তা পূরণ করে দেবে ফল, শাকসবজি ও হোল গ্রেনের মত খাবার। যার ফলে আপনার খিদে পাবে না। বা কম খেয়েছেন সেটা মনে হবে না। এছাড়াও ফাইবারযুক্ত খাবারের মধ্যে শুধুমাত্র ফাইবার থাকে না, তাঁর সঙ্গে থাকে ভিটামিন সি, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক-এর মত উপাদান, যা আপনার মাসলের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে।
ভিটামিন ডি (Vitamin D) ও ক্যালসিয়াম (Calcium) যুক্ত খাবার
শরীরে হাড়ের ও দাঁতের জন্য ক্যালশিয়াম খুবই দরকারি। এছাড়াও মাসল কন্ট্রাকশন ও নার্ভ সিগনালিংয়ের জন্যও ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
তাই ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার যেমন, দুধ, মাখন, ঘি যেমন প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন সবুজ শাক সবজি যেমন, ব্রকোলি, ওকরা, আলমন্ডের মত খাবার। এছাড়াও শরীরে ভিটামিন ডি ও খুবই প্রয়োজনীয়। আপনি যে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবারটি খেলেন, তা শরীরে অ্যাবজর্ব করার জন্য প্রয়োজন ভিটামিন ডি। যদি আপনার হাড়ে কোনও চোট থাকে, তাহলে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি আপনার হাড়ের চোট সারাতে খুবই প্রয়োজনীয়। যদিও খুব কম খাবারেই ভিটামিন ডি থাকে, কিন্তু সূর্যের আলো থেকে সরাসরি আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি গ্রহণ করার ক্ষমতা রয়েছে।
ক্রিয়েটিন (Creatine)
মাংস, ডিম ও মাছের মধ্যে ক্রিয়েটিন খুব সহজেই পাওয়া যায়। যেকোনও রকমের পরিশ্রমের কাজ করতে শরীরে শক্তি যোগায় এই ক্রিয়েটিন। এছাড়াও মাসল বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে ক্রিয়েটিন।
ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega 3 Fatty Acid) বা ফিশ অয়েল (Fish Oil)
মাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত দরকারি। হাড় ফুলে যাওয়া বা ব্যথাতেই যে একমাত্র তা কাজে লাগে এমন নয়, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে ও হৃদরোগ, ডায়াবেটিস সহ অন্যান্য রোগ তাড়াতেও এই ফিশ অয়েল খুবই প্রয়োজনীয়।
ফিশ অয়েল ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বীজের মধ্যেও আপনি পাবেন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যেমন, ওয়ালনাট, আলমন্ড, ফ্লাক্স সিড জাতীয় খাবারের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ পাবেন, যা জয়েন্টের ফোলা (joint pain) বা লিগামেন্টে টান লাগা থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের ফল (Fruits)
ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। শাকসবজির মতোই কিছু ফল আপনার শরীরের ব্যথা ও ফোলায় খুব ভাল কাজ দেয়। ব্লু বেরি, আপেল আনারস ও টমেটোর মধ্যে আপনি পেয়ে যাবেন আপনার শরীরের দরকারি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট।
অলিভ অয়েল (Olive Oil)
রান্না থেকে এবার আপনার ভেজিটেবেল অয়েল বা সানফ্লাওয়ার অয়েল বাদ দিন। নিয়ে আসুন অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েল শুধুমাত্র আপনার ব্যথা বা ফোলাতেই কার্যকরী হবে না, আপনার শরীরে আন স্যাচুরেটেড স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পরিমাণ বাড়াবে ও আপনাকে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ এর যোগান দেবে।
পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ ও আদা
বাতের ব্যথা বা অন্য যে কোনও রকমের চোট আঘাত থেকে দ্রুত সেরে উঠতে পেয়াজ, রসুন, আদা ও হলুদ অব্যর্থ। বিভিন্ন ধরনের জয়েন্টের ব্যাথাও সারিয়ে দেয় পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ। এগুলো সবকটাই উন্নত মানের natural muscle healing nutrients.
Comments are closed.