জেলবন্দিদের তৈরি মাস্কেই করোনা-জব্দের কৌশল কারা দফতরের, কাজে নামল টেলর ইউনিট

করোনা ঠেকাতে কারা দফতরের হাতিয়ার বন্দিদের হাতে তৈরি মাস্ক। রাজ্যে সমস্ত বন্দির পাশাপাশি সেই মাস্কে মুখ ঢেকেই কাজ করবেন রাজ্যের কারা কর্মীরা। প্রয়োজনে সেই মাস্ক সরবরাহ হবে বাইরেও। এজন্য ইতিমধ্যেই কাজে নেমে পড়েছে জেলের টেলার ইউনিট। নাওয়া-খাওয়া ভুলে জেলে জেলে চলছে মুখোশ তৈরির কাজ।

কলকাতায় প্রথম করোনা আক্রান্তের ঘটনা সামনে আসার পরই মহানগর তথা রাজ্যজুড়ে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। করোনা আতঙ্কের প্রভাব ঢুকে পড়েছে গারদের ভিতরেও। ‘অতিমারি’ ভাইরাসের আতঙ্ক গ্রাস করেছে জেলবন্দি আসামী থেকে জেল কর্মী সকলকেই। তাই কর্মরত নিরাপত্তারক্ষী থেকে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত আসামীদর সুরক্ষার কথা ভেবে, জেলের মধ্যেই আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করেছে রাজ্য কারা দপ্তর।

কারা দফতর সূত্রে খবর, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জেলে যে নতুন আসামিরা এসেছেন, তাঁদের অন্তত দিন তিনেক কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে। কারও মধ্যে কোনও রকম উপসর্গ মিললেই পরীক্ষা করছেন জেলের চিকিৎসকরা। কারা দফতর জেল সুপারদের এই বিষয়ে একাধিক নির্দেশিকা পাঠিয়েছে। করোনার প্রভাব রুখতে বেশ কিছু অভিনব পদক্ষেপ করেছে রাজ্যের কারা দফতর।

করোনা ভাইরাস থেকে নিজেদের বাঁচাতে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু যাঁরা জেলের মধ্যে বন্দি, তাদের কী হবে? তাই নিজেরাই মাস্ক তৈরি করছেন জেলবন্দি আসামিরা। বন্দিদের মধ্যে যাঁরা দর্জির কাজে সিদ্ধহস্ত, এমন আসামিদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে টেলর ইউনিট। তাঁরাই দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করে চলেছেন হাজার হাজার মাস্ক। আসামিদের হাতে তৈরি মাস্কই সরবরাহ করা হচ্ছে বিচারাধীন এবং সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে। জেলবন্দিদের হাতে বানানো মাস্ক পরেই নিজেদের সুরক্ষিত রাখছেন রাজ্যের বিভিন্ন কারাগারে কাজ করা হাজার হাজার জেল কর্মীও।

রাজ্যের সমস্ত সেন্ট্রাল জেলেই নেওয়া হয়েছে একাধিক পদক্ষেপ। যেমন দমদম সংশোধনাগারে তৈরি করা হয়েছে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য দুটি আলাদা আইসোলেশন ওয়ার্ড। এক একটি ওয়ার্ডে প্রায় একশো জন করে বন্দিকে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ডগুলিতে। কারা দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, জেলবন্দি কোনো আসামির মধ্যে জ্বর, সর্দি, কাশির মতো কোনও উপসর্গের দেখা মিললেই তাঁকে দ্রুত আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করে নজরবন্দি রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাড়াবাড়ি হলেই রোগীকে নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেল সুপারদের। এরপর পরীক্ষার রিপোর্টে শরীরে নোভেল করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি মিললেই তাঁকে দ্রুত ভর্তি করা হবে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে।

কারা দফতর সূত্রে খবর, প্রত্যেকটি জেলের সদর দরজায় মজুত রাখা হয়েছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। বাইরে থেকে আসা প্রত্যেককে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে, তবেই প্রবেশ করানো হচ্ছে ভিতরে। এমনকী জেলের কয়েদিদের নিয়মিত সার্চ করা নিরাপত্তারক্ষীদেরও কিছুক্ষণ পরপরই স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক কারা কর্তা বলেন, বন্দিদের সব সময় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হলেও, সেটা করার সময় বন্দিদের সংস্পর্শে চলে আসেন নিরাপত্তারক্ষীরা। তাই তাঁদের জন্য বাড়তি সতর্কতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বন্দিদের মধ্যে যাতে করোনা ভাইরাস নিয়ে অযথা আতঙ্ক না ছড়ায়, তার জন্য দমদম জেলে গত ফেব্রুয়ারি মাসেই চালু হওয়া ইন্টারনাল রেডিওর মাধ্যমে এক বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত করে, তার পরামর্শ সম্প্রচার করা হয় ‘রেডিও দমদমের’ মাধ্যমে। বন্দিরা যাতে আতঙ্কিত না হন, তার জন্য তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত কথাবার্তা বলছেন কারা দফতরের আধিকারিকরা।

Comments are closed.