জাভেদ আখতার, করন থাপার থেকে SY কুরেশি, অভূতপূর্ব ‘পাওয়ার-মিটে’র সলতে পাকানো শুরু

দোস্তি বনি রহে! সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতারা এমন অনেক কথাই বলেন যা সেই সময়ের প্রেক্ষিত টপকে হয়ে ওঠে আরও তাৎপর্যপূর্ণ। এমনকী দশক পেরিয়েও তা হারায় না প্রাসঙ্গিকতা। জ্যোতি বসু এক সাক্ষাৎকারে ঐতিহাসিক ভুল বলেছিলেন। যা আজও ঘুরেফিরে আসে হালের রাজনীতিবিদদের মুখে। হালফিলের রাজনীতিতে ঠিক তেমনই একটি শব্দবন্ধ দোস্তি বনি রহে! ২০০৭ সালে সাংবাদিক করণ থাপারকে বলেছিলেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। 

২০২৪ লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে ঝাঁপিয়েছে বিরোধীরা। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ শরদ পাওয়ারের বাড়িতে ২২ জুন বসতে চলেছে এক অন্য ধারার বৈঠক।

সেখানে আমন্ত্রিত বিজেপি বিরোধী দলের নেতারা। কিন্তু বৈঠকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে আমন্ত্রিতদের তালিকা। 

এনসিপি নেতা নবাব মালিক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পাওয়ারের বাড়িতে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আইনজীবী কেটিএস তুলসি, প্রাক্তন CEC এস ওয়াই কুরেশি, প্রাক্তন রাজদূত কেসি সিংহ, গীতিকার জাভেদ আখতার, পরিচালক প্রীতিশ নন্দী, সিনিয়ার আইনজীবী কলিন গনসালভেস, সিনিয়ার সাংবাদিক করণ থাপার, আশুতোষকে। সঙ্গে ১৫ টি রাজনৈতিক দলের নেতারা। 

আমন্ত্রিতদের তালিকায় একটা জিনিস তাৎপর্যপূর্ণ, তা হল, করন থাপার থেকে শুরু করে এস ওয়াই কুরেশিদের অন্তর্ভুক্তি। ২০০৭ সালে করন থাপার একটি সাক্ষাতকার নেন নরেন্দ্র মোদীর। তিনি সেই সময় বিধানসভা ভোটের প্রচারে। সাক্ষাৎকারটি মাত্র ৩ মিনিটেই শেষ হয়ে যায়। আচমকা ইন্টারভিউ ছেড়ে উঠে আসার আগে সাংবাদিক করন থাপারকে মোদী বলেছিলেন, ‘দোস্তি বনি রহে!’ 

যা পরবর্তীতে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে টিভি চ্যানেলগুলোতে। করন নিজের ডেভিলস অ্যাডভোকেট বইতে সেই কথা সবিস্তারে লিখেছেন। জানিয়েছেন, সেই ঘটনার পর থেকে তাঁকে আর সাক্ষাতকার দেননি মোদী। ২০১৪ সালে মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কোনও বিজেপি নেতাও তাঁকে সাক্ষাতকার দেননি বলে বইয়ে দাবি করেছেন করন থাপার। এহেন করন থাপার ডাক পেয়েছেন শরদ পাওয়ারের বাড়ির বৈঠকে। কি পরিকল্পনা? 

সোমবার শরদ পাওয়ারের সঙ্গে দ্বিতীয়বার বৈঠক সেরে বেরিয়ে প্রশান্ত কিশোর তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্টের জল্পনায় জল ঢেলেছেন। বলেছেন এভাবে মোদীকে হারানো সম্ভব নয়। তাহলে কীভাবে মোদীকে হারানো সম্ভব বলে ভাবছেন প্রশান্ত? তা অবশ্য খোলসা করেননি। কিন্তু প্রশান্তের সঙ্গে বৈঠক শেষে যেভাবে শরদ পাওয়ার ১৫ টি অবিজেপি দলকে বৈঠকে ডাকলেন তাতে পিকের কথার অন্য অর্থ খুঁজতেই হচ্ছে। 

সেই প্রেক্ষিতেই সামনে আসছে আমন্ত্রিতদের তালিকা। যেখানে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ডাক পেয়েছেন করন থাপার। ২০০৭ সালে যাঁকে সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে মাঝ পথে উঠে চলে যান মোদী। শুধু বলেন, দোস্তি বনি রহে। 

করন থাপার তাঁর বইয়ে দাবি করেছেন, ২০১৪ সালের দৌড়ে নামার আগে প্রস্তুতি পর্বে ‘দোস্তি বনি রহে’ খ্যাত ইন্টারভিউটি নরেন্দ্র মোদীকে অজস্রবার দেখিয়েছিলেন ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোর।

পিকে জানিয়েছেন তৃতীয় বা চতুর্থ ফ্রন্টের ভাবনা নেই। এনসিপিও তা স্পষ্ট করেছে। আমন্ত্রিতদের তালিকা দেখে একটা জিনিস পরিষ্কার, শুধু রাজনীতির গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকছে না বিরোধী জোট। সেখানে সমানভাবে যেমন আছেন জাভেদ আখতার, আশুতোষরা তেমনই আছেন এস ওয়াই কুরেশি, প্রীতিশ নন্দীরা।

তৃণমূল নেতা যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরিদের রাষ্ট্র মঞ্চের ব্যানারে পাওয়ারের বাসভবনে বসবে বৈঠক। এই প্রসঙ্গেই মনে করিয়ে দেওয়া যাক, প্রথম দফায় মুম্বইতে পাওয়ারের সঙ্গে বৈঠক সেরে পিকে গিয়েছিলেন শাহরুখ খানের বাড়ি মান্নাতে। সম্ভাবনার শিল্প রাজনীতিতে আগামী দিনে আরও অনেক চমক অপেক্ষা করছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

Comments are closed.