বিহারের উন্নয়ন নিয়ে এবার নীতীশকে নিশানা করলেন প্রশান্ত কিশোর

ক’দিন আগেই মতবিরোধের জেরে তাঁকে দল থেকে তাড়িয়েছেন নীতীশ কুমার। এবার সেই প্রশান্ত কিশোরেরই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লেন জেডিইউ প্রধান তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ।

বিহারে এসেছে এক অভূতপূর্ব বদল। উন্নয়নের মানদণ্ডে তা ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে, পাল্লা দিচ্ছে দেশের এগিয়ে থাকা রাজ্যগুলোর সঙ্গে। নীতীশ ‘সুশাসন’ কুমারের রাজত্বে বিহারে এই কথা বহুশ্রুত। কিন্তু পরিসংখ্যান কী বলছে? সত্যিই কি এগোচ্ছে বিহার? এবার এই বিহার ইস্যুতেই মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকে চেপে ধরলেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর।

মঙ্গলবার পাটনায় এক সাংবাদিক বৈঠকে পিকে বলেন, ২০০৫ সালে বিহার যেখানে ছিল, আজও সেখানেই আছে। এই ১৫ বছরে বিহারে উন্নয়নের কাজ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই উন্নয়নের স্বরূপ কেমন? সদ্য দিল্লিতে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করা প্রশান্ত কিশোরের মতে, বিহারে সড়ক তৈরি হয়েছে বটে কিন্তু মানুষ সেই পাকা রাস্তায় গাড়ি চড়তে পারছেন না। কারণ মানুষের হাতে গাড়ি কেনার মতো টাকা নেই। নীতীশ কুমার কথায় কথায় বিহারে বিদ্যুতায়নের আমূল পরিবর্তনের কথা বলেন। বিহারের রাজধানীতে বসে জেডিইউয়ের প্রাক্তন নেতা প্রশান্ত কিশোর নীতীশ কুমারকে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিলেন সেই বিদ্যুতের প্রসঙ্গ ধরেই। সাংবাদিকদের কাছে তাঁর প্রশ্ন, রাজ্যে বিদ্যুতের কাজ খুব ভালো হয়েছে কিন্তু বিদ্যুতের খুঁটি নিয়ে সমস্যা কি আদৌ মিটেছে? মানুষ একটা বাল্ব আর একটা ফ্যান ছাড়া আর কিছু কিনতে পারছেন না কেন? তার উত্তরও নিজেই দিয়েছেন বাংলায় তৃণমূলের হয়ে বিজেপি বধের গুটি সাজানো প্রশান্ত কিশোর। তাঁর মতে, মাথাপিছু আয়ের নিরিখে বিহার এখনও একেবারে পিছনের সারিতে। এই কারণেই বিহার আজও দেশের সবচেয়ে গরিব রাজ্য। অর্থাৎ দেড় দশকে উন্নয়নের মৌলিক বিষয়গুলোর কোনও নিষ্পত্তি নীতীশ কুমার করতে পারেননি বলে অভিযোগ প্রশান্ত কিশোরের।

প্রশান্ত বলেন, আমি এটা বলব না যে গত দেড় দশকে বিহারে কোনও উন্নয়নই হয়নি। কিন্তু আপনি যদি এই মাপকাঠিতে বিহারের সঙ্গে অন্যান্য রাজ্যের তুলনা করেন, তাহলে দেখবেন নীতীশের উন্নয়নের গতি বাকিদের চেয়ে অনেকটাই শ্লথ। ঠিক সেই কারণেই ২০০৫ সালে দেশের সবচেয়ে গরিব রাজ্য ছিল বিহার। উন্নয়নের মাপকাঠিতে আজও বিহারের অবস্থান সকলের নীচে।

নীতীশ কুমার কথায় কথায় তাঁর শাসনকালের সঙ্গে লালুপ্রসাদ যাদবের সময়কার বিহারের তুলনা করেন। প্রশান্ত কিশোরের মতে, লালুপ্রসাদ যাদব নীতীশের প্রতিদ্বন্দ্বীই নন। নীতীশ আর কাহাতক লালু জুজু দেখিয়ে যাবেন, তা নিয়েও কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন প্রশান্ত।

কেবলমাত্র একতরফা অভিযোগ করাই নয়, যে বিষয়গুলো নিয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন আই প্যাকের কর্ণধার, তার সবকটি নিয়েই নীতীশ কুমারকে সরাসরি ডিবেটে বসার আহ্বানও জানিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর।

পাটনা থেকেই প্রশান্ত কিশোর শুরু করেছেন তাঁর নয়া প্রকল্প ‘বাত বিহার কি’। এই উপলক্ষেই মঙ্গলবার পাটনায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। নীতীশকে কটাক্ষ ও সমালোচনার পাশাপাশি প্রশান্ত কিশোর সাফ জানিয়েছেন, কোনও নতুন পার্টি কিংবা কোনও মহাজোট নিয়ে কথা বলতে তাঁর বিহার যাত্রা নয় বরং বিহারের প্রকৃত উন্নয়নের লক্ষ্যে একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে নেতা তুলে আনাই এখন প্রশান্ত কিশোরের পাখির চোখ।

নীতীশের সঙ্গে তাঁর সমস্যা যে ব্যক্তিগত নয় বরং সম্পূর্ণভাবে নীতিগত, তা স্পষ্ট করেছেন প্রশান্ত কিশোর। পিকের কথায়, যে মানুষ মহাত্মা গান্ধীর মতবাদের সমর্থক, তাঁর পক্ষে গডসে সমর্থকদের পাশে দাঁড়ানো অসম্ভব।

বিজেপির একাধিক নেতা নেত্রী প্রকাশ্যে নাথুরাম গডসেকে নিয়ে উচ্ছাস এবং সমর্থন প্রকাশ করেছেন। বিহারে ভোটের ঠিক আগে বিজেপির জোটসঙ্গী নীতীশকে বার্তা দিতেই প্রশান্ত কিশোর এমন শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

Comments are closed.