নেপালের পাঠ্য পুস্তকে কেন হঠাৎ ভারত বিদ্বেষ! পিছনে কি চিনের প্ররোচনা? ক্ষোভ নেপালের জনসাধারণের মধ্যেও, নজর রাখছে কেন্দ্র
চিনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মেটার লক্ষণ নেই, এদিকে ভারত বিরোধিতা বাড়িয়ে চলেছে নেপাল। এবার নেপালের বইয়ের পাতায় স্থান পেতে চলেছে ভারত বিরোধিতা। সম্প্রতি সেখানকার উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের জন্য একটি সরকারি রেফারেন্স বই প্রকাশিত হয়েছে। তাতে নেপালের সংশোধিত ম্যাপ অনুযায়ী ভূগোল ও সীমানার বিন্যাস বোঝানো হয়েছে। দেখা যাচ্ছে সেই ম্যাপে ভারতের অংশকেও নেপালের নিজেদের এলাকা বলে দেখানো হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ নিয়ে ভারত আগেই আপত্তি জানিয়েছে। গোটা ঘটনার পিছনে চিনের হাত দেখছে নয়া দিল্লি।
সাম্প্রতিককালে নেপাল শাসকের চিন নির্ভরতা পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। স্বভাবতই ভারতের বিরুদ্ধে চিনের প্ররোচনা-উসকানির আরও একটি মাধ্যম এখন প্রতিবেশী নেপাল। তারই প্রতিফলন বইয়ের ছত্রে ছত্রে। সংশ্লিষ্ট ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, চিনের উসকানিতেই নেপালের এমন আগ্রাসী ভারত বিরোধিতা। চিন যেভাবে সে দেশের তরুণ সম্প্রদায়ের মনের অধিকার পেতে পাঠ্য বইয়ের দ্বারস্থ হয়, তেমনই চিনের নয়া উপনিবেশ নেপালেও বইয়ের পাতায় পাতায় ভারত বিরোধিতা ভরে শুরু থেকেই তরুণ সম্প্রদায়কে ভারত বিরোধী করে তোলা হচ্ছে। এই মন্তব্য ত্রিভূবন ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসির প্রধান কে সি খাগড়ার। নিজের বক্তব্যের সমর্থনে অধ্যাপক খাগড়া বলছেন, ওই বইয়ের মুখবন্ধ লিখেছেন নেপালের শিক্ষামন্ত্রী গিরিরাজ পোখরেল। ৬ পাতা দীর্ঘ মুখবন্ধে তিনি কোনও রাখঢাক না করেই বলেছেন, অন্যায়ভাবে ভারত নেপালের লিপুলেখ, লিম্পিয়াধুরা ও কালাপানি কবজা করে রেখেছে। ১৯৬২ র যুদ্ধে চিনের কাছে পর্যুদস্ত হওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু নেপালের রাজা মহেন্দ্রকে অনরোধ করেছিলেন, চিনের সঙ্গে যুদ্ধের প্রেক্ষিতে নেপালে আরও কিছুদিনের জন্য সেনা মোতায়েন রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। নেপালের মাওবাদী পার্টির কর্মী তথা দেশের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী একাদশ-দ্বাদশ স্তরের ভূগোল বইয়ের মুখবন্ধে লিখেছেন, সেই কিছুদিনের মেয়াদ কত বছর? তারপরই তিনি জানিয়েছেন, তাই আমি ২৪ বছর আগে নেপালের মাটি থেকে ভারতীয় সেনাকে তাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলাম।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মনে করছে, স্কুল ছাত্রদের পাঠ্য বইয়ে যেভাবে খোলাখুলি ভারত বিরোধী আওয়াজ তুলেছেন নেপালের শিক্ষামন্ত্রী গিরিরাজ পোখরেল তাতে চিনের উসকানি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।
দিল্লির আধিকারিকরা বলছেন, নেপাল বইয়ের পাতায় যতই আগ্রাসী মনোভাব নিক না কেন, আদতে তার ভারতের উপর নির্ভরশীলতা ষোলো আনা। একটি হিসেব তুলে ধরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, কলকাতা বন্দরের অ্যাকসেস একদিনের জন্য বন্ধ হলে নেপালের নাভিশ্বাস উঠবে। বাস্তব পরিস্থিতির কথা নেপালের শাসকেরা জানেন না এমনটা নয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনীতির স্বার্থে নেপালের নেতাদের এই মনোভাবকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। চিনের প্রভাবের কথাও তাঁরা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে বই এবং তার বক্তব্য নিয়ে কাঠমাণ্ডুতে প্রবল সমালোচনা চলছে। ত্রিভূবণ ইউনিভার্সিটি ছাড়াও শহরের সমস্ত বড় কলেজ ইউনিভার্সিটিতে এ নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন হচ্ছে। নেপালের জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ প্রত্যক্ষভাবে ভারতের উপর নির্ভরশীল। তাঁরা দেশের সরকারের এমন ভারত বিরোধিতা মানতে পারছেন না বলে দাবি কাঠমাণ্ডু পোস্টের।