তেল-সাবান থেকে বোর্ন-ভিটা, ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ যখন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ; জন্মদিনে চিনুন অচেনা কবিকে

ডট পেন বা জেল পেন তখনও বাজারে আসেনি। ঝর্ণা কলম অথবা ফাউন্টেন পেনে কালি ভরে লেখালেখি করতে হত। সেই সময় ‘সুলেখা’ কালির বিজ্ঞাপনে লেখা হল, ‘সুলেখা কালি। এই কালি কলঙ্কের চেয়েও কালো’। সুলেখার প্রচারে লাইনগুলি লিখলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। শুধু সুলেখা কালিই নয়, তেল-সাবান, এয়ারলাইন্স থেকে শুরু করে বোর্ন-ভিটা। একটা সময় কার্যত চুটিয়ে বিজ্ঞাপনের কাজ করেছেন বিশ্বকবি। সংস্থাগুলি নিজেদের পণ্যের প্রচারে আশ্রয় নিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের। কবিও একের পর এক সংস্থার হয়ে কলম ধরেছেন। জন্মজয়ন্তীতে আসুন ফিরে দেখা যাক ‘অচেনা’ কবিকে।

তারকা থেকে শুরু করে ক্রিকেটার। নিজেদের পণ্যের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সংস্থাগুলি সেলিব্রেটিদের দিয়ে বিজ্ঞাপন করায়। মাধ্যম আলাদা হলেও সে যুগেও ছবিটা তাই ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গগনচুম্বী জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে তাঁর শরণাপন্ন হয়েছিল একাধিক সংস্থা। বিভিন্ন পত্র পত্রিকা থেকে জানা যায়, ১৮৮৯ থেকে শুরু করে প্রায় ১৯৪১ পর্যন্ত কমবেশি ৯০ টি সংস্থার হয়ে বিজ্ঞাপন করেছেন রবীন্দ্রনাথ।

ঘি থেকে শুরু করে কেশ তেল, স্নো পাউডার, এয়ার লাইন, বোর্ন ভিটা, কালি, এমনকি হারমোনিয়াম। হরেকরকম জিনিসের বিজ্ঞাপন করেছেন বিশ্বকবি। আসুন এক নজরে দেখা নেওয়া যাক ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’এর ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে।

সুলেখা কালির কথা তো প্রথমেই লিখেছি। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত এরকম আরও একটা কালি প্রস্তুকারক সংস্থার বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “কাজলকালী ব্যবহার করে সন্তোষ লাভ করেছি। এর কালিমা বিদেশী কালির চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।”

আবার বোর্ন-ভিটা’র বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথের নিজের হাতের লেখা ছাপা হচ্ছে। যেখানে তিনি লিখেছেন, “বোর্ন-ভিটা সেবনে উপকার পাইয়াছি”

‘কুন্তলীন’ নামে সে সময়ের এক জনপ্রিয় কেশ তেল প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্ণধার হেমেন্দ্র মোহন ছিলেন কবির খুব কাছের বন্ধু। বন্ধুর সংস্থার জন্য তিনি লিখলেন, “কুন্তলীন ব্যবহার করিয়া এক মাসের মধ্যে নতুন কেশ হইয়াছে”। জানা যায়, কবির ওই কোটা কথা সে-সময় তেলের জনপ্রিয়তা অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছিল।
এছাড়াও তখনকার দিনে কলকাতা রেডিয়াম ল্যাবটরী নামে এক কোম্পানি স্নো, মুখে মাখার ক্রিম, গ্লিসারিন সাবান ইত্যাদি প্রস্তুত করত। সংস্থার প্রচারে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, “রূপচর্চার জন্য স্নো ও ক্রিমজাতীয় প্রসাধন যারা ব্যবহার করেন, তারা রেডিয়াম ফ্যাক্টরির তৈরি ক্রিম ব্যবহার করে দেখুন। বিদেশী পণ্যের সঙ্গে এর কোনও পার্থক্য খুঁজে পাবেন না”

এখানেই শেষ নয়। ইস্টার্ন রেলের বিজ্ঞাপনেও রবীন্দ্রনাথের লেখা কবিতার লাইন ব্যবহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ‘কে এল এম রয়াল ডাচ’ নামে একটি এয়ারলাইন্সে সংস্থার জন্যও বিজ্ঞাপন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ওই এয়ারলাইন্সের প্লেনে সফরের অভিজ্ঞতা লিখেছিলেন কবি। যা সংস্থার বিজ্ঞাপনে ‘গুরুদেবের বিমান যাত্রা’ শিরনাম দিয়ে ছাপা হয়।

জানা যায়, মূলত স্বদেশী পণ্যের প্রচার এবং শান্তিনিকেতনের কাজেই কবি বিজ্ঞাপনের অর্থ ব্যবহার করতেন। যদিও এ নিয়ে একাধিক মত রয়েছে। তবে, রবীন্দ্রনাথ বলতেই আর পাঁচজন বাঙালির মনে যে ধারণা রয়েছে সেটির সঙ্গে কবির এই ভূমিকা এক কথায় বেশ চমকপ্রদ।

Comments are closed.