রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীদের মুক্তি চায় তামিলনাড়ুর সরকার, প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে রাজ্যপালের কাছে

দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত জেলবন্দি সাতজনকেই মুক্তি দিতে চায় তামিলনাড়ু সরকার। রবিবার রাজ্যের মন্ত্রী ডি জয়াকুমার জানিয়েছেন, এই মর্মে সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাশ হয়েছে, যা রাজ্যপালের কাছে খুব শীঘ্রই পাঠানো হবে। রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্তদের মধ্যে অন্যতম এ জি পেরারিভালন সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে ক্ষমা ভিক্ষা করে, তাঁকে কারাবাস থেকে মুক্তি দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল বনওয়ারিলাল পুরোহিতকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন গত মাসে। এরপরই রাজ্যপাল এবিষয়ে রাজ্য সরকারের মতামত জানতে চান।
তামিলনাড়ু সরকার জানিয়েছে, শুধু পেরারিভালন নয়, তারা চায় ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত সাতজনকেই জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হোক। এই সিদ্ধান্তই রাজ্যপালকে জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে দোষীদের মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে শেষ সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রই। এর আগে ২০১৪ সালে এরকমই এক ক্ষমা ভিক্ষার আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা দোষীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্ত কেন্দ্রীয় সরকার এবিষয়ে সম্মতি দেয়নি তখন। সেই সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে রাজীব গান্ধী খুনের ঘটনাকে জঘন্য ও বর্বরোচিত আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছিল, এই ঘটনায় দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এমন অপরাধ করার সাহস না পায়। সুপ্রিম কোর্টও ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, এই বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার। তাই এবারও তামিলনাড়ু সরকার সিদ্ধান্ত নিলেও, দোষীদের ছাড়ার ব্যাপারে কেন্দ্রকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
রাজ্যের তরফে অবশ্য এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনে রাজ্যের মানুষের ভাবাবেগকেই কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে। রাজীব গান্ধী হত্যা মামলায় দোষীরা প্রায় ২৭ বছর জেলে রয়েছেন। রাজ্যের অধিকাংশ মানুষই নাকি মনে করেন দোষীরা ঘটনায় সেভাবে জড়িত ছিলেন না। তাঁরা এবিষয়ে খুব সামান্যই জানতেন, তাই এত বছর সাজা পাওয়ার পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া উচিত। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও কেন্দ্রীয় সরকারই দোষীদের মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাবকে সমর্থন করেনি। বরং সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে খুনের ঘটনায় দোষীদের ছাড়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
১৯৯১ সালের ২১ শে মে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরামপুদূরে এক জনসভায় অংশ নেওয়ার পর এলটিটিইর মহিলা জঙ্গি ধনুর আত্মঘাতী হামলায় প্রাণ হারান দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হয়ে মোট সাতজন পেরারিভালন, মুরুগান, সান্থন, নলিনী শিহরণ, রবার্ট পায়াস, জয়া কুমার, রবিচন্দ্রণ আজ দীর্ঘ ২৭ বছরের উপর তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জেলে বন্দি রয়েছেন। এর আগে কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় সোনিয়া গান্ধীর আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট নলিনী শ্রীহরণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে আজীবন কারাবাস করা হয়। ২০০৮ সালে জেলে গিয়ে নলিনীর সঙ্গে দেখাও করেন রাজীব কন্যা প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। চলতি বছর জুন মাসে রাহুল গান্ধীও জানিয়েছেন, তিনি এবং তাঁর দিদি প্রিয়াঙ্কা বাবার খুনিদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। ২০১৪ সালে আবেদনের প্রেক্ষিতে ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত আরও তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই দিয়ে আজীবন কারাবাস দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এখন দেখার রাজ্যের এই আবেদনের প্রেক্ষিতে কেন্দ্র কী সিদ্ধান্ত নেয়।

Comments are closed.