দেশের অর্থনীতি আজ খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে, কেন্দ্রকে বিঁধে বললেন রঘুরাম রাজন

দেশের রাজকোষের ঘাটতিকে অনেকবার ধামা-চাপা দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত এই কারণেই এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি আজ খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে। দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ফের উদ্বেগ প্রকাশ করলেন আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর তথা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রঘুরাম রাজন। ফের কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আমলের অর্থনীতির কড়া সমালোচনা করলেন তিনি।
গত ৯ ই অক্টোবর আমেরিকার ব্রাউন ইউনিভার্সিটিতে এক বক্তব্যে রঘুরাম রাজন বলেন, ভারতীয় অর্থনীতিতে গভীর অস্থিরতার লক্ষণ স্পষ্ট। তাঁর মতে, ভারতের অর্থনীতি বিপর্যয়ের মূল কারণ, নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই এক জায়গায় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রাখা হয়। রঘুরাম রাজনের কথায়, আর্থিক বৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে তলানিতে ঠেকছে। রাজকোষে ঘাটতি পড়ছে বিশাল। এই প্রেক্ষিতে আর্থিক বৃদ্ধির জন্য সামান্য রাস্তাই খোলা আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি নেমে এসেছে ৫ শতাংশে। যা গত ৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গাড়ি শিল্প থেকে সোনা বা বিস্কুট, সব শিল্পই অর্থনৈতিক মন্দার আঁচে বিধ্বস্ত। এই প্রেক্ষিতে ফের সাবধানবাণী শোনালেন রঘুরাম রাজন। জানালেন, রাজকোষে ঘাটতি যতটা দেখানো হচ্ছে তার চেয়ে আরও বেশি হতে পারে। তাঁর কথায়, রাজ্যগুলি ও কেন্দ্র রাজকোষের ঘাটতি যে ৭ শতাংশ বলে জানাচ্ছে, তার চেয়েও বেশি হতে পারে এই ঘাটতি। আরবিআই-র প্রাক্তন গভর্নর বলেন, সাম্প্রতিক মন্দার কয়েক বছর আগে থেকেই শ্লথ হচ্ছিল ভারতের অর্থনীতি। ২০১৬ সালে যখন ৯ শতাংশ বৃদ্ধি ছিল তখনও এই সঙ্কটের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কয়েকদিন আগেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ২০২০ আর্থিক বছরে বৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.১ শতাংশ হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।  আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর বলেন, আর্থিক বৃদ্ধির নতুন উৎস খোঁজা দরকার। ভারত এই নতুন আর্থিক বৃদ্ধির জায়গার খোঁজ নেয় না বলে মন্তব্য করেন রঘুরাম রাজন। তাঁর কথায়, ভারতের অর্থনৈতিক চাপকে কারণ হিসাবে না দেখে উপসর্গ হিসাবে দেখতে হবে। তাহলেই সমস্যার নিরসন হতে পারে। বিনিয়োগ, রফতানি, এনবিএফসি সমস্যা ইত্যাদির জন্য ফের মোদী সরকারের নোটবন্দি ও জিএসটি লাগুর সমালোচনা করেন রঘুরাম রাজন। বলেন, ওপর মহলের নোটবন্দি বা জিএসটির মতো সাহসী পদক্ষেপ ছিল আকস্মিক। যখন উপযুক্ত পরীক্ষা ছাড়াই আচমকা এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তার ফল সমস্যাবহুলই হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, জিএসটি ও নোটবন্দি এমন সময় হয়েছিল যখন ভারতীয় অর্থনীতি ইতিমধ্যেই দুর্বল। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করে রাজন বলেন, আর্থিক বৃদ্ধির জায়গায়, মোদী সরকার জনমুখী প্রকল্পে নজর দিয়েছিল। তাঁর মতে, এমন এক সময়ে বিভিন্ন প্রকল্পে খরচ করা হচ্ছিল যখন কেন্দ্রের রাজস্ব ইতিমধ্যেই আহত হয়েছে।

Comments are closed.