রাফাল ইস্যুতে সিবিআই-এর দ্বারস্থ যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরি ও প্রশান্ত ভূষণ, অভিযোগ মোদী-পরিক্করের নামে

ফ্রান্সের সাথে ভারতের ৬০ হাজার কোটি টাকার রাফাল যুদ্ধ বিমান চুক্তি ইস্যুতে চলতি বিতর্ককে নয়া মাত্রা দিয়ে এবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-এর দ্বারস্থ হলেন তিন প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
প্রাক্তন বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরি এবং প্রাক্তন আপ নেতা তথা বরিষ্ঠ আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। অভিযোগে নাম করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিক্করের। প্রিভেনশন অফ কোরাপশন অ্যাক্টের আওতায় তাঁদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতি হয়েছে, এই অভিযোগ নিয়ে গত কয়েক মাস ধরেই প্রচার চালাচ্ছিলেন এই তিন প্রবীন রাজনৈতিক নেতা। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক বৈঠকে এবং লিখিত বিবৃতিতে এই তিন জন জানান, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ফ্রান্সের সাথে ৩৬ টি রাফাল জেট যুদ্ধ বিমান কেনার চুক্তি করার সময় মোদি সরকার ডিফেন্স প্রকিওরমেন্ট প্রসেডিওরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম ভেঙেছে।
অভিযোগকারীদের দাবি, রাফাল চুক্তির আওতায় ‘অফসেট ক্লজ’এর মাধ্যমে অনিল আম্বানীর সংস্থা রিলায়েন্স ডিফেন্সকে ৩০ হাজার কোটি টাকার সুবিধা পাইয়ে দিতে ফ্রান্সের ডাসল্ট অ্যাভিয়েশনের কাছ থেকে ১২৬ টি এয়ারক্রাফট কেনা নিয়ে যে আলোচনা চলছিল, তা হঠাৎ বাতিল করে ওই একই সংস্থার কাছ ৩৬ টি রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনার নয়া চুক্তি করে মোদি সরকার। এই একই অভিযোগ কংগ্রেসের তরফ থেকেও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোলা হচ্ছে।
অভিযোগকারীদের দাবি, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের জমানায় ফ্রান্সের সাথে এয়ারক্রাফট কেনা নিয়ে ভারতের যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে ফ্রান্সের প্রযুক্তি সম্বলিত ১০৮ টি এয়ারক্রাফট ভারতেই নির্মাণ করার কথা ছিল হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেড বা হ্যাল এর। যশবিন্ত সিনহা, অরুণ শৌরি ও প্রশান্ত ভূষণের দাবি, হ্যাল যাতে ওই বরাত না পায় এবং রিলায়েন্সকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই মোদী সরকার গোটা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে নয়া চুক্তি করে ফ্রান্সের সাথে।
এই বিতর্ক সম্প্রতি আরও বৃদ্ধি পায় ফ্রান্সের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফ্রসোঁয়া ওলাদের এক দাবির পর। তিনি দাবি করেন, ভারতের সাথে রাফাল চুক্তির সময় ‘অফসেট ক্লজ’ এর আওতায় ড্যাসল্টের সাথে রিলায়েন্স ডিফেন্সের যে অংশীদারিত্বের চুক্তি হয়েছিল, তাতে ফরাসি সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু ভারত সরকারের তরফেই ড্যাসল্ট এর কাছে শুধুমাত্র অনিল আম্বানীর ওই সংস্থার নামই প্রস্তাব করা হয়েছিল, ফলে অন্য বিকল্প না থাকায় রিলায়েন্স ডিফেন্সের সাথেই চুক্তি করে ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন। যদিও মোদী সরকারের তরফে ওলাদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, ওই অফসেট চুক্তিতে কোনও ভূমিকা তাদের ছিল না। কিন্তু প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য সামনে আসার পরই আরও তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নেমেছে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা। এই চুক্তিকে বৃহত্তম দুর্নীতির তকমা দিয়ে রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, মোদী এবং আম্বানী মিলে দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ৬০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সার্জিকাল স্ট্রাইক করেছেন।
এদিকে যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরি এবং প্রশান্ত ভূষণের দাবি, এই চুক্তির মাধ্যমে যে সুবিধা অনিল আম্বানীর সংস্থাকে নরেন্দ্র মোদী পাইয়ে দিয়েছেন, তাতে আগামী ৪০ বছর আর্থিক সুবিধা পাবে এই সংস্থা। নিজেদের দাবির স্বপক্ষে একটি তথ্য প্রকাশ করেছেন তাঁরা বলেছেন, ২০১৫ সালের এপ্রিলে এই চুক্তির আগে ২০১৫ র মার্চ মাসের ৩ তারিখ সাক্ষাৎ হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী ও অনিল আম্বানীর। তখন সেই সাক্ষাতের পর অনিল আম্বানী দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে পা রাখতে। তাঁদের আরও দাবি ২ জি মামলার তদন্ত চলাকালীন যখন বিভিন্ন টেলিকম সংস্থার সাথে কথা বলে ঘুস নেওয়ার কথা যাচাই করছিলেন তদন্তকারীরা তখন তদন্ত সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার আগে একটি টেলিকম সংস্থার প্রধান অনিল আম্বানিকে প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পা রাখার কথা মোদী বলেন কীভাবে? অভিযোগকারীদের আরও দাবি, এরপর রাতারাতি রিলায়েন্স ডিফেন্স আত্মপ্রকাশ করে এবং তৈরি হওয়ার ১২ দিনের মাথায় ৫০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হ্যালের পরিবর্তে তারা ওই চুক্তির আওতায় এত বিরাট বরাত পেয়ে যায়। এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

Comments are closed.