“ধর্ম যার যার, বড়মা সবার” এই মন্ত্রেই পুজোর আয়োজন হয় আজও, শতবর্ষের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে ‘বড়মা’

সামনেই কালী পুজো। আর শতবর্ষের দোরগোড়ায় নৈহাটির ‘বড়মা’। কালীপুজোর দিন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে বড়মাকে দেখতে ভিড় জমান ভক্তরা। “ধর্ম যার যার, বড়মা সবার” এই মন্ত্রেই আজও হয় বড়মার পুজো। পুজোয় আসেন সব ধর্মের মানুষরা। এলাকার সব ধর্মের মানুষের মুখে ‘বড়মা’ জাগ্রত।

‘বড়মা’র পুজো কালীপুজোয় হলেও লক্ষ্মীপুজোর দিন প্রথম কাঠামো পুজোর মাধ্যমে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু হয়। মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে গড়ে ওঠে বিশালাকার মাতৃমূর্তি। ১২ কেজি সোনার গয়না ও ২০০ কেজি রুপোর গয়না দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয় বড়মাকে।

নৈহাটি স্টেশন থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বড়মার মন্দির। প্রতিবছর এই পুজো প্রাঙ্গণে ভিড় জমান হাজার হাজার দর্শনার্থী। গত দুবছর করোনার জন্য অনেক নিষেধ থাকলেও এই বছর সব নিষেধ সরিয়ে নিষ্টার সঙ্গে পুজো হবে বড়মার। করোনা আতঙ্কের আগে কালীপুজো ও দীপাবলিতে এই পুজো দেখতে দিনে প্রায় ৬০ হাজার ভক্তের সমাগম হয়েছিল। এইবছর সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন মন্দির কমিটি।

জানা যায়, নৈহাটির ভবেশ চক্রবর্তী নিজের বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে নবদ্বীপে রাসযাত্রা দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে বড় বড় মূর্তি দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন নৈহাটিতে বড় মূর্তির কালীপুজো করবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ১২ হাত লম্বা ২২ ফুটের বড়মার পুজো চালু করেন তিনি। এখনও এই পুজোর জন্য কোনও চাঁদা তোলা হয় না। সাধারণ মানুষের সাহায্যেই এত বছর ধরে চলছে পুজো। তবে পুজোর চালু করেছিলেন যে ভবেশ চক্রবর্তী, মায়ের ভোগ নিবেদন করা হয় তাঁরই পরিবারের তরফে। বৈষ্ণব মতে দক্ষিণা কালী রূপে পুজিতা হন বড়মা। নৈহাটির বড়মা ঘন কৃষ্ণবর্ণা। তাঁর রূপ পুরাণের শ্মশানকালী বা রক্ষাকালীর মতো।

পুজোর পর বড়মার বিসর্জন হয় দেখার মতন। ২২ ফুটের চোখধাঁধানো প্রতিমা বিসর্জনের জন্য কাঁধে তুলে নেন এলাকার মানুষই। সারা শহর ভিড় জমায় বিসর্জনে। অগণিত ভক্ত চোখের জলেই বিদায় জানান মা কালী ‘বড়মা’কে।

Comments are closed.