অক্সফোর্ডের ট্রায়াল সফল হলে এ বছরই ৬ কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন তৈরি করবে ভারতের সেরাম ইন্সস্টিটিউট, দাম পড়বে হাজার টাকা

তীব্র সঙ্কটের মধ্যে আশার আলো দেখাচ্ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী সম্ভাব্য ভ্যাকসিন। কিন্তু জানেন কি, অক্সফোর্ডের সঙ্গে এই প্রকল্পে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটও?

সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে মঙ্গলবার পুণের এই প্রতিষ্ঠানের তরফে জানানো হয়েছে, চলতি বছরই ৬ কোটি করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য ভ্যাকসিন ডোজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে। মূলত ভ্যাকসিন উৎপাদনের কাজ হবে এখানেই। অক্সফোর্ডে চলছে ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণা।

সেখানে ChAdOx1 nCoV-19 নামক এই ভ্যাকসিন পশুর দেহে প্রয়োগের পর সপ্তাহখানেক আগে মানব শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।

মানব শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগে সাফল্য মিললেই, আগামী অক্টোবরের মধ্যে তা বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আনার তোড়জোড় চলছে। বিশ্বের যে সাতটি সংস্থা এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করবে, তাদের মধ্যে অন্যতম পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট।

সেরাম ইনস্টিটিউটের চিফ একজিকিউটিভ আদর পুনাওয়ালা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানীরা এই ভ্যাকসিন তৈরি করে ফেললেই আমরা সফলভাবে তার বিপুল উৎপাদনে আত্মবিশ্বাসী।

প্রসঙ্গত, এর আগে ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন প্রকল্পে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করার নজির রয়েছে পুণের সেরাম ইনস্টিটিউটের।

সেরাম ইন্সস্টিটিউটের আদর পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, তাঁদের দল অক্সফোর্ডের ডক্টর হিলের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যেই সম্ভাব্য ভ্যাকসিন উৎপাদনের কাজও শুরু হয়ে যাবে। প্রথম ছয় মাসে তাঁদের লক্ষ্য ৫০ লক্ষ ভ্যাকসিন ডোজ উৎপাদন। পরে প্রতিমাসে ১ কোটি করে উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে বলে আশাবাদী পুনাওয়ালা।

এদিকে অক্সফোর্ড গত সপ্তাহে ফেজ ওয়ানের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ১ হাজার ১১০ জন মানুষের শরীরে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে। আগামী মে মাসে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষের উপর পরীক্ষামূলকভাবে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। বাকি দুটি টেস্টে মানব শরীরে এই ভ্যাকসিনের প্রভাব এবং তা কতটা নিরাপদ তা পরীক্ষা করে দেখবেন অক্সফোর্ডের বিশেষজ্ঞরা।

পুনাওয়ালা জানান, আশা করা যায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন ট্রায়াল শেষ করে ফেলবে। সবকিছু ঠিকমতো চললে ২০২১ সালের মধ্যে পুণের দুটি প্ল্যান্ট মিলিয়ে ৪০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা, জানান সেরাম ইনস্টিটিউটের চিফ একজিকিউটিভ। তিনি জানাচ্ছেন, প্রতি ডোজের জন্য আনুমানিক খরচ পড়বে ১ হাজার টাকা। তবে সরকার বিনামূল্যে এই প্রতিষেধক দেবে বলে আশা তাঁর। পুনাওয়ালা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিস এই ভ্যাকসিনের উৎপাদনের ব্যাপারে তাঁদের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলছে।

প্রতিমাসে ৩০ থেকে ৫০ লক্ষ ডোজ বানাতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেরাম ইনস্টিটিউটের ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানান পুনাওয়ালা। তবে ইংল্যান্ডে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সাফল্যের ভিত্তিতে এই উৎপাদনে জোর দেওয়া শুরু করবে সেরাম ইনস্টিটিউট।

Comments are closed.