Plasma Treatment কি হতে চলেছে করোনা চিকিৎসার দিশারী? ভারতে কী অবস্থা Plasma Therapy’র?

করোনার প্রতিষেধক তৈরি না হওয়ায় ম্যালেরিয়া, ইবোলা, এইডসের কিছু ওষুধ প্র‍য়োগ করে রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে সাড়াও মিলেছে। এই প্রেক্ষিতে করোনা মোকাবিলায় নয়া পথ দেখাচ্ছে প্লাজমা থেরাপি। প্রশ্ন উঠছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় Plasma Therapy-ই কি হতে চলেছে দিশারী?

কেরলের চিকিৎসক মহল দাবি করছে, মাত্র ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে কোনও কোভিড ১৯ আক্রান্ত সুস্থ হয়ে যেতে পারেন Plasma Treatment এ।

ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেরলের ত্রিবান্দ্রামের শ্রীচিত্রা তিরুনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজির ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডাক্তার দেবাশিস গুপ্ত জানান, করোনা চিকিৎসায় প্রস্তাবিত ব্লাড প্লাজমা থেরাপিতে তিন দিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে সেরে উঠতে পারেন আক্রান্ত। করোনায় বিধ্বস্ত বিশ্বে এ তো আশার আলো! কিন্তু কীভাবে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা হয়?

 

Plasma Therapy কীভাবে কাজ করবে?

plasma treatment for covid

 

কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কোনও ব্যক্তির plasma অর্থাৎ রক্তরস সংগ্রহ করে তা গুরুতর অসুস্থদের শরীরে প্রয়োগ করা হবে। কারণ, একে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি বলে মনে করা হচ্ছে। সেই প্লাজমা গ্রহণ করে অসুস্থরা দ্রুত সেরে উঠতে পারেন। কারণ, জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁরা নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।

যার কাছ থেকে এই অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করা হচ্ছে তাঁকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘প্লাজমা ডোনার’। তবে ওই ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে প্লাজমা নেওয়া হলেও রক্ত আবার দাতার শরীরেই ফিরে যাবে। একজন দাতার শরীর থেকে ৫০০ মিলিলিটার থেকে ১ লিটার পর্যন্ত প্লাজমা নেওয়া যেতে পারে। তবে পুরো রক্তের ভিত্তিতে সাড়ে তিনশো মিলিলিটার প্লাজমা পাওয়া যায় একজন দাতার শরীর থেকে।

এবার অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ এই প্লাজমা নতুন করোনা আক্রান্তের শরীরে প্রবেশ করালে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে দেবে ওই অ্যান্টিবডি। এভাবেই সেরে উঠবেন আক্রান্ত। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় Passive Immunization.

 

কতটা কঠিন এই প্লাজমা সংগ্রহের কাজ?

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, দাতার শরীর থেকে অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ প্লাজমা সংগ্রহ করে আক্রান্তের শরীরে প্রবেশ করিয়ে তাঁকে সুস্থ করে তোলার এই দীর্ঘ পর্যায়ে রয়েছে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা। গাইডলাইন মেনে একজন সুস্থ সমর্থ স্বেচ্ছাসেবকের কাছ থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা যাবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের গাইডলাইন মেনে তিনটি সংস্থার ছাড়পত্র দরকার। প্রথমটি হল, সেন্ট্রাল ড্রাগ স্টান্ডার্ডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (CDSCO), যাদের অধীনে থাকে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলার। এরা ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিকে লাইসেন্স প্রদান করে। এই গাইডলাইন তৈরি করেছে DGHS বা ডিরেক্টর জেনারেল অফ হেলথ সার্ভিসেস। তারপর রয়েছে ন্যাশনাল ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিল। তাই করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির কাছ থেকে প্লাজমা নিতে গেলে দাতার শারীরিক অবস্থা, তাঁর সাম্প্রতিক জ্বরের ইতিহাস, শ্বাসযন্ত্রের কোনও সংক্রমণ আছে কি না, সাম্প্রতিক অতীতে বিদেশ সফরের ইতিহাস রয়েছে কি না, এমন নানা বিষয় জানার পর দাতা নির্বাচন করা হয়।

তারপরে রয়েছে আরও এক হার্ডল। সংশ্লিষ্ট প্লাজমা সংগ্রহ করে যে ব্লাড ব্যাঙ্কে দেওয়া হবে তাতে কেবল কোভিড-১৯ আক্রান্তের রক্ত থাকবে।

 

একজন করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির প্লাজমা থেকে কতজন আক্রান্তের চিকিৎসা সম্ভব?

চিকিৎসকরা বলছেন, দাতার কাছ থেকে সংগ্রহ করা প্লাজমার পরিমাণের উপর নির্ভর করছে, তা থেকে কতজন আক্রান্তের শরীরে অ্যান্টিবডি দেওয়া যাবে। একজন আক্রান্তকে সুস্থ করতে মোটামুটি ২০০ থেকে ২৫০ মিলিলিটার প্লাজমা প্রয়োজন। তবে মোটামুটি একটি নমুনা থেকে দুই থেকে পাঁচজন করোনা আক্রান্তকে সুস্থ করে তোলার প্রয়াস নেওয়া যেতে পারে।

আমেরিকা, চিনে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিন থেকে সাতদিনের মধ্যে আক্রান্তদের সেরে ওঠার রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে।

 

এ দেশে Plasma Therapy’র চিত্রটা কেমন?

corona treatment methods

 

‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চিকিৎসক দেবাশিস গুপ্ত জানান,  কেরল স্বাস্থ্য দফতর এ ব্যাপারে এগোচ্ছে। একটি কমিটিও গঠন করা হচ্ছে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নজরদারির জন্য। এখন কেরল সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকরা। অনুমোদন দিলেই কাজ শুরু করে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো তৈরি আছে, দাবি শ্রীচিত্রা তিরুনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজির ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধানের।

 

Plasma Treatment দিয়ে করোনার চিকিৎসা করার ভাবনা এল কোথা থেকে?

গত মার্চে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইয়ান লিপকিন দাবি করেছিলেন, মারণ ভাইরাসের চিকিৎসায় ব্লাড-প্লাজমা থেরাপি অত্যন্ত সহায়ক এবং এর সাহায্যে করোনাকে নির্মূল করা সম্ভব।

 

কী ভাবে সম্ভব?

আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাঁর শরীর থেকে অ্যান্টিবডি নিয়ে ১০ জন করোনা আক্রান্তের দেহে Plasma Therapy’র মাধ্যমে তা প্রয়োগ করা হয়। দেখা গিয়েছে যে, ওই ১০ জনের প্রত্যেকেই সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।

গত ২৬ মার্চ ফক্স নিউজের একটি অনুষ্ঠানে নিজের এই নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির কথা তুলে ধরেন ডাক্তার ইয়ান লিপকিন। তাঁর কথায়, এই পদ্ধতি নতুন কিছু নয়। যখন বাজারে অ্যান্টিবায়োটিকই আসেনি, তখন এই পদ্ধতির মাধ্যমেই রোগ নিরাময় করা হত। করোনার ক্ষেত্রেও এটি কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও কাজ করবে বলে আমার আশা।

এই অবস্থায় যতদিন কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক তৈরি হচ্ছে ততদিন প্লাজমা থেরাপিতেই ভরসা রাখতে চাইছেন চিকিৎসকদের একটি বড় অংশ।

Comments are closed.