দৃষ্টান্ত: ‘এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করো, লিখে রাখো পালাবদলের অভিজ্ঞতা’ পড়ুয়াদের অনন্য চিঠি পাঠভবনের প্রধান শিক্ষিকার

করোনাভাইরাস, লকডাউন এবং তার জেরে স্কুল-কলেজ ও কোচিং সেন্টারগুলিতে অনলাইন ক্লাসের হুড়োহুড়ি চলছে। শিক্ষক থেকে পড়ুয়া সবাই এক নতুন রুটিনে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে অনলাইন ক্লাসের পরিকাঠামো নিয়ে অভাব-অভিযোগ, স্কুলের বেতন না দিলে ক্লাস করতে না দেওয়ার মতো অভিযোগও উঠছে কিছু ক্ষেত্রে। এই অভূতপূর্ব, সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ুয়াদের অন্যরকম এক দৃষ্টান্তমূলক বার্তা দিল দক্ষিণ কলকাতার পাঠভবন স্কুল।
মহামারিতে প্রতিদিন বাড়িবন্দি থাকা, মৃত্যু, বিপর্যস্ত অর্থনীতি সহ একাধিক ঘটনা যে আগামী দিনে এক নতুন দুনিয়ার জন্ম দেবে, যেখানে পেশা থেকে দৈনন্দিন অভ্যেস সবই যে বদলে যাবে সাধারণ মানুষের তা ইতিমধ্যেই বলছেন অর্থনীতিবিদ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা। এই জায়গায় দাঁড়িয়েই এখনও অনলাইনে পুরনো সিলেবাসই পড়ুয়াদের মুখস্ত করাতে ব্যস্ত বহু নামী-দামি স্কুল। আর এখানেই এক ব্যতিক্রমী অবস্থান নিল পাঠভবন। এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে প্রত্যেক পড়ুয়াকে আলাদাভাবে ই-মেল পাঠালেন পাঠভবনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শুভা গুপ্ত।
পড়ুয়াদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, এই কঠিন সময়কেও ইতিবাচকভাবে দেখে সৃষ্টিমূলক ও সৃজনশীল কাজে লাগাতে হবে। তিনি লিখেছেন, আমরা সবাই হয়ত এক জায়গায় বন্দি অবস্থায় হাঁপিয়ে উঠছি। সেই চেনাজানা ছকে বাঁধা জীবন থেকে অনেকটাই দূরে আমরা। কিন্তু এই সময়কে যদি অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করি তাতে আলাদা উপলব্ধিও পেতে পারি। শুভাদেবী পড়ুয়াদের লিখেছেন, আগামী পৃথিবী সময়কে দুই ভাগে ভাগ করবে, করোনা পূর্ববর্তী সময় এবং করোনা পরবর্তী সময়কাল। ঠিক যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়কে ব্যাখ্যা করা হয় ইতিহাস বইয়ের পৃষ্ঠায়, তেমনি বর্তমানে আমরাও এক ‘পালাবদল’ এর সময়ে দাঁড়িয়ে আছি। তাই এই সময়কে ধরে রাখার, তাকে প্রতি মুহূর্তে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করতে পড়ুয়াদের পরামর্শ স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার। প্রতিদিনের ব্যস্ততায় যে সব তুচ্ছ জিনিস আমাদের নজর এড়াত বা নজর পড়লেও তা পর্যবেক্ষণের সময় হত না এখন সেগুলিই গভীরভাবে দেখার সুযোগ দিয়েছে এই সময়। এখন যে সব অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যে চিন্তাভাবনা আমাদের মাথায় আসছে তা আগে আসত না। তাই সেই পর্যবেক্ষণ, অভিজ্ঞতার কথা প্রবন্ধ, কবিতা বা গল্প আকারে কাগজে লিখে রাখলে তা এই সময়ের এক দলিল হয়ে উঠবে। ছবি আঁকা, তথ্যচিত্র তৈরি  করতে পড়ুয়াদের উৎসাহ দেন তিনি।

পড়ুন পাঠভবনের পড়ুয়াদের লেখা প্রধান শিক্ষিকার পুরো চিঠি পড়ুয়াদের পাঠানো চিঠি

পড়ুয়াদের প্রধান শিক্ষিকার বার্তা, কিছু জিনিস পরীক্ষা দেওয়ার মতো প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা থেকে না দেখে শুধুমাত্র আনন্দের জন্য করতে পার। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, অতীতে বহুবার এমন বন্ধ সময় এসেছে। কিন্তু কিছু মানুষ সেই সময়কে নেতিবাচক হিসেবে না দেখে নিজেদের চর্চার একটা সুযোগ হিসেব নিয়েছিলেন। তাঁর স্নেহের ছাত্রছাত্রীরাও যেন বর্তমান পরিস্থিতিকে ইতিবাচকভাবেই ব্যবহার করতে পারে, এমনই বার্তা তাঁর।
পাশাপাশি লকডাউনের নিয়মবিধি মেনে সবার সুস্থতা কামনা করেন তিনি। পরীক্ষার চাপ, গড়পড়তা রুটিন পড়াশোনা নয়, এই কঠিন সময়ে পড়ুয়াদের কাছে সৃজনশীল কিছু জিনিস আশা করছে পাঠভবন।
পাঠভবন সোসাইটির পরিচালন কমিটির সদস্য এবং অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, স্কুলের পক্ষ থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা এই সময় কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

Comments are closed.