Lockdown: সিনেমা দেখা, বই পড়া, ঘুম, ঘর পরিষ্কার করা থেকে রান্না, আর ঘরে ওয়ার্কআউট, এখন এটাই রুটিন

করোনার জেরে সারা দেশে লকডাউন। আর তার জেরেই টালিগঞ্জের সিরিয়ালের সেটেও তালা পড়েছে। লকডাউনের আগে পর্যন্ত আমাদের প্রায় রোজই শুটিং চলেছে। প্রথম যখন ১৮ তারিখ শুটিং বন্ধের কথা ঘোষণা করা হয়, তখন আমরা কেউই বুঝতে পারিনি যে পরিস্থিতি এতটা জটিল হতে চলেছে। আজ প্রায় ১৩ দিন হয়ে গেল শুটিং বন্ধ। এতে শুধু কলা-কুশলীরাই নন, প্রচুর টেকনিশিয়ানও বিপদে পড়েছেন। আবার কবে থেকে শুটিং শুরু হবে, বা লকডাউন উঠে গেলেই যে সঙ্গে সঙ্গে শুটিং শুরু হবে তা হরফ করে কেউ বলতে পারছেন না।
টেলিভিশনের সিরিয়ালে আমরা যাঁরা কাজ করি, অধিকাংশই দিনের হিসেবে পারিশ্রমিক পাই। খুব কমই কলাকুশলী আছেন, যাঁরা রেগুলার কন্ট্রাক্ট হিসেবে মাইনে পান। তাই এই লকডাউনের জেরে সব থেকে বিপদে পড়তে হয়েছে আমাদের। আমাদের প্রতিদিন প্রায় ১২-১৪ ঘণ্টার শুটিং চলে। তাই প্রথম কয়েকদিন বাড়িতে বসে থাকতে সত্যিই খুব খারাপ লাগছিল। কিন্তু ওই যে, মানুষ অভ্যেসের দাস। তাই এখন অনেকটাই অভ্যেস হয়ে গেছে।
বাড়িতে আমি আর আমার মা থাকি। আর রয়েছে আমাদের পোষা কুকুর। সিরিয়ালের শুটিং চললে অধিকাংশ সময়ই বাড়ির দিকে নজর দেওয়া হয় না। আর তাই এখন বাড়ির কাজকর্ম করতেই অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে। ঘর গুছনো থেকে শুরু করে জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা, সবই করছি। এছাড়াও রান্না ঘরে অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে। বাড়ির কাজে আমাদের যাঁরা রোজ সাহায্য করেন, তাঁরা কেউই এখন আসছেন না। তাই ঘর পরিষ্কার থেকে শুরু করে বাসন মাজা, সবই করতে হচ্ছে।
আমরা যাঁরা অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত, আমাদের নিজেরদের ফিট রাখাটা খুবই দরকার। তাই এখন জিম বন্ধ থাকলেও, বাড়িতেই একটু ওয়ার্কআউট করে নিচ্ছি। এছাড়া খবরের চ্যালেনে যেমন চোখ রাখছি, তেমনই বেশ কিছু সিনেমা দেখছি। মাঝে মাঝে একটু গান গাওয়ার বা লেখার চেষ্টা করছি। তবে সবটাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। এছাড়া বেশ কিছু বইও পড়ছি। বেশ কিছু নতুন রেসিপি বানাচ্ছি। সেগুলো ফেসবুকে শেয়ারও করছি মাঝে মাঝে। এইভাবেই সময় কেটে যাচ্ছে।
এছাড়াও বেশ কয়েকটি বইয়ের অনলাইন ভার্শন রয়েছে আমার কাছে। সেগুলো নিয়েও দুপুরের দিকে বসছি। বাড়িতে আমারা দুজন থাকি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজার আমিই করছি। কিছু কিছু জিনিস এই মুহূর্তে দোকানে পাওয়া না গেলেও, সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসই পাওয়া যাচ্ছে। তবে শৌখিন খাবারের যোগান একটু কম। গত রবিবারের কারফিউ এর আগে কিছু খাবার কিনেছিলাম। এরপর যেদিন লকডাউন ঘোষণা করা হয় তার পরের দিন বেরিয়ে কিছু বাজার করে এনেছিলাম। সেগুলি দিয়েই আপাতত চলে যাচ্ছে। বাবি (আমাদের পোষা কুকুর) যে বিস্কুট খায়, তা কোথাও খুঁজে পাইনি। তাই এখন ও আপাতত আমরা যেই বিস্কুট খাই সেটাই খাচ্ছে। ওকে নিয়ে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। কিন্তু সেটা এখন তো আর সম্ভব নয়।
তবে শুটিং থাকলে স্বাভাবিকভাবেই একটা টেনশন কাজ করে মনের মধ্যে। শুটিং ফ্লোরে ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারব কিনা, সেই চিন্তা যেমন থাকে, তেমনই থাকে স্ক্রিপ্ট মনে রাখার একটা টেনশন। যেটা এখন নেই। আমি ঘুমোতে খুব ভালবাসি, তাই এখন বলতে গেলে একটু বেশিই ঘুমোচ্ছি। আর এই প্রযুক্তির জমানায় বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিং তো রয়েছেই।
এর মাঝেই অনেক দুশ্চিন্তা কাজ করছে মাথায়। এতদিন কাজ বন্ধ। এরপর যদি লকডাউন আরও বাড়ে, সেক্ষেত্রে খুবই সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ এমনিতেই এই লকডাউনের জেরে আমরা অর্থনৈতিকভাবে বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়েছি, আগামী দিনে এই লকডাউনের সময়সীমা বাড়লে আরও অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আমাদের।
তবে করোনার এই বিভীষিকা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছেও। আমারা সোশ্যালাইজিং বন্ধ করেছি, সারাদিন বাড়িতে সময় দিচ্ছি। একটা সিস্টেমের মধ্যে মানুষ আসতে বাধ্য হয়েছে। একে অপেরের প্রতি যত্নশীল, সহানুভূতিশীল হতে শিখিয়েছে আমাদের এই পরিস্থিতি।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে, আমরা কেউই বুঝতে পারছি না এই পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে! কাজ তো সবাইকে করতেই হবে। এবং এই লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে সেটা যথেষ্ট সাবধানতা মেনেই করতে হবে। যদি আগামী ৬-৭ মাস মাস্ক বা হ্যান্ড গ্লাভস পরে বেরতে হয় তাহলে তাই করতে হবে। তার জন্য এখন থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখাই ভাল। আর সবাইকে নিজের ও নিজের পরিবার সহ আশপাশের মানুষের ভাল থাকার কথাও মাথায় রাখতে হবে। সচেতন থাকাটা খুবই জরুরি। আর এই পরিস্থিতি কোন দিকে যায় সেটা তো সময়ই বলবে।

(অনুলিখন: অভিজিৎ দাস)

Comments are closed.