ঝাড়খণ্ডে হেরে গেলেন খোদ বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস, হারলেন ইস্তফা দেওয়া খাদ্যমন্ত্রীর কাছে

নিজের কেন্দ্রেই হেরে গেলেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস। এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে তীব্র আন্দোলনের আবহে বিজেপি যখন অনেকটাই কোণঠাসা, ঠিক তখনই ঝাড়খণ্ড হাতছাড়া হতে চলেছে গেরুয়া শিবিরের। খোদ মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস পূর্ব জামশেদপুর আসনে বিজেপি ছেড়ে আসা খাদ্যমন্ত্রী, নির্দল প্রার্থী সরযূ রাইয়ের কাছে হেরেছেন। সোমবার গণনার শুরু থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলে বিজেপির টিকিট না পাওয়া বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থী সরযূ রাই ও মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের মধ্যে।
১৯৯৫ সাল থেকে টানা বিধানসভা ভোটে জিতে আসছিলেন রঘুবর দাস। কিন্তু ২০১৯ সালে জয়ের রথ থামল তাঁরই সদ্য প্রাক্তন সহকর্মী সরযূ রাইয়ের কাছে।
জয়ের ব্যাপারে শুরু থেকে প্রবল আত্মবিশ্বাসী রঘুবর দাস বেলা শেষে জানান, মানুষের জনাদেশই শিরধার্য। দুপুর পর্যন্ত রঘুবরের দাবি ছিল, তিনিই জিতবেন এবং শেষ অবধি বিজেপিই সরকার গড়বে। কিন্তু যেএমএম, কংগ্রেস, আরজেডি-র জোট তাঁর বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা ও নির্দল প্রার্থী সরযূ রাই বলেন, রঘুবরের দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আর কোনও আশা নেই। দুপুরে তাঁর মন্তব্য ছিল, প্রয়োজনে জেএনএম-কংগ্রেস জোটকে সমর্থন করতে আমি প্রস্তুত। অবশ্য তার আর দরকার হয়নি যেএমএম জোটের।
ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী সরযূ রাইয়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসের দূরত্ব তৈরি হয় এই পূর্ব জামশেদপুর আসনে টিকিট পাওয়া নিয়েই। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব রঘুবর দাসকে বাদ দিয়ে ওই কেন্দ্র থেকে সরযূ রাইকে টিকিট না দেওয়ার পরেই মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর নির্দল হিসেবে লড়ে রঘুবর দাসকে পরাজিত করলেন সরযূ। গত বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকেই ৭০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী।
বিজেপির অন্দরের খবর, রঘুবর দলের অনেককেই চটিয়েছিলেন। সেই কারণে ওই নেতারা তাঁকে পছন্দ করতন না। বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন মুণ্ডার সঙ্গেও ভালো বনিবনা ছিল না রঘুবরের। গত লোকসভা ভোটে খুঁটি কেন্দ্রে অর্জুনকে জেতানোর জন্য রঘুবর তেমন ভূমিকা নেননি বলে অভিযোগ। ফলে অর্জুনের গোষ্ঠী বিধানসভা ভোটে কতটা সক্রিয় ছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে দলের মধ্যে। তা তা ছাড়া ২০১৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জোটসঙ্গী অল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আজসু)-র সঙ্গে আসন সমঝোতা ভেস্তে যাওয়ার পিছনেও রঘুবরের হাত ছিল বলে রাজনৈতিক মহলের মত। প্রসঙ্গত, আজসু-র সঙ্গে জোট প্রক্রিয়া ভেস্তে যাওয়াতে বিজেপির ভোট শতাংশ অনেক কমে গিয়েছে বলে গণনাতেই পরিষ্কার।

Comments are closed.