কীভাবে হয়েছিল রাফাল চুক্তি, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত নথি কেন্দ্রের কাছে তলব করল সুপ্রিম কোর্ট

ঠিক কীভাবে, কী কী বিষয়ের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে ফ্রান্সের সাথে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৬ টি রাফাল যুদ্ধ বিমান কেনার চুক্তি করেছিল ভারত, এ সম্পর্কিত যাবতীয় নথি কেন্দ্রের কাছে তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার দেশের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ জানিয়েছে, আগামী ২৯ অক্টোবরের মধ্যে সিল বন্ধ খামে সরকারকে যাবতীয় নথি জমা দিতে হবে আদালতে। তবে সুপ্রিম কোর্ট এদিন স্পষ্ট জানিয়েছে, কোনও রকম বিতর্কে তারা প্রবেশ করতে চাইছে না। প্রধান বিচারপতি এদিন জানান, মামলাকারী বা সরকার কোনও পক্ষের সওয়ালই এখানে বিচার্য নয়। কারণ, সওয়াল জবাব এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তার আগে বিচারপতিরা নিজে বিষয়টি বুঝতে চাইছেন। রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে শীর্ষ আদালতে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন জনৈক এম এল শর্মা। এদিন তার প্রেক্ষিতে কোর্টের এই জবাব তলব। যদিও এর বিরোধিতা করেছে কেন্দ্র। বলেছে, এই অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত। এদিন কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেনুগোপাল বলেন, এই চুক্তির সাথে জাতীয় স্বার্থ জড়িত। সুপ্রিম কোর্টকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থপূরণের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের জমানায় ফ্রান্সের সাথে ৬০ হাজার কোটি টাকার রফাল যুদ্ধ বিমান কেনার চুক্তি করে ভারত। কংগ্রেসসহ বিরোধীদের দাবি, ৩৬ টি রাফাল বিমান কেনার এই চুক্তিতে বিপুল দুর্নীতি করা হয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে এই চুক্তির মাধ্যমে তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি অনিল আম্বানী ও তাঁর সংস্থা রিলায়েন্স ডিফেন্সকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রের সুপারিশেই ফরাসি সংস্থা ড্যাসল্টের সাথে চুক্তি হয় অনিল আম্বানীর সংস্থার।
এই বিতর্ক সম্প্রতি আরও বাড়ে ফ্রান্সের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফ্রসোঁয়া ওলাদের এক দাবির পর। তিনি দাবি করেন, ভারতের সাথে রাফাল চুক্তির সময় ‘অফসেট ক্লজ’ এর আওতায় ড্যাসল্টের সাথে রিলায়েন্স ডিফেন্সের যে অংশীদারিত্বের চুক্তি হয়েছিল, তাতে ফরাসি সরকার কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু ভারত সরকারের তরফেই ড্যাসল্ট এর কাছে শুধু মাত্র অনিল আম্বানীর সংস্থার নামই প্রস্তাব করা হয়েছিল। ফলে অন্য বিকল্প না থাকায় রিলায়েন্স ডিফেন্সের সাথেই চুক্তি করে ড্যাসল্ট অ্যাভিয়েশন। যদিও মোদী সরকারের তরফে ওলাদের এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, ওই অফসেট চুক্তিতে কোনও ভূমিকা তাদের ছিল না। কিন্তু প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য সামনে আসার পরই আরও তেড়েফুঁড়ে ময়দানে নেমেছে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা। এই চুক্তিকে বৃহত্তম দুর্নীতির তকমা দেওয়া হয়েছে।
রাহুল গান্ধী বলেছেন, মোদী-আম্বানী মিলে দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ৬০ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছেন। সম্প্রতি এই চুক্তিতে দুর্নীতি ও তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিক্কর জড়িত বলে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ করেছেন বর্ষীয়ান নেতা যশবন্ত সিনহা, অরুণ শৌরি ও আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ।

Comments are closed.