ফের রঘুরাম রাজনের তোপ কেন্দ্রীয় সরকারকে

ফের আর্থিক নীতির প্রশ্নে মোদী সরকারকে চাঁছাছোলা ভাষায় বিঁধলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। এক পত্রিকায় রাজনের লেখা নিয়ে হই চই পড়ে গিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কিছু আমলা, ব্যক্তি, ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকায় সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের সামান্যতম সমালোচনা হলেও তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দেগে দেওয়ার রেওয়াজকেও দুষেছেন রঘুরাম। সরকার যে মন্দার পরিস্থিতিকে মানতেই চাইছে না, রঘুরাম নিন্দা করলেন তারও। এই অর্থনীতিবিদ হুঁশিয়ারি দিলেন, দেশের অর্থনীতির এই অসুখ আগামী দিনে আরও গভীর হতে পারে।
কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সামনেই এক সভায় শিল্পপতি রাহুল বাজাজ জানতে চেয়েছিলেন, শিল্পপতিরা আপনাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পান কেন, কেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই? তারপরেই বাজাজের বিরুদ্ধে ময়দানে নেমে পড়েছিল বিজেপি। কোথায় কোথায় তাঁর পিছনে ছিদ্র আছে, তা খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন বিজেপি নেতারা। রাহুল যে কংগ্রেস নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, তা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লাগেন কেন্দ্রের শাসক দলের নেতারা। গত ৬ ডিসেম্বর মেয়ো রোডে সংহতি দিবসের সভায় তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিও প্রশ্ন তোলেন, কেন শিল্পপতিরা মুখ খোলার সাহস পান না? কেন শিল্পপতিরা ভয় পেয়ে এই দেশ থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যাচ্ছেন? তাঁর অভিযোগ ছিল, শিল্পপতিরা মুখ খুললেই তাঁদের পিছনে হয় সিবিআই, নয় ইডি, নয় ইনকাম ট্যাক্সকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দেখলেন না, রাহুল বাজাজ যেই মুখ খুলেছেন, তখনই তাঁর পিছনে লেগে পড়েছেন বিজেপি নেতারা? আমি মুখ খুলি বলেই তো ওদের এত রাগ। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, সরকার এর পর রঘুরামের পিছনেও লেগে পড়বে।
কী লিখেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর? ওই লেখায় তিনি বলতে চেয়েছেন, মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেছিল ছোট প্রশাসন, কিন্তু দক্ষ প্রশাসনিক পরিচালনার বার্তা নিয়ে। কিন্তু সেই বার্তা সরকার পক্ষ ভুলতে বসেছে। তিনি মনে করেন, এখন মন্ত্রীদের হাতে কার্যত কোনও ক্ষমতাই নেই। ক্ষমতা মুষ্টিমেয় কয়েকজন নেতা অথবা আমলার হাতে। বিকেন্দ্রীকরণের বদলে এখন ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে। রঘুরামের দাওয়াই, সঙ্কট কতটা গভীর, তা শুরুতেই স্বীকার করুক কেন্দ্র। সরকার অস্বস্তিতে পড়ে, এমন সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশকে চেপে রাখা ঠিক নয়। তাতে জনমানসে ভুল বার্তা যেতে পারে। নতুন ভাবনা চিন্তা কার্যকর করার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের হাতে ছেড়ে না দিয়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হাতে গোনা কয়েকজন আমলার উপর সব ছেড়ে রাখা উচিত নয়। কেন্দ্রীয় করের থেকে রাজ্যগুলির ভাগ কমানো উচিত নয়। প্রসঙ্গত, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রায়ই অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের প্রাপ্য কর কেটে রাখে। রাজনের আরও দাওয়াই, প্রতিযোগিতার বাজার চাঙ্গা রাখার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। জমি অধিগ্রহণ পদ্ধতি আরও সহজ করতে হবে। মনরেগার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষকে আরও বেশি করে আর্থিক সাহায্য করতে হবে।

Comments are closed.