ট্রাক বা অন্য গাড়ির চালকদের বছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা ঘুষ দিতে হয় পুলিশকে! বলছে সমীক্ষা

সারা দেশে হাইওয়েতে ও ট্র্যাফিকে আটকে থাকা ট্রাক কিংবা অন্য গাড়ির মালিক অথবা চালকদের এক বছরে স্রেফ ঘুষ এবং তোলাবাজি বাবদ ৪৮ হাজার কোটি টাকা দিতে হয় পুলিশ ও প্রশাসনকে। এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সেভ লাইফ ফাউন্ডেশনের একটি সমীক্ষায়।
দেশের ১০ টি বড় পরিবহণ কেন্দ্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে লাইফ ফাউন্ডেশন। কেন্দ্রীয় পরিবহণ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহের হাতে প্রকাশিত এই রিপোর্ট বলছে, ৬৭ শতাংশ গাড়ি চালক স্বীকার করেছেন যে, ট্র্যাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশকে  বিভিন্ন সময়ে তাদের ঘুষ দিতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘুষ দেওয়ার নিরিখে শীর্ষে রয়েছে অসমের গুয়াহাটি। সেখানকার ৯৭.৫ শতাংশ গাড়ি চালক দাবি করেছেন, পুলিশের কাছে ঘুষ দিয়ে তবেই তাঁরা পার পেয়েছেন। তারপরে রয়েছে চেন্নাই। দক্ষিণের এই শহরের ৮৯ শতাংশ চালককে ঘুষ দিতে হয়েছে পুলিশকে। আর এরপরেই রয়েছে দেশের রাজধানী দিল্লি। দিল্লির ৮৪.৪ শতাংশ গাড়ি চালক স্বীকার করে নিয়েছেন ট্র্যাফিক পুলিশকে এই ঘুষ দেওয়ার কথা। প্রসঙ্গত, পুলিশ যে রাস্তায় গাড়ি চালকদের কাছ থেকে ঘুষ নেয় তোলাবাজদের কায়দায়, এটা নতুন কিছু নয়। পুলিশের তোলাবাজির হাত থেকে রেহাই পেতে অনেক সময় ট্রাক বা অন্য গাড়ি পালাতে গিয়ে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালায়। তার ফলে দুর্ঘটনাও ঘটে আকছার।
‘স্টেটাস অফ ট্রাক ড্রাইভার্স ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, নিউ দিল্লিতে এক রাউন্ড ট্রিপের জন্য পুলিশকে গড়ে ৫৫৭ টাকা দিতে হয়েছে ট্রাক ড্রাইভারদের। বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ে এই অঙ্কটা ১,১৩৫ টাকা।
পরিবহণ ক্ষেত্রে দুর্নীতি কতটা ভয়ঙ্কর তার প্রমাণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে সব মিলিয়ে ৮২ শতাংশ গাড়ি চালক স্বীকার করেছেন, তাঁদের শেষ সফরে কোনও পুলিশ অফিসার বা কোনও পুলিশ কর্মীকে ঘুষ দিতে হয়েছে। এরপরেই রয়েছে বিভিন্ন পুজো কমিটির চাঁদার জুলুম। ট্রাক ড্রাইভারদের অভিযোগ, চাঁদার নামে আদতে ঘুষ দিতে হয় ওই কমিটিগুলিকে। নাহলে তাঁদের ট্রাকের চাকা গড়াতেই পারত না। গড় হিসেব বলছে, ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িকে প্রতি দূরপাল্লার যাত্রায় ১ হাজার ২৫৭ টাকা খসাতে হয় স্রেফ ঘুষের জন্য।
এমনকী আরটিও আধিকারিকের বিরুদ্ধেও প্রায় ৪৪ শতাংশ গাড়ি চালকের একই রকম অভিযোগ রয়েছে। বেঙ্গালুরুতে এই সংখ্যাটা ৯৪ শতাংশ।
৪৭ শতাংশ গাড়ি চালক স্বীকার করছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নবীকরণ করতে গিয়ে তাঁদের ঘুষ দিতে হয়েছে। মুম্বইয়ের ৯৩ শতাংশ গাড়ি চালক ড্রাইভিং লাইসেন্স নবীকরণ করতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন, তারপরে রয়েছে গুয়াহাটি (৮৩ শতাংশ) এবং দিল্লি (৭৮ শতাংশ)। লাইসেন্স নবীকরণ করতে গিয়ে গড়ে খরচ হয় ১ হাজার ৭৮৯ টাকা এবং দিল্লির ক্ষেত্রে এই অঙ্ক গড়ে ২ হাজার ২৫ টাকা। ৪৩ শতাংশ পণ্যবাহী গাড়ি মালিকদের অভিযোগ, গাড়ির রেজিস্ট্রেশনের সময় পরিবহণ দফতরকেই গড়ে ১ হাজার ৩৬০ টাকা করে ঘুষ দিতে হয় তাঁদের।

Comments are closed.